পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
চেকোশ্লোভাকিয়ার প্রাগ শহরের এক অত্যন্ত গরিব পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯০৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। বাবা ছিলেন একটি ইস্পাত কারখানার শ্রমিক, নাম কারেল ফুচিক। ছোট্ট ছেলেটির ছাত্রজীবনেই পড়াশোনার পাশাপাশি সংগীত, সাহিত্য, নাটক এবং রাজনীতি করা ছিল স্বাভাবিক অভ্যাস। সেই ছেলে ১২ বছর বয়সে প্রকাশ করল একটি পত্রিকা, নাম ‘শ্লোভান’।
ইস্পাত কারখানার শ্রমিকের দারিদ্র্যলালিত কিশোরটির মন, সংকল্প এবং সাহস ছিল ইস্পাতের মতো কঠোর। কেউ কিন্তু সে দিন তা বুঝতেই পারেনি। সেই তখনই দেশের এবং সারা বিশ্বের অবহেলিত অবমানিত শোষিত মানুষের মুক্তির ব্রত নিয়ে সাম্যবাদ মানে কমিউনিজমের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছিল ছেলেটি। পাশাপাশি হৃদয় দিয়ে চালিয়ে গিয়েছে সাহিত্য, সংগীত ও নাট্যচর্চা।
১৯২১ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে মহামতি ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ তথা লেনিনের অনুপ্রেরণায় চেকোশ্লোভাকিয়াতে কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম হয়। সেই ছেলে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই যুক্ত হলেন সেই পার্টিতে, হলেন পার্টির অন্যতম সংগঠক। এর পাশাপাশি প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহিত্য-সংগীত-নাটক এবং নন্দনতত্ত্ব নিয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘রুদ্য প্রাভো’-তে (লাল আইন) নিয়মিত লিখতে শুরু করলেন। ‘রুদে প্রাভো’র পাতায় মানুষের মুক্তির উপাখ্যান লিখে গিয়েছেন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। পাশাপাশি নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে সারা বিশ্বের প্রগতিশীল সাহিত্য, সংগীত, নাটক নিয়ে পড়াশোনা চালাতে লাগলেন।
সেই সময়ে এই মানুষটির লেখালিখি অবিরাম প্রকাশ হতে থাকে, যা ছিল প্রগতির পক্ষে, শক্তিশালী এবং প্রতিবাদী লেখা। সে সব লেখা শুধু তো আর লেখা ছিল না, তা ছিল যেন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের লাভাস্রোত। দেশের মানুষকে তিনি শোনালেন সাবধানতার সতর্কবাণী। সারা বিশ্ব জুড়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আর ফ্যাসিস্টরা নৃশংস হাঙর, কুমিরের মতো সর্বগ্রাসী হাঁ করে তেড়ে আসছে। মানবিকতার সেই নৃশংস শত্রু, ভয়ংকর দানবদের করালগ্রাস থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য রক্ত ঝরানোর ডাক দিলেন তিনি। তিনি ঘোষণা করলেন, আত্মবলিদান দিতে প্রস্তুত থাকুন — আপনাদের পাশে আছে কমিউনিস্ট পার্টি। এই সব লেখা প্রকাশিত হত ‘রুদে প্রাভো’ পত্রিকায় এবং তিনি ১৯২৯ সালে ‘ভোরবা’ (সৃষ্টি) নামক যে পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হয়েছিলেন, সেই পত্রিকাতেও।
এই সব আহ্বানের কথায় তদানীন্তন চেক সরকার আতংকিত হয়ে উঠল। একজন মানুষ যিনি টানটান শিরদাঁড়ায়, বুকের পাটায় সাহস করে বলতে পারেন মানুষের কথা, মানুষকে তার প্রতিবাদে সরব হতে ডাক দেন, তিনি কলমকে ধারালো তরবারি করে লিখে চলেন মানুষের কথা, প্রতিবাদের কথা। পাশাপাশি, অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কী ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে, তার ভাষার জোগান দেন তাঁর বক্তৃতায় গোপন সভার পর সভায়। বেশ কয়েকজন তো বলেই ফেললেন, এই মানুষটির লেখাগুলো যেন জ্বলন্ত আগুনের মশাল, যার দীপ্ত-দৃপ্ত আলোয় নগ্ন অন্ধকারের দিন আর সময়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পরিণামে ১৯৩৪ সালে সন্ত্রস্ত, তটস্থ, ভীতু চেক সরকার গ্রেফতার করল সেই মানুষটিকে। জেল হল আট মাসের।
আট মাস পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ১৯৩৬ সাল নাগাদ তিনি চেক কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি হয়ে চলে গেলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে। সে দিন থেকেই প্রাগের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তিনি লিখতেন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ আগুনের অক্ষরে আর প্রতিবাদের শব্দ-বাক্য বিন্যাসে। একজন সাংবাদিকের চোখ দিয়ে, একজন শিক্ষাবিদ-সাংস্কৃতিক-সাহিত্যিকের জিজ্ঞাসা দিয়ে এবং একজন রাজনৈতিক পত্রিকা সম্পাদকের আদর্শ দিয়ে তিনি জানতে-বুঝতে চেয়েছিলেন সদ্যগঠিত বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী সোভিয়েত ইউনিয়নকে। একটি ভাঙাচোরা অত্যাচারিত নিপীড়িত দেশকে গড়ে তোলার অপূর্ব বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার বৃত্তান্ত তিনি জানিয়েছিলেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে চেকোশ্লোভাকিয়ার জনগণকে।
প্রাগ থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে পিলসেনের এই বাড়িতেই ফুচিক থাকতেন ১৯১৩ থেকে ১৯১৭ পর্যন্ত।
সেই সব কথা পড়ে চেকের মানুষ উদ্দীপিত, উজ্জীবিত হয়ে উঠতে লাগল। ১৯৩৮ সালে চেক সরকার সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করেছিল। এর ফলে সেই মানুষটি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেলেন এবং সেই গোপন আস্তানা থেকে তিনি নিষিদ্ধ পার্টির কাজ করে যেতে লাগলেন। ওদিকে কিন্তু চেক সরকারের শ্যেনদৃষ্টি তাঁকে খুঁজছে। কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না। আর সেই মানুষটি এতই রোমান্টিক ছিলেন যে, সেই কঠিন কঠোর সময়েই, সেই অবস্থাতেই তিনি বিয়ে করলেন আর-এক সহোযোদ্ধা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীকে, যাঁর নাম ছিল আগুস্তা কোদেনকোভা (পরে পরিচিত হন গুস্তা ফুচিকোভা নামে)।
ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। ১৯৩৯ সালে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো চেকোশ্লোভাকিয়া চলে গিয়েছে হিটলার-গোয়েবেলসদের নাৎসি জার্মানির দখলে। তত দিনে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, পোস্টার, লিফলেট ইত্যাদিতে সেই অসমসাহসী আপাদমস্তক রোমান্টিক বিপ্লবী মানুষটির নাম ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে – একটাই নাম ‘জুলিয়াস ফুচিক’…‘জুলিয়াস ফুচিক’।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিজের দেশ চেকোশ্লোভাকিয়া আক্রান্ত। গোপন ডেরা থেকে জুলিয়াস ফুচিক দেশের সাধারণ মানুষ আর দেশের সেনাদের, সৈন্যবাহিনীকে জল্লাদ হিংস্র নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াইতে অনুপ্রাণিত করতে লিখে চলেছেন একের পর এক ঐতিহাসিক লেখা অক্লান্ত অবিরামে। এ ভাবেই জুলিয়াস ফুচিক হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন। ও দিকে হিটলারের নির্দেশে গেস্টাপো বাহিনী তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগল জুলিয়াস ফুচিককে। ১৯৩৯-৪০ সাল থেকেই নাৎসিবাহিনী জুলিয়াসকে ধরার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছিল। অবশেষে ১৯৪২ সালের ২৪ এপ্রিল এক অতি দুর্গম গোপন আস্তানা থেকে ৬ জন কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সঙ্গে জুলিয়াস ফুচিককে গ্রেফতার করেছিল নাৎসি গেস্টাপো বাহিনী। জানা যায়, ধরা পড়ে যাওয়ার ঠিক আগেই জুলিয়াস ফুচিক তাঁর কমরেডদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তাঁরা যেন তাঁকে গুলি করে। কিন্তু তাঁর সেই আদেশ তাঁর সাথিরা সে দিন কোনো ভাবেই মানতে পারেননি। যাই হোক, গ্রেফতারের পর শুরু হয়েছিল জুলিয়াস ফুচিকের ওপরে অকথ্য হিংস্র অত্যাচার,যা কল্পনার অতীত। এমনকি তাঁকে জার্মানির বার্লিন-সহ বিভিন্ন জেলেও ঘোরানো হয়। আর সেই সব জেলে ধারাবাহিক ভাবে চলেছিল জুলিয়াসের ওপরে নির্মম নির্যাতন, অত্যাচার।
একটি অবরুদ্ধ নিকষ কালো অন্ধকার জেলখানার কুটুরিতে নাৎসি হিংস্র নেকড়েবাহিনী তাঁকে আটকে রেখে চালাত অভাবনীয় নির্যাতন আর অত্যাচার। তখন জুলিয়াসের বয়স ৪০ বছর। ১৯৪৩ সালের ২৫ আগস্ট বিচারের নামে এক প্রহসনের শেষে তাঁকে প্রাণদণ্ডের আদেশ শুনিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর অপরাধ ছিল, কেন তিনি হিংস্র সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কেন তিনি তাঁর দেশের মানুষকে সাম্রাজ্যবাদী নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়ে বলেছিলেন, “স্বদেশের অপমান, অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনে শত্রুর প্রাণ কেড়ে নাও, আর প্রাণ বিসর্জন দাও দরকারে।”
অবশেষে ১৫ দিন পরে ১৯৪৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জুলিয়াস ফুচিকের প্রাণদণ্ডের দিন ধার্য করা হয়।
মৃত্যুর আদেশ শোনার পরে কিন্তু তাঁর মনে, চোখে মুখে কোনো হতাশা, আতংকের চিহ্ন ছিল না। ফাঁসির আদেশ শোনার পরেও তিনি ছিলেন তেমনই সুদৃঢ়, তেমনই ঋজু, অনুতাপহীন, এ যেন ‘বল বীর-/ বল উন্নত মম শির!/ শির নেহারি আমারি,/ নত শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!’ কবিতার এক বাস্তব রূপ। জুলিয়াস ফুচিক যেন অবধারিত হত্যা-পরোয়ানাকে উপেক্ষা করে মরণের আসনে বসে লিখে চলেছেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা, অভিব্যক্তির কথা। ১৯৪৩-এর ৮ সেপ্টেম্বর সকালে তাঁর পরমপ্রিয় প্রিয়তমাকে লিখেছিলেন তাঁর শেষ চিঠিখানি…
“প্রিয় গাস্তিনা আমার,
এইমাত্র তোমাকে চিঠি লেখার অনুমতি পেয়েই লিখতে বসেছি। লিবা লিখেছে তুমি ডেরা বদলেছ। এ কথা কি তুমি ভেবে দেখেছ, প্রিয়তমা আমার, আমরা পরস্পর থেকে দূরে নই। ভোরবেলায় যদি তুমি টেরিজিন থেকে পায়ে হেঁটে উত্তর দিকে রওনা হও, আর বাউৎসেন থেকে আমি যদি রওনা হই দক্ষিণে, তা হলে সন্ধে নাগাদ আমাদের দেখা হবে। কাছাকাছি এসে আমরা দু’জনে কি ছোটাই না ছুটব।…জানো আমার সেলের নীচের দিকে এককোণে একটা ছোট্ট মাকড়সা আছে, আর বাইরে আমার জানালার ওপর একজোড়া রবিন পাখি বেশ আরামে নীড় বেঁধেছে। কাছে, কত কাছে আমি তাদের শিশুর মতো মিষ্টি কাকলি শুনি। তারা তাদের ডিম ফুটিয়ে বাচ্চার জন্ম দিয়েছে, দাম্পত্যজীবনের কতই না তাদের দুর্ভাবনা ছিল। ওদের দেখি আর তোমার কথা মনে পড়ে যায়। সেই যে তুমি মানুষের মুখের কথায় আমাকে পাখির ভাষা বুঝিয়ে দিতে। সেই দিনের জন্য আমি অকাতরে প্রতীক্ষা করে আছি, যে দিন মুখোমুখি বসে তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারব। তখন কত কথা জমে থাকবে, দু’জনে দু’জনকে বলার। প্রিয়তমা আমার, সাহসে বুক বাঁধো, শক্ত হও।
তোমাদের সবাইকে আমার চুম্বন আর আলিঙ্গন। যতদিন না দেখা হয়।
ইতি তোমাদের জুলা। (বাউৎসেন, ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩)।”
বার্লিন শহরে ফুচিক-স্মারক।
কারাগারের ঘন কঠিন অন্ধকার চিরে বিশ্বব্যাপী এক নবোদিত সূর্যআলোর উৎসধারার সন্ধান দিয়ে গেলেন জুলিয়াস ফুচিক। কারান্তরালের বাসিন্দা হয়ে তিনি লিখেছিলেন। সৃষ্টি হয়েছিল এক মহান ঐতিহাসিক প্রতিবাদের সাহিত্যকীর্তি, যার নাম ‘নোটস ফ্রম দ্য গ্যালোস’ ( ফাঁসির মঞ্চ থেকে)। এই লেখা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বে এক অভাবনীয় আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। ৯০টি ভাষায় অনূদিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল দিকে দিকে। জুলিয়াসের বন্দিজীবনের দিনলিপি, নির্যাতনের কাহিনি এবং সেই নির্যাতনকে হাসিমুখে জয় করে জাগরণের কাহিনি। অতি গোপনে সিগারেটের কাগজে লিখে, কোলনস্কি নামে একজন বিশ্বস্ত সহানুভূতিশীল কারারক্ষীকে দিয়ে জুলিয়াস সেগুলিকে জেলের বাইরে পাঠিয়ে দিতেন।
জুলিয়াসের স্ত্রী গুস্তা ফুচিকোভাও তখন কারাবন্দি। তিনিও হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর অনেক অত্যাচার সহ্য করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে কারামুক্তির পরে তিনি তাঁর প্রিয়তম জীবনসঙ্গী জুলিয়াস ফুচিকের লেখাগুলি একত্রিত করে, সম্পাদনা ও সংকলনের পরে বই আকারে প্রকাশ করেন। জুলিয়াসের সেই সব লেখায় যেমন আছে কারাজীবনের ভয়ংকর দানবদের অত্যাচারের কথা, তেমনই প্রতিধ্বনিত হয়েছে এক ইতিবাচক বলিষ্ঠ আশাবাদ এবং সফল সাম্যবাদ ও সমাজতান্ত্রিক সূর্যোদয়ের অঙ্গীকারও। বইটির শেষ পঙ্ক্তিতে লেখা – “Be on guard”। এই বই আজ বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
জুলিয়াস ফুচিকের বিপ্লবী জীবন এবং তাঁর আত্মবলিদানের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে সারা বিশ্ব। এমনকি আমাদের এই উপমহাদেশের ভূখণ্ডগুলিও। বাংলাদেশের কবি রুদ্র মহম্মদ লিখেছেন, “এইসব মৃত্যু থেকে শুরু হয় আমাদের সূর্যময় পথ, এই ফাঁসির মঞ্চ থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু।” এই রুদ্র মহম্মদেরই লেখা ‘আমার ভিতর বাহিরে, অন্তরে অন্তরে আছ তুমি হৃদয় জুড়ে’।
জোসেফ স্তালিনের প্রিয় মানুষ জুলিয়াস ফুচিকের স্পন্দিত উচ্চারণ.. “And I repeat we live for happiness, for that we want to battle, for that we die, Let grief never be connected with our name.”
‘ফাঁসির মঞ্চ থেকে’ দুনিয়ার দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল ‘জেগে ওঠার গান’ আর ‘বিপ্লবের গান’, এর আহ্বান ও ইস্তাহার। জুলিয়াস ফুচিককে খুন করে, ঘুম পাড়িয়ে দিয়েও সেই ‘জাগরণের গান’ থামানো যায়নি, আটকানো যায়নি, আর কোনো দিন যাবেও না। জুলিয়াস ফুচিক যেন তাঁর লেখায় অবিরাম গেয়ে চলেছেন সেই চিরন্তন আহ্বান, যা রবীন্দ্রনাথের গানে প্রতিভাত – ‘তোমায় গান শোনাব, তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখো, ওগো ঘুম ভাঙানিয়া, তোমায় গান শোনাব…’। এ গান সেই গান, যা জাগরণের গান, যা মানুষের মুক্তির উপাখ্যান, যা বিপ্লবের গান।