অনিল অম্বানি ও তাঁর গোষ্ঠীভুক্ত সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে বড়সড় আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে নড়েচড়ে বসেছে একাধিক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইতিমধ্যেই শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED), ও সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (CBI) একযোগে তদন্ত শুরু করেছে।
মূল অভিযোগ রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সংস্থাটি ‘CLE প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের একটি লো-প্রোফাইল সংস্থায় ₹১০,০০০ থেকে ₹১৭,০০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করে, যা ইন্টার কর্পোরেট ডিপোজিট (ICD)-এর নামে দেখানো হয়।
তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য
- CLE ঋণ ফেরত না দিলেও, রিলায়েন্স ইনফ্রা সেই অর্থকে কু-ঋণ হিসেবে লিখে দেয়।
- CLE যে একটি ‘রিলেটেড পার্টি’ অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সংস্থা, তা জানানো হয়নি শেয়ারহোল্ডারদের।
- এতে করে এক সময় রিলায়েন্স ইনফ্রার মোট সম্পদের ৯০ শতাংশই CLE-তে চলে যায় বলে অনুমান তদন্তকারীদের।
রিলায়েন্স ইনফ্রার দাবি, তাদের প্রকৃত এক্সপোজার ₹৬,৫০০ কোটির বেশি নয়, তবে SEBI ও ইডির মতে ₹১০,০০০ থেকে ₹১৭,০০০ কোটি টাকা CLE-এর মাধ্যমে গোপনে সরানো হয়েছে।
তদন্তকারীদের মতে
এই ঘটনা গোপন সম্পর্কিত পক্ষের সঙ্গে লেনদেনের উদাহরণ, যা শেয়ারহোল্ডার ও বাজারকে বিভ্রান্ত করেছে।
এই অভিযোগে নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ
- SEBI ইতিমধ্যেই অনিল অম্বানি সহ ২৪ জনকে পাঁচ বছরের জন্য শেয়ার বাজার থেকে নিষিদ্ধ করেছে।
- ED ৫০টিরও বেশি সংস্থা ও ২৫ জন ব্যক্তির বাড়িতে হানা দিয়েছে।
- ৫ আগস্ট ED সরাসরি অনিল আম্বানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
আরও একটি জালিয়াতির তদন্ত চলছে
SECI-র একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে দরপত্র জেতার জন্য Reliance NU BESS ও Maharashtra Energy Generation Ltd নামে দুটি সংস্থা ₹৬৮.২ কোটি টাকার ভুয়ো ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দিয়েছিল বলে অভিযোগ।
গ্যারান্টিটি দেওয়া হয়েছিল ওডিশার একটি শেল কোম্পানি Biswal Tradelink-এর মাধ্যমে, যেখানে SBI-র ভুয়ো ওয়েব ডোমেইন ব্যবহার করা হয়েছিল।
ফলস্বরূপ
SECI ইতিমধ্যেই Reliance Power ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে আগামী তিন বছরের জন্য তাদের প্রকল্পে দরপত্র দেওয়া থেকে নিষিদ্ধ করেছে (নভেম্বর ২০২৪ থেকে)।
ইতিহাসে আরও রয়েছে অস্বচ্ছ লেনদেনের অভিযোগ
- ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে Yes Bank থেকে নেওয়া ₹৩,০০০ কোটির ঋণ বিভিন্ন শেল কোম্পানিতে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
- Reliance Communications ও Reliance Home Finance-এর বিরুদ্ধেও রয়েছে আর্থিক গড়মিলের অভিযোগ।
- চলতি বছর জুনে, SBI Reliance Communications এবং অনিল আম্বানিকে “ফ্রড অ্যাকাউন্ট” হিসেবে ঘোষণা করে।
ADAG-র দাবি
গোষ্ঠীর দাবি, অনিল আম্বানি ২০২২ সাল থেকে আর কোনও সংস্থার পরিচালনায় নেই। বেশ কিছু অভিযোগ পুরনো সংস্থা ও তৃতীয় পক্ষের জালিয়াতি সংক্রান্ত, যেগুলি ইতিমধ্যেই দেউলিয়া। বর্তমান সংস্থাগুলি আইন মেনে চলছে বলেই দাবি ADAG-র।
শেয়ার বাজারে প্রভাব
খবর প্রকাশ্যে আসার পরই রিলায়েন্স পাওয়ার শেয়ারের দাম ৪.৮২% কমে দাঁড়ায় ₹৫০.৩০-এ। রিলায়েন্স ইনফ্রার শেয়ার পড়ে যায় ৫%, দাম দাঁড়ায় ₹৩১১.৬০।
সূত্র: বিজনেস টু ডে