পুনরায় জ্বলছে পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি। ইরান এবং ইজরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় উদ্বেগ বাড়ছে গোটা বিশ্বে। এই সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হরমুজ প্রণালী—একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ, যা দিয়ে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপথে সরবরাহ হওয়া তেলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিবাহিত হয়। প্রণালীটি পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরের মধ্যে অবস্থিত এবং বিশ্বের শক্তি সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হরমুজ প্রণালীতে কোনও ধরনের অচলাবস্থা বা সঙ্কট তৈরি হলে আন্তর্জাতিক তেলের দাম চড়চড় করে বেড়ে যেতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে তেলনির্ভর দেশগুলিতে, যার মধ্যে অন্যতম ভারত।
ভারতের ঝুঁকি কতটা?
ভারত তার তেলের দুই-তৃতীয়াংশ ও প্রায় অর্ধেক তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) আমদানি করে এই হরমুজ প্রণালী হয়ে। ফলে এই পথে কোনও ধরনের বিঘ্ন ঘটলে ভারতকে বিকল্প রুট ও উৎস খুঁজতে হবে, যা হবে ব্যয়বহুল ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জে ভরা।
জুলিয়াস বেয়ার-এর হেড অফ ইকনমিক্স, নরবার্ট রুকার বলেন, “ভূরাজনীতি আবারও সামনে এসেছে। ইজরায়েলের সামরিক হামলায় অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা বাড়ছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে তেলের দামে, যা আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে।”
মূল্যবৃদ্ধি ও আমদানি ঘাটতির আশঙ্কা
জেপি মরগান সতর্ক করে জানিয়েছে, সংঘাত তীব্র হলে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১২০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এর ফলে ভারতের মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে, বাড়তে পারে বর্তমান অ্যাকাউন্ট ঘাটতি। জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে শিল্প এবং পরিবহণ খাতে খরচও বেড়ে যাবে। এ ছাড়াও, হরমুজ প্রণালী এড়িয়ে দীর্ঘ রুটে জাহাজ চলাচল করতে হলে লজিস্টিক খরচ ও ডেলিভারি টাইম অনেকটা বাড়বে।
সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব
তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ ভারতীয় পরিবারের উপর। রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে পরিবহণ, সব ক্ষেত্রেই খরচ বাড়বে। ফলত ভোক্তাদের ব্যয়ক্ষমতা কমবে এবং জীবনযাত্রার মান পড়ে যেতে পারে। শিল্পক্ষেত্রেও উৎপাদন খরচ বেড়ে প্রতিযোগিতা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হবে।
বিমা খরচ ও বাণিজ্য ব্যয় বৃদ্ধি
বিপদজনক অঞ্চলের জলপথে চলাচলের জন্য বাণিজ্যিক জাহাজগুলির বিমা খরচ বাড়বে। এতে বিশ্ব বাণিজ্যের উপর আরও চাপ পড়বে।
পশ্চিম এশিয়ায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখা শুধু তেল সরবরাহ নয়, বরং বৈশ্বিক আর্থিক নিরাপত্তার পক্ষেও অপরিহার্য। ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলির জন্য এই সংকট সময়মতো মোকাবিলা করা প্রয়োজন, যাতে বিকল্প শক্তির উৎস, স্ট্র্যাটেজিক রিজার্ভ এবং বহুমুখী আমদানি পরিকল্পনার মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো যায়।