কলকাতা: প্রয়াত হলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার রিজেন্ট পার্কের বাড়িতে তাঁর জীবনাবসান হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন উৎপলেন্দু। এপ্রিল মাসে বাড়িতে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভেঙে যায়। সেই সময় বর্ষীয়ান পরিচালকের কোমরের অস্থিসন্ধি প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রস্টেট এবং সিওপিডি-র সমস্যাও ছিল। এর ওপর মাঝেমাঝেই স্মৃতিবিভ্রম ঘটত। মে মাসেও আর-এক দফা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় পরিচালককে। তার পর বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু ইহলোকে আর থাকলেন না। বিদায় নিলেন উৎপলেন্দু চক্রবর্তী।
মুখ্যমন্ত্রীর শোক
পরিচালকের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর মৃত্যুতে শোকাহত। তাঁর প্রতিটি চলচ্চিত্র সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে এবং নামকরা পুরস্কার পেয়েছে। তাঁর মৃত্যু চলচ্চিত্রজগতে শূন্যতা সৃষ্টি করবে। ওঁর পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি রইল আমার সমবেদনা।”
উৎপলেন্দুর স্ত্রী চলচ্চিত্র পরিচালক শতরূপা সান্যাল। তাঁদের দুই মেয়ে চিত্রাঙ্গদা ও ঋতাভরী টলিউডের প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী। দীর্ঘদিন আগে স্বামীর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ এনে আলাদা থাকতে শুরু করেন শতরূপা। উৎপলেন্দুর সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যদের কোনো যোগাযোগ ছিল না।
উৎপলেন্দুর মৃত্যুর খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শতরূপা। বলেছেন, সংসার, সন্তান, সম্মান — সব ‘ভালো’কেই যত্নে রাখতে হয়, উৎপলেন্দু সেটা পারেননি। পারেননি বলেই কোনো কিছুই ওঁর জীবনে স্থায়ী হল না। নিঃসন্দেহে অনেক গুণ ছিল ওঁর। কিন্তু ঠিকমতো কাজে লাগাননি।
মঙ্গলবার উৎপলেন্দুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে পরিচালকের পরিবারের কোনো সদস্য উপস্থিত থাকবেন কি না, তা জানা যায়নি।
‘চোখ’-এর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
উৎপলেন্দু চক্রবর্তী ১৯৪৮ সালে অধুনা বাংলাদেশের পাবনা জেলার শঙ্খবুনু গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে এমএ পাশ করেন তিনি। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি ও পরে নকশালপন্থী রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন উৎপলেন্দু। আদিবাসীদের সঙ্গে মিশে সময় কাটাতেন তিনি।
যদিও শিক্ষক হিসাবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন উৎপলেন্দু, তবে তাঁর প্রধান আবেগ ছিল চলচ্চিত্র। উৎপলেন্দু বেশ কয়েকটি ভালো মানের অন্য ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। সেগুলোর মধ্যে ‘ময়না তদন্ত’, ‘চোখ’ এবং ‘দেবশিশু’ উল্লেখযোগ্য। ১৯৮২ সালে নির্মিত ‘চোখ’ ছবিটি ৩০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার উৎসবে সেরা ফিচার ফিল্মের পুরস্কার পায়। এবং উৎপলেন্দু পান শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের পুরস্কার। এ ছাড়াও উৎপলেন্দুর ঝুলিতে রয়েছে অন্যান্য আরও পুরস্কার, স্বর্ণপদক।
