Home বিনোদন প্রয়াত কিংবদন্তি পরিচালক শ্যাম বেনেগাল

প্রয়াত কিংবদন্তি পরিচালক শ্যাম বেনেগাল

কিংবদন্তি পরিচালক শ্যাম বেনেগাল আর নেই। সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর সন্ধে ৬টা ৩০ মিনিটে মুম্বইয়ের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা এবং কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন পরিচালক। তাঁর মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছেন তাঁর মেয়ে পিয়া বেনেগাল। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে।

শ্যাম বেনেগাল, এক নাম, যার উচ্চারণেই ভেসে ওঠে ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক সৃষ্টিশীল অধ্যায়। তাঁর মৃত্যুর খবর শোকের ছায়া ফেলেছে কেবল চলচ্চিত্র জগতেই নয়, শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিটি কোণায়। শ্যাম বেনেগাল ছিলেন এমন এক নির্মাতা, যিনি বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে সৃষ্টিশীলতার শিখরে পৌঁছেছিলেন। তাঁর প্রতিটি কাজ যেন শিল্পের এক নতুন সংজ্ঞা নিয়ে এসেছে।

১৯৩৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর হায়দরাবাদে কোঙ্কনি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শ্যাম বেনেগাল। শৈশব থেকেই তিনি ছবি তোলায় আগ্রহী ছিলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার দেওয়া ক্যামেরা হাতে নিয়ে প্রথম ছবি তৈরি করেন তিনি। সেই ছোট্ট বয়সেই তাঁর মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা সৃষ্টিশীলতার ঝলক দেখা গিয়েছিল।

চলচ্চিত্রে তাঁর যাত্রা

হায়দরাবাদ ফিল্ম সোসাইটি ছিল তাঁর সৃষ্টির আঁতুড়ঘর। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পরেও তাঁর মন পড়ে ছিল সেলুলয়েডের রঙিন জগতে। পরবর্তীতে ‘মন্থন’, ‘জুনুন’, ‘আরোহন’, ‘মাম্মো’ এবং ‘নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু: দ্য ফরগটেন হিরো’-র মতো কালজয়ী চলচ্চিত্র উপহার দেন তিনি।

‘মন্থন’ ছিল তাঁর অন্যতম একটি যুগান্তকারী কাজ। এই ছবিটি শুধুমাত্র ভারতীয় গ্রামীণ জীবনকে সেলুলয়েডে তুলে আনার জন্যই নয়, বরং দর্শকদের মধ্যে গভীর সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্যও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর সিনেমাগুলোতে যেমন ছিল জীবনযাপনের অন্তর্নিহিত গল্প, তেমনই ছিল চরিত্রগুলোর প্রতি এক গভীর মমত্ববোধ।

ব্যক্তি শ্যাম বেনেগাল

শ্যাম বেনেগালকে চেনা যায় তাঁর কাজের মধ্য দিয়েই, কিন্তু ব্যক্তি মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন আরও অনন্য। তাঁর সহকর্মীদের জন্য তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল প্রেরণা। কাজের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং নিষ্ঠা তাঁকে আলাদা করে তুলেছিল। তাঁর শেষ চলচ্চিত্র ‘মুজিব: দ্য মেকিং অফ এ নেশন’ এই নিষ্ঠারই এক উজ্জ্বল উদাহরণ। শারীরিক অসুস্থতা তাঁকে কখনও থামাতে পারেনি।

সম্মান ও স্বীকৃতি

১৯৭৬ সালে পদ্মশ্রী এবং ১৯৯১ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন শ্যাম বেনেগাল। ভারতীয় চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি পান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। শ্যাম বেনেগাল ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যাঁর কাজগুলো সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে চিরকাল প্রাসঙ্গিক থাকবে। তিনি আমাদের দেখিয়ে গিয়েছেন, কিভাবে সিনেমা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং তা হয়ে উঠতে পারে সমাজের দর্পণ।

তাঁর চলে যাওয়া ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের এক বিশাল ক্ষতি। কিন্তু তাঁর সৃষ্টি, তাঁর ভাবনা এবং সিনেমায় তাঁর অবদান চিরকাল এক অনন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version