রন্ধনপ্রিয় ও খাদ্যরসিক বাঙালির রান্না বললেই আলুপোস্ত, ঝিঙেপোস্ত, চিচিঙ্গেপোস্ত, পোস্তবাটা, পোস্তরবড়ার কথা আসবে। এককথায় বলতে গেলে পোস্ত বিনা বাঙালি অচল। পোস্ত রান্নায় প্রাধান্য বেশি এপার বাংলা বা পশ্চিমবঙ্গীয়দের। আকারে ছোট্ট হলেও মোটেও নগন্য নয় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ পোস্তদানা। দামেও আর সব মশলা বা রান্নার সামগ্রীকে টেক্কা দেয় পোস্ত। সব সময়ই পোস্তর দাম ঊর্ধ্বগামী। পোস্ততে থাকা ওলেইক অ্যাসিড রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। হার্ট ভালো রাখে পোস্ত। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ধমনীর ব্লকেজের মতো হৃদযন্ত্রের নানান রোগের সম্ভাবনা দূর করে পোস্ত।
আফিম গাছ থেকে মেলে পোস্ত। আফিম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘Papaver somniferam’। বহু যুগ ধরেই শারীরিক ব্যথা, যন্ত্রণার নিরাময় আর সর্দিকাশি ও ডায়েরিয়া সারাতে ব্যবহার হয় আফিম। কিন্তু আফিম নিষিদ্ধ মাদক বলে আমাদের দেশে তা চাষ করা নিষিদ্ধ।
আরও পড়ুন: ফাস্টফুড-ঠান্ডা পানীয় খেলেই আয়ু কমছে মিনিটে মিনিটে! গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য
ফাইবারে সমৃদ্ধ পোস্তর দানা থেকে ভিটামিন আর খনিজ পদার্থ ছাড়াও পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ আর লোহা। পোস্ত থেকে যে তেল পাওয়া যায় তাতে ওমেগা-৬ আর ওমেগা-৩ ফ্যাট পাওয়া যা শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। এছাড়াও পোস্ত থেকে যে তেল পাওয়া যায় তাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনলস থাকে। পলিফেনল হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। পোস্ত থেকে তৈরি হওয়া তেলে থাকে ওলেইক অ্যাসিড যা ত্বকের কাটাছেঁড়া নিরাময় করে। পোস্ত আর পোস্তর দানা থেকে বের হওয়া তেল মাথার যন্ত্রণা, সর্দিকাশি, অ্যাজমা আর ইনসোমনিয়ার সমস্যা দূর করে।
প্রচুর ম্যাগেসিয়াম থাকে বলে পোস্ত স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের নিঃসারণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। স্ট্রেস লেভেল কমায় পোস্ত। যারা দুশ্চিন্তা, স্ট্রেসের কারণে ইনসোমিয়া বা ঘুম কম হওয়ার রোগে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে অব্যর্থ দাওয়াই হল পোস্ত। ঘুমের আগে চা অথবা দুধের মধ্যে পোস্তবাটা মিশিয়ে খেলে ঘুম ভালো হয়। শরীরের মেটাবলিজম ঠিক থাকে।
লোহা থাকায় পোস্ত প্রাকৃতিক ভাবে রক্ত শোধন করার কাজ করে। রক্তে লোহিত কণিকা আর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আর বায়োঅ্যাক্টিভ পদার্থ আছে বলে পোস্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। দস্তার পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল আর অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণসম্পন্ন পোস্ত সর্দিকাশি-জ্বর, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্টের মতো নানা সংক্রমণ ঠেকাতে পারে পোস্ত।
মুখগহ্বরের আলসার, পেপটিক আলসার, আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো নানান রকমের আলসার নিরাময় করতে পারে পোস্ত।
মস্তিষ্কে ঠিকমতো অক্সিজেন আর রক্তের লোহিত কণিকা পৌঁছলে নিউরোট্রান্সমিটারের উৎপাদন হয়। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিকঠাক থাকে। পোস্ত মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, ডিমেনশিয়া, অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
ক্যালসিয়াম, দস্তা আর তামা থাকায় পোস্ত বোন মিনারেল ডেনসিটি বাড়ায়। হাড় মজবুত করে। ম্যাঙ্গানিজ হাড়ের কোলাজেন প্রোটিনের উৎপাদন বাড়ায়।
প্রাকৃতিক ভাবে অ্যানালজেসিক পোস্ত যে কোনো রকম যন্ত্রণা দূর করে। দস্তা আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে বলে পোস্ত চোখ ভালো রাখে, দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তোলে। থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে ভালো রাখে পোস্ত। পটাসিয়াম থাকে বলে পোস্ত কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না।
প্রচুর ডায়াটারি ফাইবার থাকায় পোস্ত খাবার হজম করতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পোস্ত। পোস্ততে ডায়াটারি ফাইবার থাকায় ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, উপকারী গুড কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় পোস্ত হার্টের জন্যও খুব ভালো।
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us

