সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্থুলতা বা অতিরিক্ত ওজনের কারণে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ শুক্রাণুর নিঃসরণে প্রভাব ফেলে। গবেষকরা দেখেন, হাইপোথ্যালামাসের অদলবদলে টেস্টোস্টেরন হরমোন আর শুক্রাণুর নিঃসরণে বদল ঘটে।
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া রিভারসাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালান। ইঁদুরদের হাই ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়ানো হয়। মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় বদল ঘটে। ইঁদুরদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের নিঃসরণ কমে গেছে। শুক্রাণুর পরিমাণ কমেছে। গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল অফ নিউরোসায়েন্স’-এ (Journal of Neuroscience)।
প্রধান গবেষক জুর্জিকা কস জানান, সন্তানধারণ করাকে নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ আর পিটুইটারি গ্ল্যান্ড জননেন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করে। হাইপোথ্যালামাস যেমন খাওয়াদাওয়া, গর্ভধারণকে নিয়ন্ত্রণ করে তেমনই পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোন আর শুক্রাণু এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোন আর ডিম্বাণুর নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড। হাইপোথ্যালামাস পিটুইটারি গ্ল্যান্ডকে সংকেত পাঠায় টেস্টোস্টেরন বা ইস্ট্রোজেন হরমোনের নিঃসরণে। ওজন বেশি ইঁদুরদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে এই কমিউনিকেশন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। হাইপোথ্যালামাসের নিউরন ঠিকমতো কাজ না করায় টেস্টোস্টেরন হরমোন আর শুক্রাণুর নিঃসরণ কমেছে।
পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরও ওজন বেশি থাকলে গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে। মাসিক ক্রিয়াচক্রে সমস্যা হয়, কমে ডিম্বাণু নিঃসরণের মাত্রা। কমে গর্ভধারণের ক্ষমতা। ওজন বেশি থাকলে গর্ভধারণের সময় মহিলাদের ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের সমস্যা দেখা যায় বলে গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে। আইভিএফের মাধ্যমে গর্ভধারণের সাফল্যের হার কমে।
ল্যানসেটের সাম্প্রতিক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, গোটা বিশ্বে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে স্থুলতার সমস্যা। মোটা হচ্ছে পৃথিবী। ১৯৯০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্থুলতার হার চতুর্গুণ বেড়েছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩ গুণ বেড়েছে আগের চেয়ে। ২০২২ সালে গোটা বিশ্বে ৮৭ কোটি ৯০ লাখ মানুষ স্থুলকায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আর এনসিডি রিস্ক ফ্যাক্টর যৌথ ভাবে গবেষণা চালায়।
আমেরিকার ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে পরপর ৩ দিন নাইট শিফট ডিউটি করলেই ডায়াবেটিস, স্থুলতার মতো সমস্যা বাড়ে। কারণ, রাতে না ঘুমিয়ে জেগে কাজ করলে মস্তিষ্কের ভেতরে থাকা অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বিঘ্নিত হয়। প্রভাব পড়ে রক্তের শর্করার মাত্রা ও এনার্জি মেটাবলিজমে।
আরও পড়ুন
