Home শরীরস্বাস্থ্য পুরুষাঙ্গের ক্যানসার বিশ্বব্যাপী বাড়ছে, ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক

পুরুষাঙ্গের ক্যানসার বিশ্বব্যাপী বাড়ছে, ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক

বিশ্বব্যাপী পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্তের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে ২১ হাজারেরও বেশি পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ৪ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। এই সময়ে ৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি পুরুষের পুরুষাঙ্গ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে কেটে ফেলতে হয়েছে।

মারানহাও: সর্বাধিক আক্রান্ত রাজ্য

ব্রাজিলের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য মারানহাও এই রোগে সর্বাধিক আক্রান্তের হার নিয়ে উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এখানে প্রতি এক লাখ পুরুষের মধ্যে ৬.১ জন পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ক্যানসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা

পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের লক্ষণ সাধারণত একটি নিরাময়হীন ঘা দিয়ে শুরু হয়, যা থেকে তীব্র গন্ধযুক্ত স্রাব বা রক্তপাত হতে পারে এবং পুরুষাঙ্গের রং পরিবর্তিত হয়ে যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপির মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চিকিৎসা না করলে পুরুষাঙ্গের আংশিক বা সম্পূর্ণ বিচ্ছেদের প্রয়োজন হতে পারে।

জোয়াও-এর অভিজ্ঞতা

জানুয়ারিতে জোয়াও নামক একজন রোগী পুরুষাঙ্গের আংশিক অঙ্গচ্ছেদ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি কঠিন সময়। এটি এমন কিছু, যা আপনি কল্পনাও করেননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের জন্য আতঙ্কিত ছিলাম, কিন্তু অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। অস্ত্রোপচারের পর প্রথম সপ্তাহের অনুভূতি ছিল দুঃখজনক।’

সম্পূর্ণ অঙ্গচ্ছেদ ও তার প্রভাব

সাও পাওলোর এসি ক্যামার্গো ক্যানসার সেন্টারের ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক থিয়াগো ক্যামেলো মুরাও বলেন, ‘আংশিক অঙ্গচ্ছেদের ক্ষেত্রে, পুরুষাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাবে কোনো জটিলতা হয় না। তবে সম্পূর্ণ অঙ্গচ্ছেদের ক্ষেত্রে মূত্রনালির ছিদ্রটি পেরিনিয়ামে স্থানান্তর করা যেতে পারে এবং রোগীকে টয়লেটে বসে প্রস্রাব করতে হয়।’

ফিট এবং সুস্থ থাকার জন্য ৫টি যোগাসন

এইচপিভি সংক্রমণ ও টিকার অভাব

ব্রাজিলিয়ান সোসাইটি অব ইউরোলজির চিকিৎসক মাউরিসিও ডেনার কর্ডেইরো বলেন, এইচপিভি সংক্রমণ পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের একটি প্রধান কারণ। ব্রাজিলে এইচপিভি টিকা সহজলভ্য হলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে মাত্র ৫৭ শতাংশ এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশের বেশি টিকা গ্রহণ করেনি। আদর্শ টিকাদানের হার হওয়া উচিত ৯০ শতাংশ।

অন্যান্য ঝুঁকি

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) এর ওয়েবসাইট অনুসারে, ধূমপান এবং ফিমোসিস পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। মাউরিসিও বলেন, ‘পুরুষাঙ্গের আচ্ছাদিত ত্বক উন্মুক্ত না করলে এবং সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে এটি থেকে ক্ষরণ হয় যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে এবং টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।’

ধনীদের মধ্যে ক্যান্সারের জেনেটিক ঝুঁকি বেশি, জানাচ্ছে নতুন গবেষণা

বিশ্বব্যাপী পরিস্থিতি

সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, শুধু ব্রাজিল নয়, বিশ্বজুড়ে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্তের সর্বোচ্চ ঘটনা পাওয়া গেছে উগান্ডায়। ওই সময় দেশটিতে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ২.২ জন এই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। এর পরের অবস্থানে ছিল ব্রাজিল, প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ২.১ জন এবং থাইল্যান্ডে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ১.৪ জন এই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। আর সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল কুয়েত, এই দেশে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ০.১ জন এই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।

চিকিৎসক মাউরিসিও মতে, ‘পুরুষাঙ্গের ক্যানসার একটি বিরল রোগ। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য। যৌনাচারের সময় জন্মনিরোধক (কনডম) ব্যবহার করা এবং ফিমোসিসের ক্ষেত্রে অগ্রভাগের ত্বক অপসারণে অস্ত্রোপচার করা পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।’

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version