যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে পাওয়া উপহার সরকারি ভান্ডার বা তোষাখানায় জমা না করে বিক্রি করে দেওয়ার মামলায় প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার করতে ইসলামাবাদ পুলিশ। ইতিমধ্যেই লাহোরের জামান পার্কে তাঁর বাসভবনেও পুলিশ পৌঁছেছে।
কয়েকদিন আগে, ইমরানকে ইসলামাবাদের আদালতে সরকারি কোষাগার (তোষাখানা) থেকে কোটি টাকা মূল্যের উপহার সস্তায় বিক্রি করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এরপর তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা জারি করা হয়। একটি জেলা আদালত তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। রবিবার সকালে ইসলামাবাদ পুলিশ লাহোর পৌঁছে যায়। মিডিয়া রিপোর্টে দাবি, পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর গ্রেফতারি এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু নেতার গ্রেফতারি ঠেকাতে মরিয়া ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) কর্মীরা। ইমরানের বাসভবন ঘিরে রেখেছেন তাঁরা।
কী কারণে জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা?
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর দলের সঙ্গে সম্পর্কিত পাঁচটি সংস্থার সন্ধান পেয়েছে এফআইএ। যেগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রিটেন এবং বেলজিয়ামে কাজ করে। কিন্তু পাক নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হলফনামায় সেগুলির উল্লেখ করা হয়নি।
অন্য দিকে, তাঁকে পাঠানো এফআইএ-র সমন নোটিশ দু’দিনের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ইমরান। নচেত আইন পদক্ষেপ করার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। শীর্ষ তদন্তকারী সংস্থাকে লিখিত জবাবে তিনি জানিয়েছিলেন, “উত্তর দিতে দায়বদ্ধ নই। তথ্য জমা দেওয়ার দায়ও নেই আমার। যদি দু’দিনের মধ্যে নোটিশ প্রত্যাহার না করা হয়, আমি আইনি ব্যবস্থা নেব”।
রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, তৃতীয় এবং চূড়ান্ত নোটিশটি জারি করার আগেই নির্বাচন কমিশন থেকে ইমরানের বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে এফআইএ। সে সবের উপর ভিত্তি করেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতারের তোড়জোড় চলছে। অন্য দিকে, পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, ইমরান খানকে গ্রেফতার করার যে কোনো প্রচেষ্টা পাকিস্তানের পরিস্থিতিকে আরও নেতিবাচক দিকে ঠেলে দেবে।
ইমরানের সঙ্গে টানাপোড়েন নির্বাচন কমিশনের
এর আগেই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেশ করে পাক নির্বাচন কমিশন (ECP)। কমিশন বলেছিল, ৩৪ জন বিদেশি নাগরিকের কাছ থেকে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে তহবিল সংগ্রহ করেছে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (PTI)। দাতাদের তালিকায় রয়েছেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীও।
সে সময় নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকেও কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয় ইমরানকে। নিয়ম না মেনে তহবিল সংগ্রহের কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয় দলীয় প্রধানকে। কমিশনের প্রশ্ন, ওই তহবিল কেন বাজেয়াপ্ত করা উচিত নয়, সেটাই জানাক পিটিআই। কমিশন আরও বলে, পাকিস্তানি আইনের অধীনে বাধ্যতামূলক নিময় মানতে ব্যর্থ হয়েছেন ইমরান।
তার পর থেকেই ইমরানের দলের সঙ্গে কমিশনের টানাপোড়েন অব্যাহত। পাল্টা হিসেবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকন্দর সুলতান রাজার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ইমরান। তিনি বলেন, পিটিআই-এর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করছেন নির্বাচন কমিশনার।
সরকারি সম্পত্তি বিক্রি নিয়ে তদন্ত
এই প্রথম নয়, আরেকটি মামলায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছিল এফআইএ। উপহার হিসেবে পাওয়া একটি নেকলেস নিয়ে সেই বিতর্কের সূত্রপাত। ওই নেকলেসটি ছিল সরকারি উপহার ভাণ্ডারের আওতাধীন। কিন্তু সেটাকে বিক্রি করে দেওয়া হয় এক জুয়েলার্সের কাছে। ১৮ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয় ওই নেকলেস।
পাকিস্তানের রীতি অনুযায়ী, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী যদি এ ধরনের কোনো উপহার পেয়ে থাকেন, তা হলে সেটা সরকারি উপহার ভাণ্ডারে জমা দিতে হয়। তবে বিকল্প হিসেবে, সরকারি উপহারের কমপক্ষে অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করে তা নিজের কাছে রাখা যেতে পারে। কিন্তু ১৮ কোটি মূল্যের নেকলেসের জন্য জাতীয় কোষাগারে মাত্র কয়েক লক্ষ টাকা জমা দেন ইমরান। যা বেআইনি কাজ হিসেবেই চিহ্নিত হয়।