খবর অনলাইন ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ঘটল এক প্রায় বিরল ঘটনা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ালেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক, দুই দলেরই নির্বাচনী প্রচার যখন চলছে ঠিক তারই মাঝে এই সিদ্ধান্ত নিলেন বাইডেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তে দেশ এবং দলের স্বার্থ ‘সবচেয়ে ভালো’ ভাবে সুরক্ষিত হবে বলে মনে করেন বাইডেন। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করার ব্যাপারে তাঁর সমর্থন জানিয়েছেন বাইডেন। কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হলে এই প্রথম কোনো অশ্বেতাঙ্গ মহিলা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন।
৮১ বছরের প্রেসিডেন্ট বাইডেন দিনকয়েক আগে কোভিডে আক্রান্ত হন। তিনি এখন ডেলাওয়ারে তাঁর সৈকতাবাসে রয়েছে। সেখানে থেকেই নিজের ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে চিঠি পোস্ট করে বাইডেন বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট হিসাবে আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাওয়াটা আমার কাছে আমার জীবনে সবচেয়ে বড়ো সম্মান।”
জো বাইডেন লিখেছেন, “পুনরায় নির্বাচনপ্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল। তবে আমি বিশ্বাস করি আমি সরে গেলে আমার দল এবং দেশের স্বার্থ সবচেয়ে ভালো ভাবে সুরক্ষিত হবে। এখন প্রেসিডেন্ট হিসাবে আমার যতটুকু মেয়াদ বাকি আছে সেই সময়টায় আমি আমার কাজেই মন দেব।”
বাইডেন আরও জানিয়েছেন, “কেন আমি এই সিদ্ধান্ত নিলাম তা আমি আগামী সপ্তাহে আরও বিস্তারিতভাবে দেশকে বলব।”
কমলার সমর্থনে বাইডেন
কমলা হ্যারিসকে প্রার্থী করা প্রসঙ্গে বাইডেন লিখেছেন, “২০২০ সালে পার্টি মনোনীত প্রার্থী হিসাবে আমার প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল কমলা হ্যারিসকে আমার ভাইস প্রেসিডেন্ট করা। আমি যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটাই তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। এ বছর পার্টি কমলাকে মনোনীত করলে তাঁর জন্য আমার পূর্ণ সমর্থন ও অনুমোদন রইল। ডেমোক্র্যাটরা, আসুন, এই সময়ে আমাদের একজোট হতে হবে এবং ট্রাম্পকে হারাতে হবে। আমরা সেটাই করি।”
মনে করা হচ্ছে, পার্টির ভিতর থেকেই তাঁর ওপর চাপ আসছিল সরে দাঁড়ানোর জন্য। বিশেষ করে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে মারাত্মক ভাবে ধ্যাবড়ানোর পর বাইডেনের উপর চাপ আরও বাড়ে। তাঁর শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা নিয়ে সংশয় দানা বাঁধতে থাকে।
এমন সময় এই কাণ্ড ঘটল যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আর মাত্র চার মাস দূরে। শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট নেতারা মনে করেন, নভেম্বরের নির্বাচনে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পত্নী মিশেল ওবামা প্রার্থী হলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।
লিন্ডন জনসনের পরে বাইডেন
ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় দফার জন্য ভোটে দাঁড়াননি, এমন ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে খুব কমই ঘটেছে। এর আগে ডেমোক্র্যাটিক দলেরই লিন্ডন বি জনসন প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার ১৯৬৮ সালে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৬৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি নিহত হওয়ার পর ভাইস প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তার পর ১৯৬৪-এর নির্বাচনে জিতে সে দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। এর পর ১৯৬৮-তে তিনি আর দ্বিতীয় দফার জন্য ভোটে লড়েননি। জনসনেরই পথে গেলেন জো বাইডেন।