শুক্রবার রাতে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গিয়েছে মরক্কো। এখনও পর্যন্ত ২০০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এখনও অনেকেই নিখোঁজ। আবার অনেক আতঙ্কিত বাসিন্দা মাঝরাতে তাদের বাড়িঘর অন্যত্র চলে গিয়েছে। ঘর-বাড়ি হারিয়ে অনেকেই এই নিয়ে দ্বিতীয় রাত কাটিয়েছে খোলা আকাশের নীচেই।
উত্তর আমেরিকার ভূতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ১১টার একটু পরে ম্যারাকেশের ৭১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে কম্পন অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল মাটি থেকে সাড়ে ১৮ কিলোমিটার গভীরে। রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.৮।
মরক্কো ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০০০
রাবাত, কাসাব্লাঙ্কা এবং এসসাউইরা উপকূলীয় শহরগুলিতেও শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়। সেই জোরালো ভূমিকম্প আঘাত হানার পরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বিভিন্ন এলাকার একের পর এক বাড়ি। ভাঙা বাড়ির নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। ধ্বংসস্তূপে এখনও অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে মরক্কোর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আপডেট করা পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ভূমিকম্পে অন্তত ২০০০ জন মারা গেছে। মৃতদের অর্ধেকেরও বেশি আল-হাউজ এবং তারউদান্ত প্রদেশের। ওয়ারজাজেট, চিচাউয়া, আজিলাল এবং ইউসুফিয়া প্রদেশের পাশাপাশি ম্যারাকেশ, আগদির এবং কাসাব্লাঙ্কা এলাকায় মৃত্যুর রেকর্ড করেছে মন্ত্রক। ম্যারাকেশ মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম, তবে ইউনেস্কো-সুরক্ষিত পুরানো শহরটি যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঐতিহাসিক রেড ওয়াল।
মন্ত্রক জানিয়েছে, আরও দে়ড় হাজারের মতো মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যার মধ্যে অনেকেরই অবস্থা গুরুতর। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজ শুরু করেছে প্রশাসন। একই সঙ্গে আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ক্ষয়ক্ষতির মরক্কোকে সহযোগিতা বিভিন্ন দেশের
খাদ্য ও জলের তীব্র সংকটও দেখা দিয়েছে। কারণ, বেশ কিছু জায়গায় পাহাড়ি রাস্তায় পাথর এবং অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় জরুরি পরিষেবা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিধ্বংসী ভূমিকম্পের জেরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর ক্ষয়ক্ষতির বহর অনেক বেশি। রেড ক্রস সোসাইটির মতে, ভূমিকম্পের কারণে মরক্কোর এই ক্ষয়ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে মরক্কোর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ইতিমধ্যেই সাহায্য ঘোষণা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি, তুরস্ক, কাতার, ফ্রান্স, জার্মানি, ইজরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, জর্ডন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বহু দেশ থেকেও মরক্কোর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
মরক্কোয় এক শতাব্দীর সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্প
১৯৬০ সালে মরক্কোর আগাদির ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১২,০০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সেটাই হল মরক্কোর সবচেয়ে বিধ্বংসী ভূমিকম্প। তবে সেটির মাত্রা ছিল ৬.৭। শুক্রবারের ভূমিকম্পে রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.৮। এটাই গত এক শতাব্দী সময়কালে মরক্কোয় সবচেয়ে বেশি তীব্রতার ভূমিকম্প।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপ: হৃদয়ের চেষ্টা কাজে দিল না, আবার শ্রীলঙ্কার কাছে হার মানল বাংলাদেশ