এসএসসি মামলায় সোমবার রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। প্রাপ্ত বেতন ১২ শতাংশ সুদ সহ ফেরত দিতে বলেছে বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের এই রায়ের প্রেক্ষিতের মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা, চাকরিপ্রার্থী ও অন্যান্যরা কে কী বললেন জেনে নিন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সোমবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রায় প্রকাশের পর মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তিনি চাকরিহারাদের পাশে আছেন। আদালের এই রায়ের নেপথ্যে তিনি বিজেপির হাত দেখছেন। তাঁর মতে, বিচারালয় আসলে বিজেপির। বিচারপতিদের সে ক্ষেত্রে কোনও দোষ নেই। আসল দোষ হল বিজেপির। আর সে কারণেই তিনি চাকরিহারাদের পরিবারের পাশে থাকবেন। তাঁদের হয়ে হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাবেন। মমতার কথায়, ‘কী করবেন? আমায় জেলে পাঠাবেন? মানুষের পাশ থেকে সরব না। পরিবারের পাশে আছি।’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী
এই রায় প্রকাশের পর শুভেন্দু অধিকারী সোমবার বালুরঘাট লোকসভার কুমারগঞ্জে বরাহার ফুটবল মাঠে একটি জনসভায় বলেন, ‘কলকাতা হাই কোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। যাঁদের চাকরি চলে গিয়েছে, তাঁদের নিয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই। এঁদের সামনে দোকান খুলে চাকরি বিক্রি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর শাগরেদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ৩০ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর যাঁরা সর্বনাশ করেছেন তাঁদের সর্বনাশ হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে।’
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ই বহাল রখেছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বর্তমান তিনি বিজেপি প্রার্থী। রায় বেরনোর পর তিনি বলেন, ‘আদালত উপযুক্ত রায় দিয়েছে। তবে আজ আমার স্বস্তির দিন নয়। কারণ এই মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে আমার রাজ্য চলছে। এত দিন ধরে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে প্রকৃত জ্ঞানী চাকরিপ্রার্থীদের। আশা করব, তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করা হবে।’
আরও পড়ুন। ২০১৬-র নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল, হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি গেল প্রায় ২৬ হাজারের
এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার
আদালতের রায়ে খুশি নন এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। তাঁর প্রশ্ন, পাঁচ হাজার জনের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তার জন্য ২৬ হাজার জনের কেন চাকরি বাতিল হবে?
কুণাল ঘোষ
আদালতের রায়ের পরই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ । তিনি বলেন, ‘একটা সময় যে বা যাঁরা এই অপকর্ম করেছে, চক্র তৈরি করেছে অনেক আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ ছিল। দুর্ভাগ্যবসত তখন তাঁরাই ছড়ি ঘুরিয়েছে। যাঁরা বলতে যেতে তাঁরা অপ্রিয় হত। কেন বাতিল করতে হল এই সমস্যার উত্তর দিতে হচ্ছে গুটি কয়েক লোকের জন্য।’
এই দুর্নীতির জন্য তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে গুটি কয়েক লোকের জন্য এই প্রশ্নের উত্তর এখন ভোটের মুখে দিতে হচ্ছে। এটা অবাঞ্ছিত। কিন্তু চরম ঔদ্ধত্যের সঙ্গে যে পাপটা করে গিয়েছেন তার জন্য সরকারকে দলকে উত্তর দিতে হচ্ছে। এই পাপটা ধারাবাহিকভাবে করছেন। অনেক আগে বন্ধ করা উচিত ছিল। সেটা না হওয়ায় সরকার বিরোধী চেহারা নিয়ে ভোটের মুখে উপস্থিত হল।’
সোমা দাস
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুপারিশে চাকরি পেয়েছেন সোমা দাস। তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত। প্রায় ২৬ হাজার চাকরিরতের চাকরি গেলেও সোমা দাসের চাকরি বহাল রয়েছে। আদালতের এই রায় নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া,’‘আমি যখন মঞ্চে গিয়েছিলাম তখন কোনও ক্যানসার আক্রান্ত রোগী হিসেবে যাইনি। পরিস্থিতির কারণে সেই সময় মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিচার করেছিলেন তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশকে প্রাধান্য দিয়ে আমার চাকরিটা বহাল রাখা হয়েছে। আমি সকলের সঙ্গে আন্দোলন করেই নিজের চাকরিটা নিতে চেয়েছিলাম। দুর্নীতি প্রমাণিত হলেও আমাদের সহযোদ্ধারা এখনও নিজের অধিকার পায়নি। যেদিন তাঁরা নিজেদের অধিকার পাবে আমি সেই দিনই খুশি হব।’’