আর এগারো দিন পরেই মহালয়া, পিতৃপক্ষের শেষ দিন। পরের দিনই শুরু হয়ে যাবে দেবীপক্ষ। ধীরে ধীরে সর্বজনীন দুর্গাপুজো উদ্বোধনের ধুম পড়ে যাবে। দিনপনেরো পরেই মহাষষ্ঠী। পুজোর দিন যত এগিয়ে আসে মহানগরী কলকাতার চেহারাটা কেমন যেন পালটে যায়। চারিদিকে একটা প্রস্তুতির ছবি। পটুয়াপাড়ায় ব্যস্ততা, রাস্তা জুড়ে মণ্ডপ তৈরির কাজ, জোরকদমে কেনাকাটার ধুম, মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে প্রচণ্ড ভিড় এবং তার সঙ্গে ট্র্যাফিক জ্যাম।
এরই মধ্যে চলছে বৃষ্টি। সরকারি ভাবে ৩০ সেপ্টেম্বর বর্ষা বিদায় নিয়েছে এই বঙ্গ থেকে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকেই যেন বৃষ্টির দাপট বেড়ে চলেছে। সেই দাপট এখনও সমানে অব্যাহত। তবে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টির এই দাপট ধীরে ধীরে কমে যাবে। পুজোর সময় তেমন বৃষ্টি হবে না।
বৃষ্টিতে সব চেয়ে অসুবিধা হচ্ছে মৃৎশিল্পীদের। মূর্তি নির্মাণের জায়গাটি বড়ো বড়ো প্লাস্টিকের চাদরে ঢেকে কাজ চালাতে হচ্ছে। কুমোরটুলিতে গেলেই এই দৃশ্য চোখে পড়বে। নির্মীয়মাণ মা সপরিবার ঢাকা রয়েছেন প্লাস্টিকের চাদরে।
বৃষ্টি হোক, বা নাই হোক, মৃৎশিল্পীদের এখন নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। চলছে একদম শেষ পর্যায়ের। বেশ কিছু মণ্ডপে মূর্তি চলে গিয়েছে। সেখানেই চলবে শেষ তুলির টান। বিদেশ থেকে যে সব অর্ডার আছে, সে সবই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে যথাস্থানে, যথাসময়ে।
ইতিমধ্যে বিদেশি শিল্পরসিকরা আসতে শুরু করেছেন কলকাতা শহরে। তাঁদের যাতায়াত চলছে কুমোরটুলিতে। তার ওপর কলকাতার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে এর খ্যাতি সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়েছে। সেই টানেই মহানগরীতে ছুটে আসছেন বিদেশিরা।
ইতিমধ্যে সর্বজনীন পুজোর মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। কলকাতায় সব থিমভিত্তিক পুজো। এবং সেই সব থিমের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে নানা সামাজিক বার্তা। তবে শুধু সামাজিক বার্তাই নয়, বহু থিমের মাধ্যমে বাংলার বহু বিলুপ্তপ্রায় হস্তশিল্পকেও তুলে ধরা হচ্ছে। আর পরিবেশ নিয়ে সচেতন হওয়ার কথা তো বলা হচ্ছেই।
পুজোর বাজারে তো ভিড় শুরু হয়ে গিয়েছে মাসখানেক আগে থেকেই। গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট, হাতিবাগান প্রভৃতি বাজারে পা ফেলার তো জায়গা নেই-ই, এমনকি শহর ও শহরতলির অন্যান্য বাজারেও চলছে জোর কেনাকাটা। বিক্রেতাদের মুখে হাসি। বছরের এই সময়টার জন্য তো তাঁরা অপেক্ষা করে থাকেন দুটো পয়সার মুখ দেখবেন বলে।
পুজো এলেই আর-একটা কাজ শুরু হয়ে যায় খুব ধুমধাম করে। প্রশাসনের টনক নড়ে। রাস্তা গাড়িঘোড়ার চাপ বাড়ে। তাই জোরকদমে চলতে থাকে রাস্তা সারাইয়ের কাজ।
এ বার পুজোর সময় এত উৎসাহব্যাঞ্জক খবরের মধ্যে রয়েছে একটি হতাশার খবর। শহরে ডেঙ্গির উৎপাত শুরু হয়েছে। এবং তা দিন দিন বাড়ছে। তাই বিভিন্ন জায়গায় নাগরিকদের উদ্যোগে চলছে সচেতনতা অভিযান।
ছবিগুলি তুলেছেন রাজীব বসু।