কলকাতা: মন্টি নাইয়ার বয়স মাত্র ১৬। ক’মাস আগে পর্যন্ত নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না তার। শুধু কি তাই, মনের কোণে তেমন কোনো স্বপ্ন পুষতেও শেখেনি সে। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে কী ভাবে পাড়ি দেবে ভবিষ্যতে, তেমন কোনো পরিকল্পনাও ছিল না তার ভাঁড়ারে। কিন্তু গত সপ্তাহে এহেন মন্টি যখন মাইক্রোফোন হাতে নিজের ভবিষ্যতের পরিকল্পনাগুলি ধাপে ধাপে প্রকাশ্যে নিয়ে এল, তখন তাকে মেলানো দায়। সেই মন্টি এখন আত্মবিশ্বাসে এতটাই ভরপুর যে, এ বিশ্বকে সে মুঠোয় পুরতে প্রস্তুত।
ব্যাপারটা খোলসা করা যাক। মন্টির মতোই কলকাতা পুরসভার ৮১, ৮৮ ও ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরও কিছু ‘সহায়হীন’ কচিকাঁচা এখন ‘প্রজেক্ট উন্নতি’র অংশ। জিনিয়াস ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় ক্রাই (CRY) এবং প্রাজক (Praajak)-এর এই শিক্ষা-ভিত্তিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিশেষ ক্লাসে যোগ দিয়েছে তারা।
গত শুক্রবার, একটি অনুষ্ঠানে প্রায় এ রকমই প্রায় জনা কুড়ি খুদে নিজেদের স্বপ্নের কথা গড়গড় করে বলে ফেলল। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে নিজেদের হৃদয় উজাড় করে দিয়ে তাদের আশা, ইচ্ছা এবং কী ভাবে এই উদ্যোগ তাদের জীবন, চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে, কোনো কিছুই গোপন করল না।
যেমন, পূজা দে নামে এক কিশোরী জানাল, সে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে একজন শিক্ষিকা হতে চায়। শুধু তাই নয়, অভাব-অনটনে যারা শিক্ষা থেকে দূরে থেকে যায়, তেমন শিশুদেরই পড়াতে চায় সে। এই স্বপ্ন সে দেখতে শুরু করেছে নিজের শিক্ষকদের কাছ থেকেই। গত কয়েক মাস ধরে এ ধরনের বিশেষ ক্লাসে যোগ দিয়েই তাদের দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তন এসেছে।
এ ব্যাপারে জিনিয়াস কনসালটেন্টস লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রবীরকুমার চক্রবর্তী বলেন, ছোটোদের বড়ো স্বপ্ন দেখাতে, তাদের শিক্ষায় মনোযোগী করে তুলতে এবং সুযোগগুলিকে কাজে লাগাতেই এই উদ্যোগ। এই কাজে সর্বাত্মক সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রবীরবাবু।
এই উদ্যোগের কো-অর্ডিনেটর পিয়ালি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সত্যি বলতে কি, কয়েক মাস আগেও এখানকার বেশির ভাগ শিশুর মধ্যে কারও চোখের দিকে তাকানোর সাহসও ছিল না। কিন্তু আজ আমরা দেখছি, হাতে মাইক্রোফোন ধরে তারা স্বপ্ন ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। আমরা যে কাজ করে চলেছি, এটা তারই ইতিবাচক প্রভাব। তবে এখনও অনেক পথ বাকি এবং আমরা তাদের পাশে থাকতে চাই এবং সাহায্য করতে চাই। তারা যেন নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে”।