নয়াদিল্লি: ২০১৬ সালের নোটবন্দি (Demonetisation)-কে ভুল পদক্ষেপ হিসেবে দাবি করা পিটিশনগুলির উপর রায় সংরক্ষণ করেছে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। সোমবার সেই মামলাতেই রায় ঘোষণা করতে পারে সর্বোচ্চ আদালত।
এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে ৫৮টি পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। বিচারপতি এস আবদুল নাজিরের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ দীর্ঘ শুনানির পর গত ৭ ডিসেম্বর এই মামলার রায় স্থগিত করে। বিচারপতি নাজির ছাড়াও সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্য ৪ সদস্য হলেন- বিচারপতি বিআর গভই, এএস বোপান্না, ভি রামসুহ্মণ্যম এবং বিভি নাগরত্ন।
কেন নোটবন্দির সিদ্ধান্ত
আবেদনকারীর পক্ষে পি চিদাম্বরম এবং শ্যাম দিভানের মতো সিনিয়র আইনজীবীদের যুক্তি শুনেছিল বেঞ্চ। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমানি। আবেদনগুলির শুনানি শেষে, কেন্দ্রীয় সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে সিল করা খামে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত প্রক্রিয়ার নথি হস্তান্তর করার অনুমতি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
আচমকা দেশে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে দেশে জাল নোট এবং কালো টাকা রোধ করা যাবে। পাশাপাশি, বাজারে নগদ লেনদেনের পরিমাণ কমবে ডিজিটাল লেনদেনের সৌজন্যে।
হঠাৎ করে পুরনো নোট তুলে নেওয়ার বিরুদ্ধে বহু পিটিশন দায়ের করা হয়। ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিষয়টি পাঁচ বিচারপতির একটি সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তারপরে সুপ্রিম কোর্ট নোট বাতিলের উপর নিষেধাজ্ঞা-সহ কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ দিতে অস্বীকার করেছিল।
নোটবন্দি নিয়ে কেন্দ্রের যুক্তি
দীর্ঘ সময়ের শুনানিতে নিজের সিদ্ধান্তকে শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে কেন্দ্র। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, কর ফাঁকি বন্ধ করতে এবং কালো টাকা রোধ করার জন্য নোটবন্দির মাধ্যমে একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল জাল নোটের সমস্যা মোকাবিলা করা এবং সন্ত্রাসবাদীদের টাকার উৎস বন্ধ করা। এ সময় তিনি মহাভারতের চরিত্র জরাসন্ধের উদাহরণও দেন। তিনি বলেন, জরাসন্ধকে যেমন ছিঁড়ে দুই টুকরো করা হয়েছিল, তেমনি এই সমস্যাগুলোকেও টুকরো টুকরো করা দরকার ছিল।
কেন্দ্রের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (RBI) অ্যাক্ট, ১৯৩৪-এর অধীনে যে কোনো মুদ্রার নোট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সরকারের। নোটবন্দির পরপরই, সংসদও স্পেসিফাইড ব্যাঙ্ক নোটস (সেসেশন অফ লায়বিলিটি) অ্যাক্ট, ২০১৭ পাস করে। সবমিলিয়ে, নিয়ম না মেনেই নোটবন্দি করা হয়েছিল, এমন যুক্তি সঠিক নয়।
কেন্দ্রের আরও দাবি, নোট বাতিলের সুপারিশ করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অনেক আলোচনা ও প্রস্তুতির পর তা বাস্তবায়িত হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবীও বলেন, এটা একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত। যা আদালতে পর্যালোচনা করা যাবে না। এটা একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল। এই সিদ্ধান্তের ফলে মানুষ প্রাথমিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল ঠিকই, তবে এর উদ্দেশ্য ছিল দেশকে শক্তিশালী করা।
পাল্টা যুক্তি আবেদনকারীদের
আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্থিত হয়ে প্রবীণ আইনজীবী পি চিদাম্বরম বলেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের আগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয়নি কেন্দ্র। ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে পাঠানো কেন্দ্রের চিঠিটি রেকর্ডে রাখা হয়নি, অথবা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ডের সভায় কী আলোচনা হয়েছিল তাও বলা হয়নি। ৮ নভেম্বর মন্ত্রীসভার নেওয়া সিদ্ধান্তও আদালতে পেশ করা হয়নি।
একই সঙ্গে কেন্দ্রে যে আরবিআই আইন, ১৯৩৪-এর বিধানের কথা উল্লেখ করছে, সেই যুক্তিকেও খণ্ডন করেন চিদাম্বরম। তিনি বলেন, এই আইনের ধারা ২৬ (২) অনুযায়ী, নোট প্রত্যাহার করার আগে জনগণকে প্রথমে জানানো উচিত, কিন্তু ঘোষণার পরপরই, দেশের ৮৬ শতাংশ মুদ্রা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক সংকটে পড়তে হয়েছিল মানুষকে। তাদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।