নয়াদিল্লি: এথিক্স কমিটির সুপারিশ মেনেই ঘুষের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে শুক্রবার। কার্শিয়াং থেকে মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিন লোকসভায় পেশ হয় এথিক্স কমিটির রিপোর্ট। যাতে মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজের সুপারিশ করা হয়েছিল। রিপোর্ট পেশ হওয়ার পর তুমুল হই-হট্টগোলে লোকসভা মুলতুবি ঘোষণা করা হয়। এরপর দুপুর ২টো নাগাদ এই মর্মে বিতর্ক শুরু হয়। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিকবার আর্জি জানানো সত্ত্বেও এদিন স্পিকার মহুয়াকে বলার সুযোগ দেননি। লোকসভার পরম্পরা স্মরণ করিয়ে অভিযুক্ত মহুয়াকে এদিন নিজের বক্তব্য পেশ করতে দেওয়া হয়নি। এরপরই এথিক্স কমিটির সুপারিশ মেনে বহিষ্কার করা হয় তৃণমূল সাংসদকে।
এ বিষয়ে ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রস্তাব পাশ করান লোকসভার স্পিকার। মহুয়াকে নিজের স্বপক্ষে বলতে না দেওয়া প্রসঙ্গে বিজেপির তরফে সাংসদ অপরাজিতা সরঙ্গি বলেন, ‘‘মহুয়াকে বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি সুযোগ পেলেও তখন কিছু বলেননি। ওয়াক আউট করে গিয়েছিলেন।’’
বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেন মহুয়া। বলেন, ‘‘মোদী সরকার আমাকে চুপ করিয়ে দিতে চাইছে। মহিলা সাংসদকে হেনস্থা করা হচ্ছে। আগামী ছ’মাসও হেনস্থা করা হবে।’’
বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়া আরও বলেন, “দর্শন হিরানন্দানিকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়নি। আমার প্রাক্তন সঙ্গী জয় অনন্ত দেহদ্রাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে দোষী বানানো হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে টাকার বিনিময়ে সংসদে আমি প্রশ্ন করেছি। কিন্তু ওই ব্যবসায়ীর হলফনামায় বলা হয়েছে যে আমি নাকি ওনাকে চাপ দিয়েছিলাম নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এই প্রশ্ন করতে। দুই অভিযোগের মধ্যে দূর-দূরান্তে কোনো মিল নেই। এথিক্স কমিটি গভীরে গিয়ে তদন্ত না করেই আমায় ফাঁসিতে চড়িয়েছে। অভিযোগকারী ব্যবসায়ীর বয়ানই শুনতে চায়নি এথিক্স কমিটি। কোনও প্রমাণ নেই টাকা বা অন্য কোনও উপহার নেওয়ার।”
এ দিকে, উত্তরবঙ্গ সফরে রয়েছেন মমতা। মহুয়ার সাংসদপদ খারিজ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘মহুয়ার বিষয়ে আমাদের ‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা আরও খানিকটা সময় চেয়েছিলেন। ৪৯৫ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট, সেটা পড়তে সময় লাগবে না? দু’ঘণ্টার মধ্যে আলোচনা শুরু করা হল। আধ ঘণ্টায় ৪৯৫ পাতার আলোচনা হয়েও গেল! কী করে হল আমি বুঝলাম না। মহুয়ার সাংসদ পদও খারিজ করে দেওয়া হল। আমি স্তম্ভিত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দল মহুয়ার পাশে আছে। ছিল। এই ঘটনা থেকে বিজেপির প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি আরও এক বার প্রমাণিত। মহুয়াকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু বলার সুযোগই দেওয়া হল না। আমি এর তীব্র বিরোধিতা করছি।’’
আরও পড়ুন: মহুয়ার বিরুদ্ধে এথিক্স কমিটির রিপোর্ট পেশ সংসদে, তীব্র হই-হট্টগোলে মুলতুবি লোকসভা