ডাক্তারির স্নাতক স্তরে ভর্তির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট (NEET UG 2024) এবং এর ফলাফল নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পরীক্ষার আগের দিনই ফাঁস হয়ে যায় নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। ৩০ থেকে ৩২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছিল একেক জন পরীক্ষার্থীকে। পুলিশের দাবি, মূল অভিযুক্ত অমিত আনন্দ নিজেই এই স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
ঘটনায় প্রকাশ, নিট ২০২৪-এর প্রশ্নফাঁস চক্রের মূলচক্রী এই অমিত আনন্দ। তিনি বিহারের বাসিন্দা। তাঁর আসল বাড়ি বিহারের মুঙ্গের জেলায়। কিন্তু ইদানীং তিনি পটনার এজি কলোনিতে একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। কী ভাবে প্রশ্নপত্র বিক্রির কারবার ফেঁদেছিলেন অমিত?
‘এবিপি নিউজ’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে অমিত জানিয়েছেন, পরীক্ষার আগের দিন তাঁর হাতে প্রশ্নপত্র আসে। তাই টাকা দেওয়া পরীক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় পেয়েছিলেন। পুলিশি জেরায় অমিত জানিয়েছে, পড়ুয়াদের কাছ থেকে মাথাপিছু ৩০ থেকে ৩২ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। ওই টাকার বিনিময়ে শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁসই নয়, পরীক্ষার্থীদের রাতভর উত্তরগুলি পাখি পড়ার মতো পড়ানো হয়েছিল, যাতে তাঁরা পরীক্ষায় সমস্ত উত্তর লিখে আসতে পারে। পরীক্ষার আগের দিন ওই পরীক্ষার্থীদের পটনার রামকৃষ্ণনগর এলাকার একটি ‘নিরাপদ’ জায়গায় রাখা হয়।
অমিত স্বীকার করে নিয়েছেন যে এর আগেও একাধিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে সে। পটনার এজি কলোনীর যে ফ্ল্যাটে ভাড়া নিয়ে থাকত অমিত, সেখানেই পড়ুয়াদের আসতে বলা হত ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করার জন্য। তবে, কী ভাবে অমিত প্রভাব খাটিয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ এক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগেভাগেই হাতে পেয়ে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
বিহার থেকে গ্রেফতার হওয়া অন্যতম চারজনের মধ্যে রয়েছে পরীক্ষার্থী অনুরাগ যাদব, দানাপুর পুরসভার একজন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সিকান্দার যাদবেন্দু এবং অন্য দু’জন নীতীশ কুমার এবং অমিত আনন্দ। পরীক্ষার্থী অনুরাগ যাদব বলেন, “আমাকে রাতে উত্তর করানো হয়েছিল। আমি যখন পরীক্ষার জন্য গিয়েছিলাম, তখন আমি সেই প্রশ্নগুলো পেয়েছি যেগুলো আমি সঠিকভাবে মুখস্থ করেছিলাম। পরীক্ষার পর, পুলিশ এসে আমাকে ধরে ফেলে এবং আমি নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছিলাম।”
যাদবেন্দু দাবি করেছেন যে অন্য দুই অভিযুক্ত, নীতীশ কুমার এবং অমিত আনন্দ তাঁকে বলেছিলেন যে তাঁরা যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে পারেন এবং নিট পাস করানোর জন্য প্রত্যেক প্রার্থীকে ৩০-৩২ লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে। পুলিশের কাছে জেরায় তিনি বলেন, “আমি রাজি হয়েছিলাম এবং তাঁদের বলেছিলাম আমার চারটি ছেলে আছে (যাদের পরীক্ষায় পাস করার জন্য সাহায্য দরকার)। ৪ জুন রাতে আমি তাঁদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম এবং নীতীশ কুমার এবং অমিত আনন্দ তাঁদের প্রশ্নপত্র দিয়েছিলেন। লোভের বশবর্তী হয়ে আমি তাঁদের কাছ থেকে ৩০ লক্ষের বদলে ৪০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলাম।”
আরও পড়ুন: আবার নিট পরীক্ষা ২৩ জুন, বাড়তি নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের কি নতুন করে ফি দিতে হবে?