সাতপাক ঘোরা এবং অন্যান্য আচার ছাড়া হিন্দু বিয়ে বৈধ নয়। একটি মামলায় এমনটাই পর্যবেক্ষণ এলাহাবাদ হাইকোর্টের। হিন্দু বিবাহ আইনে বৈধ বিয়ের জন্য ‘সপ্তপদী’ যে অন্যতম অপরিহার্য একটি নিয়ম, সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছে হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট এমন একটি মামলার পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছে, যেখানে একজন স্বামী অভিযোগ করেছিলেন যে তাঁর স্ত্রীকে শাস্তি দেওয়া উচিত, কারণ তিনি বিবাহবিচ্ছেদ না করেই পুনরায় বিয়ে করেছিলেন। তবে স্মৃতি সিং নামে এক মহিলার আবেদন গ্রহণ করে বিচারপতি সঞ্জয়কুমার সিং বলেন, সপ্তপদী’ ও অন্য়ান্য আচার-অনুষ্ঠান ছাড়াও হিন্দু বিবাহ যথাযথভাবে সম্পন্ন না হয়। ফলে সেই বিয়েকে বৈধ বলাও যায় না।
হিন্দু বিয়েতে সাতপাকে ঘোরা
হাইকোর্ট বলেছে, বিয়ে বৈধ না হলে তা আইনের দৃষ্টিতেও বিয়ে নয়। সপ্তপদী, হিন্দু আইনে, বৈধ বিবাহের একটি অপরিহার্য অংশ। কিন্তু বর্তমান ক্ষেত্রে এই প্রমাণের অভাব রয়েছে। হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫-র ধারা ৭-এর উপর নির্ভর করেছে হাইকোর্ট। যেখানে বলা হয়েছে, একটি হিন্দু বিবাহ অবশ্যই সপ্তপদী (পবিত্র অগ্নির সাক্ষী রেখে বর ও কনের সাতপাক ঘোরা)-সহ সম্পূর্ণ আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পন্ন করা উচিত।
আবেদনকারীর একটি পিটিশনকে সামনে রেখে বিচারপতি বলেন, “বিয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গাম্ভীর্যপূর্ণ শব্দটি। আচার-অনুষ্ঠান করে উদযাপন করা হয় বিয়ে। সঠিক রীতি-নীতি না মেনে বিয়ে হলে গুরুত্ব থাকে না বিষয়টির। সেক্ষেত্রে বিয়েটি মোটেই বৈধ নয়। অন্তত আইন সে কথাই বলছে। আইনের চোখে ওই সম্পর্ক বিয়ে বলে মান্যতা পায় না। হিন্দু বিবাহ আইনে বৈধ বিবাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হল ‘সপ্তপদী’। কিন্তু এই মামলায় সেই বিষয়টি অনুপস্থিত।”
মহিলার বিরুদ্ধে মির্জাপুর আদালতে বিচারাধীন অভিযোগের মামলায় সমন আদেশ ও পরবর্তী কার্যক্রম বাতিল করে হাইকোর্টের বিচারপতি বলেন, “এমনকি অভিযোগের পাশাপাশি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও সপ্তপদীর বিষয়ে কোনো দাবি নেই। অতএব, প্রাথমিক ভাবে এখানে কোনো অপরাধ প্রমাণিত হয় না।”
মামলার নেপথ্যে
পিটিশন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সত্যম সিংহের সঙ্গে বিয়ে হয় স্মৃতি সিংহের। পরবর্তীতে সম্পর্কের তিক্ততার কারণে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে যান স্মৃতি। এমনকী, পণের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগে একটি এফআইআর-এ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে হলফনামা দাখিল করে পুলিশ। স্মৃতি ভরণপোষণের জন্য আবেদন করলে তা মঞ্জুরও হয়। মির্জাপুর পারিবারিক আদালত ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি নির্দেশ দেয়, পুনরায় বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত স্মৃতিকে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা ভরণপোষণ দিতে হবে সত্যমকে।
এর পর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বিয়ের অভিযোগ এনেছেন স্বামী। সেই অভিযোগ নিয়ে হাইকোর্টে গেলে সাতপাকে ঘোরা নিয়ে এমনই পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের।
আরও পড়ুন: আজও মেঘে ঢাকা আকাশ, আর কতদিন বৃষ্টির দাপট