ঋণে জর্জরিত রাজ্যগুলির বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলির (DISCOMs) জন্য এক ঐতিহাসিক আর্থিক পুনর্গঠন পরিকল্পনা হাতে নিতে চলেছে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন সরকার প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা (প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)-এর একটি উদ্ধারপ্যাকেজ বিবেচনা করছে, যার মূল লক্ষ্য হলো রাজ্য পর্যায়ে অদক্ষ ও লোকসানে চলা বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগকে আর্থিকভাবে পুনরুজ্জীবিত করা।
এই উদ্ধারপ্যাকেজ পাওয়ার শর্ত হিসেবে রাজ্যগুলিকে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা বেসরকারিকরণ করতে হবে বা সংস্থাগুলিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত (public listing) করতে হবে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎ মন্ত্রকের প্রস্তুত করা পরিকল্পনা নথিতে এমনই শর্তের কথা উল্লেখ রয়েছে।
সংস্কারের সবচেয়ে কঠিন ধাপের দিকে মোদী সরকারের পদক্ষেপ
বিদ্যুৎ মন্ত্রক ও অর্থ মন্ত্রক বর্তমানে এই প্যাকেজের চূড়ান্ত রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করছে। ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় বাজেটে এই ঘোষণা করা হতে পারে বলে সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত।
এই পদক্ষেপকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সবচেয়ে কঠিন বিদ্যুৎ সংস্কার উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ গত দুই দশকে একাধিক বেলআউট প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও রাজ্যগুলির বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির আর্থিক দুরবস্থা দূর হয়নি।
নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত রাজ্য বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলির মোট ক্ষতি ৭.০৮ লক্ষ কোটি টাকা (প্রায় ৮০.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) এবং মোট ঋণ ৭.৪২ লক্ষ কোটি টাকা (প্রায় ৮৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)-এ পৌঁছেছে।
বেলআউটের শর্ত
কেন্দ্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজ্যগুলিকে দুটি বিকল্প দেওয়া হবে—
বিকল্প ১:
রাজ্যগুলি চাইলে নতুন একটি বিতরণ সংস্থা গঠন করে তার ৫১% শেয়ার বেসরকারি বিনিয়োগকারীর হাতে তুলে দিতে পারবে। এতে তারা ৫০ বছরের জন্য সুদমুক্ত ঋণ এবং ৫ বছরের জন্য কম সুদের কেন্দ্রীয় ঋণ পাবে।
বিকল্প ২:
রাজ্যগুলি চাইলে বিদ্যমান রাজ্য বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার ২৬% পর্যন্ত শেয়ার বেসরকারি হাতে তুলে দিতে পারবে। এর বিনিময়ে কেন্দ্রীয় সরকার ৫ বছরের জন্য কম সুদের ঋণ সুবিধা দেবে।
তবে যেসব রাজ্য ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি হাতে দেবে না, তাদের সংস্থাগুলিকে তিন বছরের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করতে হবে। এই তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলিকেও পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র কম সুদের ঋণ দেবে।
বেসরকারি কোম্পানির লাভের সম্ভাবনা
এই সংস্কারের ফলে আদানী পাওয়ার, রিলায়েন্স পাওয়ার, টাটা পাওয়ার, সিইএসসি এবং টরেন্ট পাওয়ার-এর মতো বড় বেসরকারি সংস্থাগুলির লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা রাজ্য পর্যায়ের সংস্থাগুলিতে অংশীদারিত্ব পেতে পারে।
তবে অতীতে এই ধরনের বেসরকারিকরণ প্রচেষ্টা বহুবার কর্মচারী ও বিরোধী দলের প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এবারও রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবাদের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
অরোরা এনার্জির ভারতের প্রধান দেবব্রত ঘোষ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বেসরকারিকরণ এখন প্রয়োজনীয়, যাতে আর্থিক ও কার্যক্ষমতা দুই-ই বাড়ে। কিন্তু এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সাহস ও প্রশাসনিক দক্ষতা—দুটোই জরুরি।”
বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের রূপরেখা
বর্তমানে শুধুমাত্র কয়েকটি অঞ্চল যেমন দিল্লি, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাত-এর কিছু অংশেই বেসরকারিকরণ হয়েছে। কেন্দ্র শীঘ্রই বিদ্যুৎ আইন সংশোধন করার পরিকল্পনা নিচ্ছে, যাতে বেসরকারি সংস্থাগুলি বিদ্যমান রাজ্য নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে।
আরও পড়ুন: কলকাতায় আত্মপ্রকাশ গোদরেজ হাউসিং ফিন্যান্সের, পূর্ব ভারতে ঋণ পরিষেবায় নতুন দিগন্ত
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us

