গত কয়েক দিন ধরে বিপর্যয়ের আতঙ্ক ছড়িয়েছে জোশীমঠে। যত সময় এগোচ্ছে, ততই ফাটল দেখা দিচ্ছে জোশীমঠের ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ের বুকে তলিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন এই শহর।
এমন কিছু যে হতে চলেছে, গত কয়েক বছর আগেই তার আভাস মিলেছিল। গত অক্টোবর মাসে প্রবল বর্ষণের সময় থেকেই ঘরবাড়ি আর রাস্তায় ফাটল দেখা দিতে থাকে জোশীমঠে। কিন্তু শেষ ১৫ দিনে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
এনটিপিসি হাইডেল প্রকল্পের টানেলে বিস্ফোরণের ঘটনা
এরই মধ্যে চর্চায় উঠে এসেছে এনটিপিসি হাইডেল প্রকল্পের টানেলে বিস্ফোরণের ঘটনা। এনডিটিভি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামিকে এ বিষয়ে তিনবার চিঠি লিখেছিলেন জোশীমঠের বাসিন্দারা।
ওই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেছিলেন কাছাকাছি নির্মীয়মান এনটিপিসি হাইডেল প্রকল্পের টানেলে বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। সতর্কতামূলক সেই চিঠিগুলিতে বলা হয়েছিল, পবিত্র শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নির্মীয়মান প্রকল্পের বিস্ফোরণের কারণে মাটি কাঁপতে শুরু করে এবং বাড়ি এবং রাস্তাগুলিতে প্রাথমিক ফাটল দেখা দেয়। আতঙ্কিত বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তবে কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
বাসিন্দাদের চিঠি উত্তরাখণ্ড সরকার এবং জেলাশাসককে
ঠাকুর সিং রানা নামে স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ীর কথায়, “আমরা গত বছর থেকে উত্তরাখণ্ড সরকার এবং জেলাশাসককে এনটিপিসি টানেলে বিস্ফোরণের বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। পুরো এলাকায় কম্পন সৃষ্টি করে ওই বিস্ফোরণ। গত বছরের ডিসেম্বরে যখন আমাদের বাড়িগুলিতে প্রাথমিক ফাটল দেখা দিল, তখন আমরা বেশ কয়েকটি চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু সরকারের তরফে কোনো সাড়া মেলেনি। ডিএম একবার পরিদর্শন করেছিলেন, কিন্তু সমস্যার সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে যে কোনো সময় জোশীমঠ তলিয়ে যেতে পারে”।
চামোলি জেলাশাসক হিমাংশু খুরানা স্বীকার করেছেন, স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে এবং মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু তিনি “কী করবেন তা জানতেন না”। তিনি আরও বলেন, এনটিপিসি প্রশাসনকে বলেছে যে তারা সমস্ত নির্দেশিকা অনুসরণ করছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জোশীমঠ শহরটা ধীরে ধীরে বসে যাচ্ছে। এমনিতেই এই শহর তৈরি হয়েছে ধসে যাওয়া পাহাড়ের ধ্বংসস্তূপের উপর। তাই এখানকার মাটি নড়বড়ে। তার উপর নিষেধাজ্ঞা এবং যাবতীয় সতর্কতা উড়িয়ে গত কয়েক বছরে দেদার নির্মাণকাজ চলেছে জোশীমঠে।
এখনও অবধি জোশীমঠের কমপক্ষে ৬০০ বাড়িতে ফাটল
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও অবধি জোশীমঠের কমপক্ষে ৬০০ বাড়িতে ফাটল ধরেছে বলে জানা গিয়েছে। সম্প্রতিই বিশেষজ্ঞের একটি দল জোশীমঠে সমীক্ষা করেন। তারা দেখতে পান, এলাকাবাসীর দাবি সম্পূর্ণ সত্য, জোশীমঠের ভিত সত্যিই মাটিতে বসে যাচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তেই বড়ো কোনো বিপর্যয় ঘটতে পারে। রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, বিপর্যয়ে যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এবং খালি করতে হবে, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আগামী ছ’মাস প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া পাবেন।
আরও পড়ুন: নতুন বছরে বড়ো ঘোষণা! ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বন্ধকহীন ক্ষুদ্র ঋণ হকারদের