ছাত্র রাজনীতির কি কোনো প্রয়োজন আছে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অব্যাহত তর্ক-বিতর্ক। তবে দেশের রাজনীতিতে বর্তমানে পরিচিত মুখদের বেশির ভাগই রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছিলেন ছাত্রজীবনেই। দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে, এমন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় বা জেএনইউ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকেই জন্ম হয়েছে অনেক ছাত্রনেতার। যাঁরা জাতীয় বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু মজার বিষয়, গত ৫০ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রনেতাই লোকসভার দরজায় পৌঁছাতে পারেননি।
উল্লেখ্যনীয় বিষয় হল, এই প্রথমবার জেএনইউ-র তিন ছাত্রনেতা সরাসরি লোকসভা নির্বাচনে লড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন উত্তর-পূর্ব দিল্লির কানহাইয়া কুমার, নালন্দার সন্দীপ সৌরভ এবং শ্রীরামপুরের দীপ্সিতা ধর। আরেকটি মজার ব্যাপার হল, এই তিন ছাত্রনেতাই বিরোধী দলের প্রার্থী। অথবা বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র প্রার্থী।
কানহাইয়া কুমার
কানহাইয়া বর্তমানে কংগ্রেসের ছাত্র শাখা এনএসইউআই-এর ইনচার্জ। বিহারের বেগুসরাইয়ের বাসিন্দা কানহাইয়া ২০১৬ সালে প্রথমবার প্রচারের আলোয় এসেছিলেন, যখন তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই মামলায় তিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন এবং নিম্ন আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে বিচার চলছে। ২০১৫-১৬ সালে জেএনইউ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি কানহাইয়া কুমার উত্তর-পূর্ব দিল্লি লোকসভা আসন থেকে কংগ্রেসের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কানহাইয়া ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, কিন্তু তিনি বিহারের বেগুসরাই আসনে পরাজিত হন। সেবার তিনি সিপিআই প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এবার কংগ্রেসের তরফে উত্তর-পূর্ব দিল্লি আসন থেকে টিকিট দেওয়া হয়েছে কানহাইয়াকে। তাঁকে লড়তে হবে বিজেপির মনোজ তিওয়ারির বিরুদ্ধে। দিল্লিতে মনোজ তিওয়ারিই একমাত্র সাংসদ, যাঁকে আবারও টিকিট দিয়েছে বিজেপি।
সন্দীপ সৌরভ
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সিপিআই (এমএল) নেতা সন্দীপ সৌরভ বিহারের নালন্দা আসনে ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী। বিহারে নালন্দাকে জেডিইউ-এর শক্ত ঘাঁটি বলে মনে করা হয়। বর্তমানে এখানকার বিদায়ী সাংসদ জেডিইউ-র কৌশলেন্দ্র কুমারকে এবারও প্রার্থী করেছে ডেজিইউ।
সন্দীপ এই প্রথমবার লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর আগে, সন্দীপ পালিগঞ্জ আসন থেকে ২০২০ বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, সেবার তিনি জিতেওছিলেন।
দীপ্সিতা ধর
হুগলির শ্রীরামপুর লোকসভা আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেএনইউ-তে এসএফআইয়ের প্রাক্তন সভানেত্রী দীপ্সিতা ধর। এই আসনটি তৃণমূল কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে মনে করা হয় এবং এখানকার বিদায়ী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবারও টিকিট দিয়েছে তৃণমূল।
দীপ্সিতী ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। সিপিএম তাঁকে হাওড়ার বালি আসন থেকে প্রার্থী করেছিল, কিন্তু তিনি সেখানে তৃতীয় স্থান পেয়েছিলেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, শ্রীরামপুরের নির্বাচন দুই দিক থেকে দীপ্সিতার জন্য খুবই কঠিন। প্রথমত, শ্রীরামপুরে গত নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী হওয়া তীর্থঙ্কর রায়ের জামানত জব্দ হয়। দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জ শ্রীরামপুরের স্থানীয় সমীকরণ। শ্রীরামপুর লোকসভায় ৭টি বিধানসভা আসন রয়েছে, কিন্তু একটিও সিপিএমের দখলে নেই। তবে, তরুণ প্রজন্মের একজন বলিয়ে-কইয়ে নেত্রী হিসাবে দীপ্সিতার ইমেজের কারণে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী সিপিএম।
আরও পড়ুন: ছত্তিশগড়ে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে শীর্ষনেতা সহ ২৯ মাওবাদী নিহত