অজন্তা চৌধুরী
২৩ বছর পেরিয়ে ২৪-এ পা দিল কালিন্দী নাট্যসৃজন। নাট্যসংস্থার ২৪তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে অভিনীত হল তাদের নবতম প্রযোজনা ‘বহমান’। নাটক রচয়িতা সৌমেন পাল। নির্দেশনায় বিল্বদল চট্টোপাধ্যায়। ‘পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাডেমী’র আর্থিক সহায়তায় ‘বহমান’ মঞ্চস্থ হয়।
মহাকাব্যের উপেক্ষিত এক অধ্যায়ের মঞ্চায়ন হল এই নাটকে। আপাতদৃষ্টিতে মহাকাব্যের গৌণ চরিত্র সত্যবতীকে এই নাটকে দেখা যায় মুখ্য ভূমিকায়। এই ‘বহমান’ নাটকে মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের মূল কারণ অনুসন্ধান করা হয়। সত্যবতীর কপটতা, ধূর্ততায় ভ্রাতৃহত্যার ক্ষেত্র তৈরি হয় নাটকে। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও নিজের উদ্দেশ্য পূরণে সত্যবতী নানান কৌশল ও নির্মম পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। মহাভারতের এই কাহিনিকেই বর্তমান সময়োপযোগী করে উপস্থাপন করল কালিন্দী নাট্যসৃজন। এখানেই সফল নির্দেশক।
বিল্বদল চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, রাজনৈতিক নেতারা আইন মেনে চলার ব্যাপারে খুবই অনাগ্রাহী। মহাভারতের সত্যবতীও কখনও সমাজের নিয়ম মেনে চলতেন না। তাঁর ধ্যানজ্ঞান ছিল সিংহাসন। তিনি নানান কৌশলের দ্বারা ক্ষমতা ভোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি আর্য রাজবংশকে শাসন করার জন্য সব কিছু করেছিলেন।”
বিল্বদলবাবুর মতে, বর্তমানকালের রাজনৈতিক নেতাদের আচরণ নতুন কিছু নয়। মহাভারতের সময়েও রাজনৈতিক নেতাদের এই আচরণ সাধারণ মানুষ দেখেছে। এই ভাবনাই তাঁকে ‘বহমান’ মঞ্চায়নে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
এই নাটকে দুই বয়সের সত্যবতীকে আমরা দেখি। ছোটো সত্যবতী চরিত্রে অভিনয় করেন আম্রপালী মিত্র এবং বড়ো সত্যবতী চরিত্রে মীনাক্ষী মুখার্জি। দু’জনের অভিনয়ই দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়।
এ ছাড়াও দাশরাজ চরিত্রে বিল্বদল চট্টোপাধ্যায়, ভীষ্ম চরিত্রে অরূপ দত্ত, ব্যাসদেব চরিত্রে রণদীপ নন্দী, দূর্যোধনের ভূমিকায় প্রতাপ মণ্ডল, অম্বিকার ভূমিকায় জুঁই বাগচী, কুন্তীর চরিত্রে শর্মিষ্ঠা বোসের অভিনয় ছিল বেশ সাবলীল। এ ছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেন অচিন্ত্যকুমার মজুমদার, অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমন চক্রবর্তী প্রমুখ। মুরারী রায়চৌধুরীর আবহ এ নাটকে যোগ্য সংগত করেছে।
আরও পড়ুন
মন ছুঁয়ে গেল চণ্ডীতলা প্রম্পটার-এর নাটক ‘মুক্তিসূর্য ক্ষুদিরাম’