নয়াদিল্লি: জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আবার বাম ঐক্যের জয়জয়কার। চারটি মূল পদেই জয়ী হল বাম ঐক্যফ্রন্ট — সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক— সবক’টি পদই তাদের দখলে গিয়েছে।
গত বছর একটি পদে জয়ী হয়েছিল বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। সেই পদটি হল যৌথ সম্পাদকের পদ।
সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন বাম ঐক্যের প্রার্থী অদিতি মিশ্র। অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (AISA) সদস্য অদিতি ১,৮৬১ ভোট পেয়ে এবিভিপি-র (ABVP) বিকাশ পটেলকে ৪১৪ ভোটে পরাজিত করেন। বিকাশ পান ১,৪৪৭ ভোট।
সহ-সভাপতি পদে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন কিঝাকুট গোপিকা বাবু। তিনি ২,৯৬৬ ভোট পেয়ে এবিভিপি প্রার্থী তনিয়া কুমারিকে ১,২৩৬ ভোটে হারান — যা এই নির্বাচনের সর্বোচ্চ ব্যবধান।
সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় সাধারণ সম্পাদক পদে। বাম ঐক্যের সুনীল যাদব ১,৯১৫ ভোট পেয়ে এবিভিপি-র রাজেশ্বর কান্ত দুবেকে মাত্র ৭৪ ভোটে পরাজিত করেন।
যুগ্ম সম্পাদক পদে জয় পান বাম ঐক্যের দানিশ আলি। তিনি ১,৯৯১ ভোট পেয়ে এবিভিপির অনুভব দামারাকে (১,৭৬২ ভোট) হারান।
এই বছর মোট ২০ জন প্রার্থী চারটি কেন্দ্রীয় পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এনএসইউআই (NSUI) তেমন ভালো ফল করতে পারেনি।
প্রচারপর্বে ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি নানা ইস্যুতে উত্তপ্ত ছিল ক্যাম্পাস — যেমন হোস্টেলের সংকট, ফি বৃদ্ধি, মহিলাদের নিরাপত্তা, প্রাইভেটাইজেশন বিরোধিতা ইত্যাদি। বাম দলগুলি উচ্চশিক্ষার বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন রক্ষার ইস্যুতে জোর দেয়, অন্য দিকে এবিভিপি জাতীয়তাবাদ ও উন্নয়নের বার্তা তুলে ধরে প্রচার চালায়।
এ ছাড়াও গাজায় ফিলিস্তিন সংঘাত ও লাদাখের কর্মী সোনম ওয়াংচুকের গ্রেফতার প্রসঙ্গও ছাত্রদের মধ্যে আলোচনায় আসে।
জেএনইউ-র এই ফলাফল আবার প্রমাণ করল, দিল্লির এই ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও বাম রাজনীতির প্রভাব অটুট।
এবিভিপির কাছে বড়ো ধাক্কা
জেএনইউ-এর ছাত্রসংসদ নির্বাচনে এবারে বড় ধাক্কা খেল এবিভিপি। গত বছর যৌথ সম্পাদক পদে বৈভব মীনার জয়ের মাধ্যমে এক দশক পরে কেন্দ্রীয় প্যানেলে ফিরে এসেছিল এবিভিপি। কিন্তু এ বছরের ফলাফল সেই পুনরুজ্জীবনে ব্রেক টেনে দিল।
বাম ঐক্য (Left Unity) জোট—অর্থাৎ অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (AISA), স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (SFI), এবং ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস ফ্রন্ট (DSF)—প্রায় সবক’টি পদেই বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেছে। এই ফলাফলে ফের একবার জেএনইউ ক্যাম্পাসে তাদের ঐতিহ্যবাহী আধিপত্য প্রমাণিত হল।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সৌরভ শর্মার জয় এবিভিপির জন্য ১৪ বছরের খরা ভেঙেছিল। তারও আগে, ২০০০–০১ শিক্ষাবর্ষে সন্দীপ মহাপাত্র ছিলেন এবিভিপির একমাত্র সভাপতি, যিনি বাম প্রভাব ভেদ করতে পেরেছিলেন।


