নয়াদিল্লি: বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) লোকসভার কক্ষে প্রবেশ করে যে দুই যুবক হলুদ ধোঁয়া বের করার ক্যানিস্টার খুলেছিলেন, তাঁদের কাছে বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার অনুমোদিত প্রবেশপত্র ছিল। কে এই প্রতাপ সিমহা?
বহিরাগতদের কেন লোকসভার পাস?
২০০১ সালের সংসদ হামলার বার্ষিকীতে একটি বড়সড় নিরাপত্তা গাফিলতি ঘটে লোকসভায়। বুধবার দুই যুবক পাবলিক গ্যালারি থেকে লোকসভার চেম্বারে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং ক্যানিস্টার খুলেছিলেন যেখান থেকে একটি হলুদ রঙের ধোঁয়া নির্গত হয়। এই ঘটনা সাংসদদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। ঘটনার পরপরই অধিবেশন মুলতবি করা হয়। লোকসভার ভিতরে তাণ্ডব চালানো দুই যুবক, সাগর শর্মা, ডি মনোরঞ্জন এবং বাইরে থেকে নীলম নামের এক তরুণী এবং অমল সিনহা নামের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে জানা যায়, ওই দুই ব্যক্তি কর্নাটকের মাইসুরুর সাংসদ প্রতাপ সিমহার রেফারেন্সে জারি করা ভিজিটর পাস নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেছিলেন।
জানা যায়, বুধবার লোকসভায় ওই ঘটনার পর স্পিকার ওম বিড়লার কাছে যান প্রতাপ। সেখানেই তিনি যা বলার বলে আসেন। প্রতাপের বক্তব্য, সাগর নামের ওই যুবকের বাবা শঙ্করলাল শর্মা তাঁর পরিচিত। প্রতাপের কেন্দ্র মাইসুরুতেই তিনি থাকেন। শঙ্করই বার বার অনুরোধ করেছিলেন, তাঁর পুত্র সাগরকে নতুন সংসদ ভবনটি দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। দীর্ঘ দিন ধরে সেই ‘পাস’ জোগাড় করার জন্য প্রতাপের দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন শঙ্কর। স্পিকারের কাছে বিজেপি সাংসদ জানিয়েছেন, অনুপ্রবেশকারী সাগরের বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু তথ্য তাঁর কাছে নেই।
কে এই প্রতাপ সিমহা?
মাইসুরু-কোডগু আসনের লোকসভা সাংসদ প্রতাপ সিমহা। তিনি মাইসুরুর একজন জনপ্রিয় বিজেপি নেতা এবং ২০১৪ এবং ২০১৯, দু’টি লোকসভা ভোটেই বিজেপি-র টিকিটে জয়ী হন। প্রতাপ সিমহা প্রথমে কন্নড় প্রভা পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন, তারপর তিনি রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি কর্নাটক বিজেপির যুব শাখার সভাপতিও ছিলেন। ২০১৪ সালেই তিনি প্রথম বারের মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৫ সালে, ভারতীয় প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হন প্রতাপ।
বলে রাখা ভালো, প্রতাপ সিংহ হিন্দুত্বের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তিনি কর্নাটকে টিপু সুলতানের জন্মদিন পালন নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁর মতে, টিপু সুলতান শুধুমাত্র ইসলামপন্থীদের জন্য আদর্শ হতে পারেন। এই বছরের শুরুর দিকে, প্রতাপ সিমহা পশুপ্রেমীদের বিরুদ্ধেও একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অনেকেই কুকুর ভালোবাসেন। কিন্তু, যখন তাঁদের বাচ্চাদের কামড়ায়, তখনই পথ কুকুরের বিপদ বুঝতে পারেন তাঁরা।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে স্থানীয় স্তরে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি। এক বার তিনি বলেছিলেন, মসজিদের মতো দেখতে প্রতিটি বাসস্ট্যান্ড ভেঙে ফেলা হবে। গম্বুজ আকৃতির বাসস্ট্যান্ড তৈরি করায় তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন।
আরও পড়ুন: নিরাপত্তায় বড়সড় খামতি, লোকসভায় ধোঁয়া-তাণ্ডব! কী ভাবে ভিতরে ঢুকলেন ২ বহিরাগত