নয়াদিল্লি: ২০১৬-য় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের নোটবন্দির সিদ্ধান্তকে বৈধ আখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সংবিধানের বিশেষ ধারা মোতাবেক সরকার নোটবন্দি করতে পারে এবং এই সিদ্ধান্তে কোনো ভুল ছিল না বলে সোমবার জানিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
কাজের কাজ কিছু হয়েছে কি?
কেন্দ্রের নোটবন্দির ফলাফল “বেশ মিশ্র” বলে দাবি করেছেন নীতি আয়োগের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার। এনডিটিভি-র কাছে একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “কারণ আমাদের অর্থনীতির প্রকৃতি, আমাদের অর্থনীতিতে অসংগঠিত ক্ষেত্র, আমাদের অর্থনীতির একটি বড়ো অংশ নগদ অর্থে চলছে, নির্মাণ ইত্যাদির মতো বড়ো ক্ষেত্রগুলি নগদ অর্থনীতি বা কালো টাকা ইত্যাদিকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে আমি জানি না। এটা অর্জিত হবে বলেও মনে করি না”। একই সঙ্গে তিনি বলেন, নোটবন্দি করে যা লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা বলা হয়েছিল, তার সফলতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। একমাত্র ডিজিটাইজেশন ছাড়া আর অন্য কিছুই চোখে পড়ছে না তাঁর।
বিপক্ষ মত বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের এই রায় নিয়ে বিতর্ক চলছে বিভিন্ন মহলে। এমনকী চার বিচারপতি পক্ষেই মত দিলেও নোট বাতিল ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের একমাত্র সদস্য হিসেবে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন বিচারপতি বি ভি নাগরত্না। তাঁর মতে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী, সরকারের দিক থেকে নয়, নোট বাতিলের সুপারিশ স্বাধীন ভাবে আসা উচিত ছিল আরবিআইয়ের সেন্ট্রাল বোর্ডের তরফে। যদিও নিয়মের উল্টো পথে হেঁটে নোট বাতিল নিয়ে এগজিকিউটিভ অর্ডার জারি হয়েছিল। আরবিআই স্বাধীনভাবে মত দিয়েছে, তেমনটা ঘটেনি। আরবিআই আইনের ২৬(২) ধারায়, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মধ্যে নোট বাতিল নিয়ে আলোচনার এই প্রক্রিয়াকে আরবিআইয়ের সুপারিশ বলা যায় না। সেই কারণেই নোট বাতিলের প্রক্রিয়াকে ‘বেআইনি’ বলে রায় দিয়েছেন বিচারপতি নাগরত্না।
বাজারে বাড়ছে নগদ
বাজারে নগদ লেনদেনের পরিমাণ কমানোই ছিল নোটবন্দির অন্যতম উদ্দেশ্য। ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোও ছিল নোটবন্দির উদ্দেশ্য। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, নোটবন্দির পর বাজারে নগদের জোগান বেড়েছে অনেকটাই। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর (নোটবন্দির চার দিন আগে) ভারতে জনতার হাতে নগদ ছিল ১৭.৭ লক্ষ কোটি টাকা। আর গত বছরের ২১ অক্টোবরে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩০.৮৮ লক্ষ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, আরবিআই-এর তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাজারে নগদের পরিমাণ পৌঁছেছে ৩২.৪২ লক্ষ কোটি টাকায়। তবে নোট বাতিলের পরপরই,২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি নগদের পরিমাণ প্রায় ৯ লক্ষ কোটি টাকার সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছিল। উল্লেখযোগ্য ভাবে, গত বছরের মে মাসে প্রকাশিত আরবিআই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে ৫০০ টাকার জাল নোটে ১০১.৯ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। ২০০০ টাকার জাল নোটের বৃদ্ধি ৫৪.১৬ শতাংশ। এ ছাড়াও ৫০০, ২০০০ টাকার জাল নোট এবং ১০, ২০, ২০০ টাকার জাল নোটের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি।
আরও পড়ুন: নোটবন্দি নিয়ে রায় সুপ্রিম কোর্টের, কী বলল সর্বোচ্চ আদালত