খবর অনলাইন ডেস্ক: ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, গত ৪০ বছরে অসমে সোয়া কোটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ করেছে। হিমন্তের এই বক্তব্যকে ঘিরে তাঁর রাজ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, এই প্রবণতা রুখতে তাঁর সরকার কী করল।
অসমে তিন দফার ভোট শেষ হয়েছে ৭ মে। তার পরই মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১০ মে থেকে ঝাড়খণ্ডে বিজেপি তথা এনডিএ-র ভোটের প্রচার চলছে। সেই উপলক্ষ্যেই গত বুধবার তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
কী বললেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, অনুপ্রবেশ নিয়ে অসম আর বাংলা যে ভুল করেছে, ঝাড়খণ্ডের তা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে অসমে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ হবে। এটা শুরু হয়েছিল কংগ্রেসের আমলে। এটা আমার দুর্ভাগ্য যে এই অনুপ্রবেশ আমি আটকাতে পারছি না। ঝাড়খণ্ড যেন এই জায়গায় না পৌঁছোয়।”
তিনি বলেন, “অসমিয়ারা তাঁদের পরিচয়, তাঁদের অভিন্নতা হারিয়ে ফেলছেন। এই অনুপ্রবেশ ক্যানসারের মতো। এটা আপনাদের গিলে খেয়ে ফেলবে। যখনই কাউকে দেখবেন…আইন মোতাবেক অনুপ্রবেশকারীর পা ভেঙে দেবেন। এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটা ঝাড়খণ্ডের ভবিষ্যৎ।”
ঝাড়খণ্ডে গিয়ে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা অসমের অনুপ্রবেশ পরিস্থিতি নিয়ে একটা ভয়ানক ভীতি-উৎপাদক ছবি এঁকেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, ঝাড়খণ্ডে গিয়ে তিনি যে বিষয়টা তুললেন সেই বিষয়টি অসমে নির্বাচনী প্রচারে তুললেন না কেন?
প্রশ্ন উঠছে হিমন্তের বক্তব্যে
অনপ্রবেশ অসমে বরাবরই একটি সংবেদনশীল বিষয়। গত শতকের আশির দশকে এই নিয়ে অসমে বিদেশি খেদাও আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে ‘অসম চুক্তি’ সম্পাদনের মাধ্যমে সেই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। সেই চুক্তিতে বলা হয়, যে সব বিদেশি অবৈধ ভাবে অসমে বাস করছেন তাঁদের চিহ্নিত করা হবে, আটক করা হবে এবং তাড়ানো হবে।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বক্তব্যকে ঘিরে তাঁর রাজ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। প্রাক্তন এনআরসি কো-অর্ডিনেটর হিতেশ দেব শর্মা ‘দ্য টেলিগ্রাফ’কে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী ‘স্বীকার করেছেন’ অসমে সোয়া কোটি বাংলাদেশি আছেন।
হিতেশ দেব শর্মা বলেন, “২০১৯-এ যে এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস্) প্রকাশিত হয়, তাতে মাত্র ১৯ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী বাদ পড়েছেন। তার মানে এক কোটিরও বেশি এনআরসি-তে ঢুকে পড়তে পেরেছেন। তা হলে এনআরসি পুনরায় যাচাই করতে চেয়ে তিনি (মুখ্যমন্ত্রী) কেন সুপ্রিম কোর্টে এফিডেভিট জমা দিচ্ছেন না? এনআরসি-র সাপ্লিমেন্টারি তালিকা বেরিয়ে যাওয়ার পর তো পাঁচ বছর কেটে গেল।”
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছিল কংগ্রেসের আমলে। এ প্রসঙ্গে অসম প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভুপেন কুমার বরা প্রশ্ন তুলেছেন, অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা নিয়ে তিনি যখন ‘এতই নিশ্চিত’ তা হলে সেই বিষয় নিয়ে তিনি কী করছিলেন? হিমন্তকে ভুপেনের প্রশ্ন, “আপনি তো ১৫ বছরের কংগ্রেস সরকারের অংশ ছিলেন। এখন ৮ বছরের বিজেপি সরকারে রয়েছেন। প্রশ্ন উঠতে পারে এমন কিছু সংখ্যার কথা ছড়িয়ে না দিয়ে এই ইস্যুতে কী প্রশ্নাতীত ব্যবস্থা নিয়েছেন?”
আরও পড়ুন
জুলাইয়ের মধ্যে প্রথম এলসিএ মার্ক-১এ যুদ্ধবিমান পাবে ভারতীয় বায়ুসেনা, আরও অর্ডার পাচ্ছে হ্যাল