ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত সম্পূর্ণ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে ৬ মাস সময় বাড়ানোর অনুরোধ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবি (SEBI)। সংস্থার এই পদক্ষেপের কড়া নিন্দা করলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
মার্কিন শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ জালিয়াতি এবং শেয়ারে কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে। তার পরে আদানি গ্রুপের সমস্ত কোম্পানির বাজার মূলধনে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় বন্ড। জল গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে সেই ঘটনার তদন্ত করছে সেবি। জানা গিয়েছে, তদন্ত শেষ করার জন্য আদালতের কাছ থেকে বাড়তি সময় চেয়েছে সংস্থা।
কী বলছেন তৃণমূল সাংসদ
মহুয়া মৈত্রের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজেদের প্রিয় ব্যবসায়ীকে রক্ষা করার জন্য তদন্তের মেয়াদ বাড়াতে চাইছে, যাতে প্রকৃত তথ্য গোপন করার জন্য সবচেয়ে বেশি সময় পেতে পারেন আদানি। টুইটারে মহুয়া লেখেন, “এটা একটা কৌতুক। ২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকে তদন্ত হওয়ার কথা, যখন তারা এই সংস্থাকে নিয়ে আমার জুলাইয়ের চিঠির জবাব দিয়েছিল। তবে প্রাথমিক ভাবে তারা যদি অভিযোগের সত্যতা খুঁজেও পায় (আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই), তা হলেও নিজেদের প্রিয় ব্যবসায়ীকে রক্ষা করতে চাইবে। যে কারণে আরও ৬ মাস সময় চায়। যাতে তিনি (আদানি) নিজেকে আড়াল করতে সবচেয়ে বেশি সময় পেতে পারেন।”
উল্লেখ্য, সেবিকে দু’মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। রিপোর্ট অনুসারে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া ২ মে সুপ্রিম কোর্টে একটি স্ট্যাটাস রিপোর্ট দাখিল করার কথা। কিন্তু এরই মধ্যে সেবির তরফে আরও কিছুটা সময় চাওয়া হল। শনিবার সেবি আরও ৬ মাস সময়ের জন্য আবেদন জানিয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। সংস্থার মতে, এই বিষয়টি এতই জটিল যে মাত্র দু’মাসের মধ্যে এর তদন্ত সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। আরও কিছুটা সময় দরকার। ৬ মাস পরে সেবি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে পারবে সুপ্রিম কোর্টে।
হিন্ডেনবার্গ-আদানি টানাপোড়েন
নিউইয়র্ক-ভিত্তিক হিন্ডেনবার্গ জানুয়ারিতে ভারতের আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলে৷ তবে আদানি গোষ্ঠী শুরু থেকে বারবার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর শুধু আদানি গোষ্ঠী নয়, পুরো শেয়ার বাজারে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। কোটি কোটি টাকা খোয়াতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে রাজনীতিও।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ জানিয়েছিল, বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা রয়েছে আদানি গোষ্ঠীর ঘাড়ে। তাছাড়া তাদের শেয়ারের ভ্যালুয়েশনও মাত্রাতিরিক্ত। ফলে যে কোনো সময়ে ভেঙে পড়তে পারে তাসের ঘর। মার্কিন সংস্থার ভয়ানক রিপোর্টের পরেই টলে যায় আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার। সেই ঘটনায় আদানি গোষ্ঠী প্রকৃতপক্ষে সেবি-র নিয়মের ১৯ নম্বর ধারার কোনো ভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে কি না এবং শেয়ারের দামে কোনো ভাবে কারচুপি হয়েছে কি না, সেই সমস্ত বিষয়ে তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। জানা গিয়েছে, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে আদানি গোষ্ঠীর সাতটি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
আরও পড়ুন: রবিবারেও রাজ্য জুড়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস, শিলাবৃষ্টির সতর্কতা