নয়াদিল্লি: ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির একটি বিস্ফোরক হলফনামায়। যেখানে তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি মহুয়াকে ব্যবহার করে লোকসভায় আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কিত প্রশ্ন তুলেছেন সংসদে।
ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র তাঁকে নিজের সংসদ লগইন আইডি দিয়েছিলেন আদানি গোষ্ঠীর বিষয়ে প্রশ্ন তৈরি করার জন্য, যা তিনি মনে করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করার “একমাত্র উপায়”।
তিন পৃষ্ঠার হলফনামায়,মহুয়ার বিরুদ্ধে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের তোলা অভিযোগগুলির মধ্যে কয়েকটি পয়েন্ট স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে মহুয়ার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগের উল্লেখ নেই। আদানি গ্রুপকে বিপাকে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি যে হীরানন্দানি গোষ্ঠীর পক্ষে ৫০টিরও বেশি সংসদীয় প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তারই উল্লেখ নেই।
হলফনামায় বিস্ফোরক দাবি হীরানন্দানির
হীরানন্দানির হলফনামায় বিজেপির অনেক অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে। যেমন, মহুয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপহার নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তাতেও মান্যতা দেওয়া হয়েছে হীরানন্দানির হলফানামায়। বলা হয়েছে, মাঝে মাঝেই নানা আব্দার করা হত। দাবি থাকত বিলাসবহুল সামগ্রী, দিল্লির সরকারি বাসভবন সংস্কার করিয়ে দেওয়া, ছুটি কাটানো বা বেড়ানোর খরচের জন্যও দাবি করা হত। সেটা যেমন দেশের বিভিন্ন জায়গায়, তেমন বিদেশেও।
হীরানন্দানি আরও জানিয়েছেন, মহুয়ার সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় ২০১৭ সালে। বেঙ্গল বিজনেস সামিটে যোগ দিতে তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। পরবর্তীকালে মহুয়ার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। মনে হতে থাকে যে মহুয়ার মাধ্যমে তিনি বিরোধী দলশাসিত রাজ্যগুলিতে কাজের সুযোগ পেতে পারেন। কারণ শ্রী গান্ধী, শশী তারুর, পিনাকি মিশ্রর সঙ্গে মহুয়ার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
বিজেপি সাংসদকে এথিক্স কমিটির ডাক
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণের জন্য় আগামী ২৬ অক্টোবর তলব করা হয়েছে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে ও আইনজীবী অনন্ত দেহাদরিকেও। এথিক্স কমিটির সামনে তাঁদের সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে দাবি করেছিলেন, টাকার বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করেন তৃণমূল সাংসদ। মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজের দাবি জানান তিনি। সংসদের এথিক্স কমিটিতে পৌঁছায় বিষয়টি। সেই মামলাতেই তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণের জন্য় নিশিকান্ত দুবেকে তলব করা হয়েছে। একইসঙ্গে তলব করা হয়েছে আইনজীবী অনন্ত দোহাদরিকেও।
তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির থেকে টাকা নিয়ে উপহার ও টাকা নিয়ে লোকসভায় বক্তব্য রেখেছেন মহুয়া মৈত্র। নিশিকান্তের তোলা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এথিক্স কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। আবার আইনজীবী অনন্ত দেহাদরি মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সিবিআই প্রধানকে চিঠি দিয়েছেন। মহুয়া এবং হিরানন্দানির মধ্যে ঘুষের আদান-প্রদানের ‘অকাট্য’ প্রমাণ হিসেবে দেহাদরির চিঠিটি তুলে ধরেছেন বিজেপি সাংসদ।
ঘুষের অভিযোগ, অস্বীকার মহুয়ার
মহুয়া মৈত্রকে সাসপেন্ড করার দাবিতে সরব হয়েছেন নিশিকান্ত দুবে। তাঁর দাবি ঘুষ নিয়ে ব্যবসায়ী দর্শনে হিরানন্দানির হয়ে প্রশ্ন করতেন মহুয়া মৈত্র। আদানিকে কোণঠাসা করতে তিনি এই পথ নিয়েছিলেন। এমপি নিশিকান্ত দুবের দাবি ছিল, মহুয়া মৈত্র যে ৬১টি প্রশ্ন করেছেন তার মধ্যে ৫০টি প্রশ্ন ওই ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষার জন্য করা হয়েছে। আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে থাকা ব্যবসায়ী গ্রুপ হীরানন্দানির স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে।
উল্টো দিকে, একযোগে বিজেপি, আদানি গোষ্ঠী এবং সিবিআইকে আক্রমণ করেছিলেন মহুয়া। সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আদানি গোষ্ঠী যদি আমাকে চুপ করানোর জন্য বা আমাকে টেনে নীচে নামানোর জন্য সঙ্ঘবাদী আর ভুয়ো ডিগ্রিওয়ালাদের মিথ্যা দলিলে বিশ্বাস করবে বলে ঠিক করে থাকে, তবে আমি বলব, আপনাদের সময় নষ্ট করবেন না, বরং আইনজীবীদের ভালো কাজে ব্যবহার করুন।’’
হীরানন্দানির হলফনামা নস্যাৎ করে দিয়েছেন মহুয়া। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লিখেছেন, “দর্শন হীরানন্দানিকে সিবিআই বা এথিক্স কমিটি বা প্রকৃতপক্ষে এখনও কোনও তদন্তকারী সংস্থা দ্বারা তলব করা হয়নি। তাসত্ত্বেও তিনি কারও কাছে এই হলফনামা দিয়েছেন”।
আরও পড়ুন: ‘মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে…,’ প্যালেস্তিনীয় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা প্রধানমন্ত্রী মোদীর