নয়াদিল্লি: হরিদ্বারের হর কি পৌড়ী ঘাট ছাড়লেন প্রতিবাদী কুস্তিগিররা। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের গ্রেফতারির দাবিতে নিজেদের পদক বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। ঘোষণা মতোই গঙ্গায় পদক ভাসাতে গিয়েও সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখলেন কুস্তিগিরেরা। কেন্দ্রকে পাঁচ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিলেন তাঁরা। এই সময়ের মধ্যে ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার না করা হলে গঙ্গায় পদক ভাসাবেন সাক্ষী মালিকরা।
কুস্তিগিররা হর কি পৌড়ী ঘাটে পৌঁছাতেই ভিড় জমতে শুরু করে সাধারণ মানুষের। কুস্তিগিররা যাতে পদক বিসর্জন না দেন, তার জন্য স্লোগান তুলতে শুরু করে সাধারণ মানুষ। কুস্তিগিরদের কাছে এসে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন বেশ কয়েক জন সাধু। অনুরোধ জানান, কুস্তিগিরেরা যেন পদক গঙ্গায় বিসর্জন না দেন। সেখানে উপস্থিত বেশ কয়েক জন কৃষক নেতাও একই অনুরোধ জানান। প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের সিদ্ধান্ত বদলে অন্যতম ভূমিকা নেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত।
ক্রীড়াবিদরা নিজেদের সংকল্পে অটল থাকলে, ভারত দুটি অলিম্পিক পদক এবং কয়েকটি কমনওয়েলথ গেমস এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক হারাতে পারে। সাক্ষী মালিক কমনওয়েলথ গেমসে একটি অলিম্পিক ব্রোঞ্জ এবং তিনটি পদক জিতেছেন। ভিনেশ ফোগত দুটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক, এশিয়াডে দুটি পদক এবং তিনটি কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিতেছেন। বজরং পুনিয়া একটি অলিম্পিক ব্রোঞ্জ, চারটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদক, দুটি এশিয়ান গেমস এবং তিনটি কমনওয়েলথ গেমস পদক জিতেছেন।
রেসলিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি এবং বিজেপি সাংসদ ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে লাগাতার প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতের শীর্ষ কুস্তিগিররা। মঙ্গলবার গঙ্গায় সমস্ত পদক বিসর্জন দিতে চলেছেন। যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠার পরেও ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই প্রতিবাদ জানাতেই দেশের হয়ে জেতা পদক গঙ্গায় বিসর্জন দিতে চান কুস্তিগিররা।
সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগট, বজরং পুনিয়ার মতো কুস্তিগিররা জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় হরিদ্বারে পদক বিসর্জন দেবেন তাঁরা। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন তাঁরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা না হওয়ার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত কুস্তিগিরদের। আমরণ অনশনেও বসবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
কুস্তিগিরদের বিবৃতি
প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই পদকগুলি আমাদের জীবন, আমাদের আত্মা। আজ এগুলি গঙ্গায় নিক্ষেপ করার পরে বেঁচে থাকার কোনো কারণ থাকবে না। তাই, আমরা এর পরে ইন্ডিয়া গেটে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অনশন করব।”
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কুস্তিগিররা আরও বলেছেন, “তিনি আমাদেরকে আমাদের কন্যা বলেন, কিন্তু তিনি একবারও কুস্তিগিরদের জন্য নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। বরং তিনি ‘অত্যাচারী’ (ব্রিজভূষণ)-কে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন”।
প্রসঙ্গত, নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের দিনেই কুস্তিগিরদের আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল দিল্লির যন্তর মন্তর চত্বর। ভিনেশ ফোগত, বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক-সহ ৩ কুস্তিগির এবং ১০৯ জন আন্দোলনকারীদের আটক করে দিল্লি পুলিশ। পরে মহিলাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক পদকজয়ী কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ানো, পুলিশকে নিগ্রহ, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। খালি করে দেওয়া হয়েছে যন্তর মন্তর চত্বর।
আরও পড়ুন: পঞ্চম বার ট্রফি জয় চেন্নাইয়ের, গুজরাতের স্বপ্নভঙ্গ