সীমান্তের কাছাকাছি বাগানে খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকরভাবে পাওয়া গিয়েছে পুরনো বাঙ্কার এবং নিষিদ্ধ কাশির সিরাপের বিশাল মজুত। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া সুধারঞ্জন লাহিড়ী মহাবিদ্যালয়ের কাছে বিএসএফের অভিযান চালিয়ে অন্তত ১.৫ কোটি টাকার কাশির সিরাপ উদ্ধার করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এগুলি বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে মজুত রাখা হয়েছিল।
দুই পুরনো বাঙ্কার, পাচারের বড় পরিকল্পনা
বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বিএসএফ দু’বিঘা জমি জুড়ে তল্লাশি শুরু করে। জমিটির মালিকের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে একটি বড় লোহার বাঙ্কার খুঁজে পাওয়া যায়, যা প্রায় ১০ ফুট চওড়া, ১৫ ফুট লম্বা এবং ৮ ফুট উঁচু। পরে আরও দুটি তুলনামূলক ছোট বাঙ্কার উদ্ধার করা হয়।
বাঙ্কারগুলো খুলতেই বেরিয়ে আসে কয়েক হাজার বোতল নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ। পাচারকারীরা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে সিরাপগুলো পাচারের পরিকল্পনা করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিএসএফ ও পুলিশের যৌথ অভিযান
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিএসএফ ৩২ ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ড্যান্ট সুজিত কুমার বলেন, “এ পর্যন্ত যা উদ্ধার হয়েছে তা ৫ গাড়ি বোঝাই হতে পারে। আরও তল্লাশি চলছে।” এদিকে, কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার ডিএসপি শিল্পী পাল জানিয়েছেন, “নিষিদ্ধ কাশির সিরাপের মূল্য কোটি টাকার বেশি। পাচার রোধে তদন্ত চলছে।”
কী এই নিষিদ্ধ কাশির ওষুধ
নিষিদ্ধ কাশির ওষুধ, যেমন ফেনসিডিল, মূলত কাশি নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হলেও, এতে থাকা কোডিন ফসফেটের মতো উপাদান নেশা সৃষ্টিতে সক্ষম। কোডিন ফসফেট একটি মাদকজাতীয় উপাদান, যা সেবনের পর মস্তিষ্কে উত্তেজনা ও সুখানুভূতি সৃষ্টি করে। ফলে, অনেকেই এই সিরাপকে নেশার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে। সাধারণত, নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে এই সিরাপ সেবন করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাশির সিরাপ পাচারের ইতিহাস
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ পাচারের প্রবণতা রয়েছে। বাংলাদেশে ফেনসিডিল ও স্কাফের মতো সিরাপ নিষিদ্ধ হওয়ায়, চোরাকারবারীরা ভারত থেকে এই সিরাপগুলো বাংলাদেশে পাচার করে থাকে। সম্প্রতি, মালদার গাজোল থানা এলাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের কাশির সিরাপ বাজেয়াপ্ত করা হয়, যা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচারের পরিকল্পনা ছিল।
এছাড়া, শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকায়ও নিষিদ্ধ কাশির সিরাপের চক্র সক্রিয় রয়েছে। মালদহ, গঙ্গারামপুরের দিক থেকে কাশির সিরাপ শিলিগুড়িতে আসছে এবং সেখান থেকে বিভিন্ন উপায়ে পাচার করা হচ্ছে। বাস, গাড়ি, ট্রেন এমনকি কার্টনের মধ্যে লুকিয়ে এই সিরাপ পরিবহন করা হয়।
নতুন নতুন পদ্ধতিতে পাচার
সীমান্ত এলাকায় নিষিদ্ধ কাশির সিরাপের পাচার রোধে বিএসএফ ও পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ সিরাপ উদ্ধার এবং পাচারকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তবে, পাচারকারীরা নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করায় তাদের আটকানো বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন বিএসএফ কর্তারা।