কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য-কে সরিয়ে দিল নবান্ন। কালীপুজোর রাতে শব্দবাজি বন্ধ করতে গিয়ে লাঠিপেটা করার অভিযোগ ওঠার পরই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে বদলি করে পাঠানো হয়েছে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর (SAP) থার্ড ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট পদে।
তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সন্দীপ কাররা, যিনি এতদিন আসানসোল দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসি (পশ্চিম) পদে ছিলেন। তাঁর জায়গায় নিযুক্ত হয়েছেন সোনওয়ানে কুলদীপ সুরেশ, যিনি রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (IB) সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন।
দীপাবলির রাতে কী ঘটেছিল
সূত্রের খবর, দীপাবলির রাতে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগে শিশু, মহিলা-সহ কয়েকজনকে মারধর করেন এসপি দ্যুতিমান ভট্টাচার্য।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি— “হাফ প্যান্ট, স্যান্ডো গেঞ্জি ও মাথায় ফেট্টি বেঁধে তিনি নিজে বেরিয়ে আসেন বাংলো থেকে। হাতে ডান্ডা নিয়ে মহিলাদের ও শিশুদেরও মারধর করেন।”
তবে দ্যুতিমান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “রাত একটা পর্যন্ত শব্দবাজি ফেটেছে। আমার স্ত্রী গুনে দেখেছেন— একটানা ৬০টা বাজি ফেটেছে। আমার কুকুরগুলো ভয় পেয়ে চিৎকার করছিল। নিরাপত্তারক্ষীরা গিয়ে মানুষকে বাধা দিয়েছিলেন, কিন্তু মারধরের অভিযোগ মিথ্যে।”

বিক্ষোভ ও গ্রেফতার
এই ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পরের দিন স্থানীয় বাসিন্দারা রেলঘুমটি এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়।
বিক্ষোভের ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করে কোচবিহার পুলিশ। এর মধ্যে তিন জন জামিনে মুক্তি পান, পাঁচ জন পুলিশি হেফাজতে এবং দু’জন জেল হেফাজতে যান। তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, খুনের চেষ্টা এবং অবৈধ জমায়েতের অভিযোগে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
নবান্নের অবস্থান ও বিতর্কের প্রতিক্রিয়া
নবান্ন জানিয়েছে, এটি একটি “রুটিন বদলি”। তবে প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, দীপাবলির রাতের ঘটনাই এই বদলির মূল কারণ।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সামাজিক মাধ্যমে দ্যুতিমানকে তীব্র সমালোচনা করে লিখেছিলেন, “একজন অপ্রকৃতিস্থ এসপি মহিলা ও শিশুদের মারধর করেছেন।” এই মন্তব্যের পর ঘটনাটি রাজনৈতিক মাত্রা পায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ ও এসপির বক্তব্য
কোচবিহার শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রেলঘুমটি এলাকায় এসপি-র বাংলো। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার সময় কোনো মহিলা পুলিশ উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি মহিলাদের গায়েও হাত তোলা হয়।
অন্যদিকে দ্যুতিমান বলেন, “আমি বিশ্বাস করেছিলাম রাত বাড়লে বাজি থামবে, কিন্তু তা হয়নি। আমি নিজে কাউকে মারিনি। শুধু আমার নিরাপত্তারক্ষীরা গিয়ে মানুষকে অনুরোধ করেছিলেন।”
📰 আমাদের পাশে থাকুন
নিরপেক্ষ ও সাহসী সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে খবর অনলাইন আপনার সহায়তা প্রয়োজন। আপনার ছোট্ট অনুদান আমাদের সত্য প্রকাশের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
💠 সহায়তা করুন / Support Us

