নিজস্ব প্রতিনিধি: সমাবেশের অনেক দিন আগে থেকেই এসএফআই আর ডিওয়াইএফআইয়ের তরফ থেকে যে ভাবে প্রচার হচ্ছিল তাতে মনে হচ্ছিল এই ব্রিগেড ভরানোর চাবিকাঠি যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। রবিবার ব্রিগেড সমাবেশ প্রমাণ করে দিল, অনুমানটা নিছক মিথ্যা ছিল না। মীনাক্ষীই যে সিপিএমের ভবিষ্যতের মুখ তারও যেন ইঙ্গিত পাওয়া গেল এই সমাবেশে।
সিপিএম মুখে যতই বলুক রাজনীতিতে মুখ বড়ো বিষয় নয়, মুখের অভাব তারা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পর এমন মুখ পাওয়া যাচ্ছে না যিনি ভবিষ্যতের কান্ডারি হতে পারেন। সেই অভাব বোধহয় এ বার ঘুচতে চলেছে।
বক্তা হিসেবে মীনাক্ষীর নাম ঘোষণা হতেই যে ভাবে উদ্বেল হয়ে উঠল ব্রিগেড, যে ভাবে উচ্ছ্বাসের ঢেউ উঠল, গোটা মাঠে যে ভাবে নানা স্লোগানের কোরাস উঠল, যে স্লোগানের জেরে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতে হল মীনাক্ষীকে, তাতেই বোঝা গেল এ দিন মূলত তাঁর টানেই ব্রিগেড ভরাতে এসেছে জনতা। তার পর মীনাক্ষী শুরু করলেন ‘‘লাল সেলাম’’ বলে। আবার উঠল গণকলরব।
সভা শুরুর অনেক আগেই বহু মানুষ ব্রিগেডে ভিড় জমিয়েছিলেন মীনাক্ষীকে একবারটি দেখতে চেয়ে। তাঁরা বাঁশের ব্যারিকেড টপকে মীনাক্ষীর কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। এক ঝলক তাঁকে দেখতে চেয়েছেন, একবারটি তাঁকে ছুঁতে চেয়েছেন।
শ্রোতা-দর্শক হিসাবে রয়েছেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র প্রমুখ। ছবি: রাজীব বসু
মীনাক্ষী তাঁর ২২ মিনিটের বক্তৃতায় তৃণমূল, বিজেপি দুই দলকেই সমান ভাবে বিঁধেছেন। বাংলা, হিন্দি মিশিয়ে সাবলীল ভাবে বক্তৃতা দিয়েছেন। তাঁর সহজ সরল বক্তব্য বার বার আন্দোলিত করেছে সমাবেশে আসা জনতাকে। নিজের বক্তৃতায় টেনে এনেছেন ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট সিরিজ প্রসঙ্গ। বললেন, ‘‘আমাদের কাছে সিরাজের মতো খেলোয়াড় আছে। টেস্ট খেলতে নামলেও দেড় দিনে খেলা গুটিয়ে দিতে পারি।’’ খেলার খবরকে রাজনীতির ভাষ্যে অনায়াসে মিশিয়ে দিয়েছেন। তবে বক্তৃতার শেষ দিকে নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা উদ্ধৃত করতে গিয়ে লাইন গুলিয়ে ফেলেছিলেন। তার পর নিজেই বলেন, ‘‘ভুলে গেছি।’’ এই স্বীকারোক্তিই তাঁকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।
রবিবার সকাল থেকেই ব্রিগেডে মীনাক্ষীকে দেখা গিয়েছে বিবিধ ভূমিকায়। কখনও বর্ষীয়ান নেতাদের বসার ব্যবস্থার তদারকি করছেন, কখনও বা সভা শুরুর অনেক আগেই ভিড়কে মঞ্চের দু’পাশ থেকে থেকে মাঝমাঠে আনার কাজ করছেন মাইক হাতে। সভার শেষে দেখা গেল সবাইকে নিয়ে নেমে পড়েছেন ব্রিগেড পরিষ্কারে। মাইক হাতে কর্মীদের উদ্দেশে বললেন, ‘‘মাঠ বাঁচাতে, সবুজ বাঁচাতে, আমাদেরই পরিষ্কার করতে হবে।’’
মীনাক্ষী ছাড়াও আরও বক্তা
রবিবার সিপিএম যুবদের ব্রিগেডে বক্তৃতা করেছেন সাত জন। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনেরই ব্রিগেডের মতো মহামঞ্চে প্রথম বক্তৃতা।
এ দিন ব্রিগেড সমাবেশে সভার সভাপতি হিসেবে প্রথম বক্তৃতা করেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা। মুর্শিদাবাদের ধ্রুবজ্যোতি গোটা ইনসাফ যাত্রায় হেঁটেছেন ৫০ দিন ধরে। রবিবার তাঁর বক্তৃতায় বিভিন্ন এলাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
খুব ভালো বক্তৃতা করলেন এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তৃতায় খুব সাবলীল ভাবে টেনে আনলেন ছাত্রদের দাবির সঙ্গে যুবদের দাবির প্রসঙ্গ। একই বিশেষণে বিদ্ধ করলেন তৃণমূল ও বিজেপিকে।
মীনাক্ষীর আবিষ্কর্তা হিসাবে যাঁকে সিপিএমের অন্দরে চিহ্নিত করা হয় ডিওয়াইএফআইয়ের সেই প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক আভাস রায়চৌধুরীর বক্তৃতায় ছিল ধ্রুপদী বাম ঘরানা। তিনি আগেও ব্রিগেডে ভাষণ দিয়েছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আভাস রবিবারের সভায় বলেন, ‘‘ব্রিগেডের ভিড়কে বুথে নিয়ে যেতে হবে।’’ এটাই এখন সিপিএমের আশু সাংগঠনিক কাজ।
এঁরা ছাড়াও এ দিনের সমাবেশে বক্তৃতা করেন ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য, কেরলের যুব নেতা এ রহিম এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
আরও পড়ুন
রবিবার ডিওয়াইএফআই-এর ব্রিগেড সমাবেশ, আগাম শুভেচ্ছা বার্তা বুদ্ধদেবের
বাংলায় মমতা তো মহারাষ্ট্রে উদ্ধব! আসন বণ্টনে বিড়ম্বনা কাটিয়ে উঠতে পারবে কি কংগ্রেস?