Homeভ্রমণভ্রমণ কথাস্থান মাহাত্ম্যে ত্রিবেণী ও সপ্তগ্রামের কথা

স্থান মাহাত্ম্যে ত্রিবেণী ও সপ্তগ্রামের কথা

প্রকাশিত

মুকুট তপাদার: প্রাচীন পূজা রীতি, ভক্তিমার্গ,স্থান মাহাত্ম্য বঙ্গদেশের সংস্কৃতিতে সবসময়ই জাগ্রত চেতনার প্রতিফলন ঘটায় একথা ঠিক, ফলে নতুনভাবে এর কোনও পরিবর্তন হয়নি। বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা অচেনা-অজানা, অদেখা ঐতিহ্য আজো আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে যায়। যার গুরুত্ব শিল্প ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে অপরিসীম। কিন্তু বেশিরভাগই ধ্বংস ও অবহেলার চিহ্ন হিসেবে লোপ পেয়ে যাচ্ছে।

১৫৩০ – ৪০ সালে ‘চৈতন্যভাগবত’ গ্রন্থে সপ্তগ্রামের বর্ণনা পাওয়া যায়। হুগলি তখন বাংলার বাণিজ্যের অন্যতম ঘাঁটি। সরস্বতী নদী ত্রিবেণীর কাছে গঙ্গার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে বেতড়ের (হাওড়া) ওপর দিয়ে বয়ে আবার গঙ্গায় মিশেছে। মহম্মদ-বিন-তুঘলক যখন রাজা ছিলেন সেসময় তাঁর রাজত্বে বাংলার তিনটি শাসনকেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম ছিল সাতগাঁ। বাকি দুটি হল লক্ষণাবতী ও সোনারগাঁ।

Saraswati River
মজে যাওয়া সরস্বতী নদী। ছবি-মুকুট তপাদার

হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, আজ বলবো ত্রিবেণী ও সপ্তগ্রামের গল্প।

সপ্তগ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সরস্বতী নদী। এখানে এলে এই নদীর শেষ অবস্থাটা টের পাওয়া যায়। আজ নদীটি একরকম সরু খালে পরিণত হয়েছে। সরস্বতী নদী পথে একসময়ে আরব, ইরান, চীন দেশ থেকে বণিকেরা বাণিজ্যতরী নিয়ে সপ্তগ্রাম বন্দরে আসতেন।

পশ্চিমবঙ্গের বণিক শ্রেণির বসবাস ছিল এই সপ্তগ্রামে। সপ্তগ্রামের সুবর্ণ বণিক দিবাকর দত্ত নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর সান্নিধ্যে এসে বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেন। নিত্যানন্দ তাঁর নাম দেন ‘উদ্ধরণ’ দত্ত। নিতাইচাঁদের চরণাশ্রয়ে তিনি ‘উদ্ধার’ হলেন বলে নাম হল উদ্ধরণ দত্ত। সপ্তগ্রাম স্টেশনের অদূরেই আজো তাঁর বসতবাটি এখানে এলে দেখা যায়। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাধাবল্লভ মন্দিরে প্রভু নিত্যানন্দ নিজে হাতে একটি মাধবীলতা বৃক্ষ রোপন করেন। প্রত্যেক বছর পৌষমাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে (উদ্ধারণ দত্তের তিরোধান তিথি) তাঁর বসতবাটিতে মহোৎসব পালন করা হয়।

জাফর খাঁ গাজীর মসজিদ।
জাফর খাঁ গাজীর মসজিদ। মুকুট তপাদার

ত্রিবেণীতে গঙ্গার পাড়ে জাফর খাঁর মসজিদ ও সমাধি ইতিহাসের এক অমূল্য নিদর্শন। সুলতান শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের (১৩০১-১৩২২) সময়কার একটি শিলালিপি এই জাফর খাঁর মসজিদ থেকে পাওয়া যায়। এর থেকে জানা যায় যে, সাতগাঁর শাসনকর্তা জাফর খাঁ গাজী একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। তকবৎ – ই – নাসিরীতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে যত মসজিদ আছে এটাই সবচেয়ে প্রাচীন (৬৯৮ হিজরি) সময়কার। মুসলিম শাসনাধীনে ত্রিবেণী ও সপ্তগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন হিন্দু দেব দেবীর মন্দির ধ্বংস হয়। এই অঞ্চলে একইসঙ্গে উড়িষ্যার রাজা মুকুন্দদেব বিস্তার লাভ করেন। তখন হিন্দু সামন্ত রাজাদের ক্ষমতা কমতে থাকে। তিনি উড়িষ্যা থেকে এসে ত্রিবেণীতে তীর্থযাত্রীদের জন্য ঘাট ও একাধিক মন্দির গড়েন।

মসজিদে পাথরের গায়ে হিন্দু দেব দেবী
মসজিদে পাথরের গায়ে হিন্দু দেব দেবী। মুকুট তপাদার

গঙ্গার তীরে জাফর খাঁ র মসজিদের সমাধি গৃহে চারটি দ্বার। প্রত্যেক দ্বারেই হিন্দু ভাস্কর্যের নিদর্শন। দরজার দুপাশে নিচে পাথরের মধ্যে দেবী মূর্তি ও যক্ষ মূর্তি খোদাই করা রয়েছে। মসজিদের পাথরের গায়ে নবগ্রহ মূর্তি, দশাবতার, বিষ্ণুর মূর্তি, ফুলকারি নকশা, লতাপাতা ইত্যাদি খোদাই আছে। জাফর খাঁ এর সমাধি গৃহে যে সব ভাস্কর্যের নিদর্শন রয়েছে তা দেখলে মনে হয় এটি একটি হিন্দু মন্দিরের গর্ভগৃহ ছিল। বৌদ্ধ, জৈন ও ব্রাহ্মণদের এক তীর্থস্থান ছিলো ত্রিবেণী।

সারা বছর ধরে দেশী ও বিদেশি পর্যটকেরা এই জায়গার টানে এখানকার স্থান গুলি ঘুরতে আসে।

তথ্যসূত্র:

হুগলি জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ/ বাঙ্গলার ইতিহাস

(এই প্রবন্ধে কোনও মতামত লেখকের নিজস্ব)

সাম্প্রতিকতম

জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তিযুক্ত নয়া মডেলের স্মার্টফোন আনল রিয়েলমি

অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নয়া মডেলের স্মার্টফোন কেনার পরিকল্পনা করছেন? আপনি কিনতেই পারেন রিয়েলমি সংস্থার নয়া...

আটকে একাধিক বিল, রাজভবনকে নোটিস পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট

কলকাতা: রাজ্যের একাধিক বিল রাজভবনে আটকে আছে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সই করছেন না,...

‘পূর্ণ শক্তি দিয়ে সন্ত্রাস দমন’, কার্গিল দিবসে পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর

নয়াদিল্লি: সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। শুক্রবার কার্গিল বিজয় দিবসের...

নিট-এ শীর্ষ স্থানাধিকারীর সংখ্যা এক ধাক্কায় ৬১ থেকে নেমে আসবে ১৭-য়, সংশোধিত মেধা তালিকা সম্ভবত আজই

নয়াদিল্লি: স্নাতক স্তরের ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট (NEET-UG)-এর সংশোধিত মেধা তালিকা ঘোষণা করা হতে...

আরও পড়ুন

মাহেশের রথযাত্রা বঙ্গের প্রাচীনতম, জেনে নিন তার সূচনা-কাহিনি

খবর অনলাইন ডেস্ক: রথযাত্রা এলেই আগে মনে পড়ে যায় পুরীর কথা। কিন্তু এই বঙ্গেও...

ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন করলে বাইরে থেকে সমর্থন, কেন বললেন মমতা

পঞ্চম দফা ভোটের আগেই ইন্ডিয়া জোট নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করলেন তৃণমূল নেত্রী। কেন তিনি মনে করছেন ইন্ডিয়া জোট সরকার গড়বে, তা আগেই স্পষ্ট করে দেন মমতা।

বিএইচসিডিএ হুগলি জেলার প্রথম বার্ষিক সাধারণ সম্মেলন হয়ে গেল ব্যান্ডেলে

বেঙ্গল হোমিওপ্যাথিক কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন বা বিএইচসিডিএ (হুগলি) জেলার প্রথম বার্ষিক সাধারণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ব্যান্ডেলে।
ইন্টারভিউয়ে কীরকম শরীরী ভঙ্গিমা থাকা উচিত বাড়তি মেদ ঝরানোর নয়া ট্রেন্ড ‘ওয়াটার ফাস্টিং’ কী?