খবর অনলাইনডেস্ক: উন্নয়নের নামে ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হল পুরুলিয়া স্টেশনের হেরিটেজ ভবন। ২ এবং ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে থাকা লাল টালিতে ছাওয়া শতাব্দী প্রাচীন এই ইমারতের জায়গায় এখন ধংসস্তূপ। মনখারাপ প্রাক্তন রেলকর্মী থেকে যাত্রীদের। প্রতিবাদ উঠেছে আদ্রা ডিভিশনের রেলওয়ে ইউজ়ার্স অর্গানাইজেশনের তরফ থেকেও।
বেশ কিছুদিন ধরে পুরুলিয়া স্টেশনে চলছে অমৃত ভারত প্রকল্পের কাজ। তারই মধ্যে সম্প্রতি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ভেঙে ফেলা হয়েছে ওই ভবনটি। বহু যাত্রীরই বক্তব্য, পুরুলিয়া স্টেশনে নামলে বাংলো প্যাটার্নের এই ভবনটির দিকে একবার চোখ পড়তই। এখান থেকেই অতীতে ট্রেন পরিচালনা করা হত। এখানেই ছিল প্রথম শ্রেণির ওয়েটিং রুম সমেত রেলের বেশ কিছু দফতর।
এই ভবনেই এক সময়ে স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার অচিন্ত্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়। অতীতের কথা স্মরণ করে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “পুরুলিয়া স্টেশনের পরিচয় ছিল ওই ভবনটি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে নতুনকে স্বীকার করে নিতেই হবে। কিন্তু তাই বলে ইতিহাসকে মুছে দেওয়া ঠিক নয়। বরং এই ভবনটিকে স্মারক হিসেবে রক্ষা করাই উচিত কাজ ছিল।”
ক্ষোভ প্রকাশ করেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে মেন্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পুরুলিয়ার বহু পুরোনো রেল কোয়ার্টার ও অফিসঘর ভাঙা হয়েছে। যার মধ্যে একটি ওয়েটিং রুমে গান্ধীজি তাঁর সফরকালে এসেছিলেন বলে শোনা যায়। ধীরে ধীরে রেলের ঐতিহ্যবাহী সব ভবনই উন্নয়নের নামে ভেঙে ফেলা হচ্ছে।”
রেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই ভবনটিকে হেরিটেজ বলতে নারাজ। তাঁদের কথায় অত্যাধুনিক ভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে পুরুলিয়া স্টেশনটি। এই পরিস্থিতিতে ওই পুরোনো অফিসঘর এবং ওয়েটিং রুমগুলোকে ভেঙে ফেলা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল। বিগত কয়েক বছরে ধাপে ধাপে উঁচু করা হয়েছে প্ল্যাটফর্ম। এ জন্য পুরোনো ভবনটি নীচে চলে গিয়েছিল। ফলে জল জমার সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
রেলের বক্তব্য অবশ্য মানতে নারাজ বহু যাত্রী। তাঁদের মতে, প্ল্যাটফর্ম উঁচু হয়ে ভবনটির নীচে নেমে যাওয়া, জল জমা এগুলো সবই অজুহাত। আসানসোল ডিভিশনেই রেলের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের উদ্যোগে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে বহু হেরিটেজ ভবন। সেগুলো বাঁচিয়ে রাখা গেলে পুরুলিয়ার এই ভবনটিকে কেন বাঁচানো গেল না?