শৌভিক পাল
চারদিন ব্যাপী অষ্টাদশ আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসব শেষ হল ১৪ ফেব্রুয়ারি। ১১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল এই উৎসব। নিউ আলিপুর কলেজের সহযোগিতায় ইতালির কনসুলেট জেনারেল রিকারো ডালা কোস্টা, বিভাস চক্রবর্তী, রাজা সেন-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল। তার পর থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সরস্বতী পুজোর দিন ফানুস উড়িয়ে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন সাবর্ণ পরিষদের সভাপতি দেবর্ষি রায়চৌধুরী।
প্রদর্শনী চলাকালীন প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ সংগ্রহশালা ঘুরে দেখেন। এ ছাড়াও প্রতিটা দিনই ছিল বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সন্ধ্যায় কুইজ মাস্টার সঞ্জয় রায়চৌধুরী ও দেবকুমার মিত্রের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় নস্টালজিক কুইজ। যা কুইজ অনুরাগী এবং ইতিহাসপ্রেমী বহু মানুষের মন কেড়ে নেয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন, মনোগ্রাহী সংগীতানুষ্ঠান সুরের ভেলায়। সংগীত পরিবেশন করেন অঞ্জলি গঙ্গোপাধ্যায় এবং অঞ্জলি পালচৌধুরী। তবলায় ছিলেন অসীম মণ্ডল। ওই দিনেই গিটারে বিভিন্ন গানের সুর বাজিয়ে শোনান শুভেন্দু চক্রবর্তী ও তাঁর ছাত্রছাত্রীরা। ওই দিনই নীপবীথি ও তাঁর ছাত্রছাত্রীরা একত্রে সংগীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন ছিল বিশেষ একটি দিন। দেবর্ষি রায়চৌধুরী জানান, ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রণব রায় দিবস। গীতিকার প্রণব রায় সাবর্ণ পরিবারের কৃতী সন্তান। তাঁর স্মৃতির উদ্দেশে দিনটিকে স্মরণ করা হয়। বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্রকে এ বারের এই দিনে প্রণব রায় স্মারক স্মৃতি সম্মান প্রদান করা হয়। শিল্পীকে সম্মান প্রদান করেন প্রণব রায়ের পুত্র প্রদীপ্ত রায়।
এর পর মূল আকর্ষণ সাবর্ণ সংগ্রহশালার প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন তাঁরা। এর পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ইতিহাস উৎসবের জন্য যে দুটি কবিতা লেখা হয়েছিল,সেই কবিতা আবৃত্তি করা হয়। কুমার মুখোপাধ্যায়ের কবিতা আবৃত্তি করেন সুস্মিতা গঙ্গোপাধ্যায়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরবর্তী ধাপে দুটি শ্রুতিনাটক উপস্থাপন করেন কবিতা লাহিড়ি ও নীলাদ্রী লাহিড়ি। একটি হাসির ও আরেকটি মহাভারতের কর্ণকুন্তী একটি অংশ উপস্থাপন করেন তাঁরা।
এর পরে শুরু হয় সঞ্চারী গোষ্ঠীর গানের অনুষ্ঠান। মৃণাল সেন ও তপন সিনহার বিভিন্ন চলচ্চিত্রের গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
সরস্বতী পুজো ও ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে কমলিকা রায়চৌধুরী ও টুম্পা রায়চৌধুরী পরিবেশন করেন ‘মধুর ধ্বনি বাজে…’।
দেবর্ষি রায়চৌধুরী জানান, ওই দিনের অনুষ্ঠানে বৈশাখী রায়চৌধুরী মেমোরিয়াল স্কলারশিপ তুলে দেওয়া হয় এক দু:স্থ ছাত্রীকে। সোহিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। তিনি ইন্ডিয়ান হেরিটেজ নিয়ে কাজ করছেন।
অষ্টাদশ ইতিহাস উৎসবের শেষ দিনে ২০০ বছরের বাংলা গান পরিবেশিত হয়। ১৭০০ সাল থেকে ১৯০০ সাল- এই ২০০ বছরের অপূর্ব সব বাংলা গান পরিবেশন করেন শ্রীয়ঙ্ক আচার্য।
সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তাদের তরফে ঘোষণা করা হয়, আগামী বছর ১৯তম ইতিহাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদ আয়োজিত আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসবের সূচনা, চলবে সরস্বতী পুজো পর্যন্ত