খবর অনলাইন ডেস্ক: গত কয়েক দিন ধরেই এক বিরল মহাজাগতিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকছে বিশ্বের বহু মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেখা যাচ্ছে মেরুজ্যোতি বা অরোরা (Aurora) যাকে নর্দার্ন লাইটসও (Northern Lights) বলা হয়। সোমবার-মঙ্গলবার রাতেও ওই দৃশ্য দেখা যেতে পারে, তবে তার তীব্রতা কিছুটা কম হতে পারে।
মেরুজ্যোতি প্রথম দেখা যেতে শুরু করে শুক্রবার ১০ মে বিকাল ৪টার (জিএমটি) পর থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রস্থিত ন্যাশনাল ওসিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক’স স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টারের (এসডব্লিউপিসি) রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে। সূর্য থেকে বিপুল পরিমাণে প্লাজমা এবং চুম্বকীয় ক্ষেত্র নিক্ষিপ্ত হওয়ার ফলে যে সৌরঝড়ের সৃষ্টি হয় তার ফলেই দেখা যায় মেরুজ্যোতি। পরের দু’ দিনেও এই মেরুজ্যোতি দেখা গিয়েছিল।
২০০৩-এর অক্টোবরে ‘হ্যালোউইন স্টর্মস’ (Halloween Storms) তৈরি হওয়ার পর এই প্রথম সৌরঝড়ের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে ভূচুম্বকীয় ঝড় তৈরি হল। যার ফলে দেখা গেল মেরুজ্যোতি। ‘হ্যালোউইন স্টর্মস’ থেকে সুইডেনে অন্ধকার নেমে এসেছিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ পরিকাঠামোয় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।
তবে এবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সৌরঝড়ের ফলে ভাগ্যক্রমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় বা যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোনো বড়ো বিপত্তি হয়নি। এসডব্লিউপিসি যে রিপোর্ট পেয়েছে তা থেকে দেখা যাচ্ছে, ‘পাওয়ার গ্রিড’-এ কিছু গোলযোগ হয়েছে, হাই-ফ্রিকোয়েন্সি যোগাযোগ ব্যবস্থায়, জিপিএস-এ এবং উপগ্রহ নেভিগেশনে কিছু উৎকর্ষ-হানি হয়েছে।
![aurora 4 13.05](https://www.khaboronline.com/wp-content/uploads/2024/05/aurora-4-13.05-1024x576.jpg)
সাউদাম্পটনের আকাশে মেরুজ্যোতি। ছবি: প্রত্যুষা চৌধুরী।
লাদাখ থেকে মেরুজ্যোতি দর্শন
সাধারণত এই মেরুজ্যোতি ভারতের কোনো স্থান থেকে দেখা যায় না। কারণ যে সব স্থানের অক্ষাংশ বেশি, সেই সব অঞ্চল থেকেই মেরুজ্যোতি দৃশ্যমান হয়। কম অক্ষাংশবিশিষ্ট স্থান থেকে দৃশ্যমান হয় না। কিন্তু এই মেরুজ্যোতির তীব্রতা এত বেশি ছিল যে লাদাখ থেকে তা দেখা গিয়েছে।
১০-১১ মের রাতে লাদাখের হানলে ও মেরাকে অবস্থিত ভারতীয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির ক্যামেরায় এই মেরুজ্যোতির ছবি ধরা পড়েছে। মেরুজ্যোতির এই আশ্চর্য রূপ অনেকেই ক্যামেরাবন্দি করে সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
হানলে অবজারভেটরির ইঞ্জিনিয়ার-ইন-চার্জ দোর্জে আংচুক বলেন, “আমাদের হানলের ক্যামেরায় রাত সাড়ে ১২টা থেকে উত্তর দিগন্তে মেরুজ্যোতির লাল আলো ধরা পড়ে। এই আলো দৃশ্যমান ছিল গোধূলি পর্যন্ত। আর সবচেয়ে বেশি তীব্র হয় রাত ২টো নাগাদ।”
সাউদাম্পটন থেকে মেরুজ্যোতি দেখলেন কলকাতার প্রত্যুষা
এই বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে পেরে উচ্ছ্বসিত প্রত্যুষা চৌধুরী। কলকাতার মেয়ে প্রত্যুষা পড়াশোনার সুবাদে দু’ বছর হল ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন শহরের বাসিন্দা। সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি করছেন তিনি।
এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে হলে প্রত্যুষা বলেন, “ছোটোবেলাতেই মায়ের কাছে মেরুজ্যোতি সম্পর্কে জেনেছিলাম। পরে ভূগোল বইয়েও পড়ি। তখন থেকেই অরোরা দেখার ইচ্ছে ছিল। এত বছর পরে গত শুক্রবার সেই ইচ্ছেটা পূরণ হল। নিজের চোখে অরোরা দেখার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে। প্রচুর ছবি তুলেছি।”
![aurora 1 13.05](https://www.khaboronline.com/wp-content/uploads/2024/05/aurora-1-13.05-1024x576.jpg)
সাউদাম্পটনের আকাশে মেরুজ্যোতি। ছবি: প্রত্যুষা চৌধুরী।
কী করে সৃষ্টি হয় মেরুজ্যোতি
মেরুজ্যোতি এক বিরল মহাজাগতিক ঘটনা। সূর্যের যে বায়ুমণ্ডল তাকে বলে ‘করোনা’ (Corona)। এই ‘করোনা’ থেকে কখনও কখনও বিপুল পরিমাণে প্লাজমা এবং চুম্বকীয় ক্ষেত্র নিক্ষিপ্ত হয়। একে বলে ‘করোনাল মাস ইজেকশনস্’ (সিএমই, Coronal Mass Ejections)। আর এই সিএমই থেকেই তৈরি হয় সৌরঝড়।
অরোরা তথা মেরুজ্যোতি হল আকাশে সৃষ্ট উজ্জ্বল আলোর অসংখ্য ফিতে। সৌরঝড়ে যে শক্তিযুক্ত কণা এবং চুম্বকীয় ক্ষেত্র থাকে তা পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। সৌরঝড় যত বেশি তীব্র হয়, মেরুজ্যোতির তীব্রতা তত বেশি হয়। এই সৌরঝড় পৃথিবীতে পৌঁছোতে কয়েক ঘণ্টা লাগতে পারে আবার দু’-একটা দিনও লাগতে পারে।
১০ ও ১১ মে এ ধরনের অন্তত চারটি সৌরঝড় পৃথিবীতে পৌঁছোয়। আর সেই সৌরঝড় থেকেই সৃষ্টি হয় অভাবনীয় মেরুজ্যোতি, যা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে দৃশ্যমান হয়েছিল।