বাংলাদেশ: ২৩৩ (মমিনুল হক ১০৭ নট আউট, নাজমুল হাসান শান্ত ৩১, জসপ্রীত বুমরাহ ৩-৫০, আকাশ দীপ ২-৪৩) ও ২৬-২ (শাদমান ইসলাম ৭ নট আউট, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ২-১৪)
ভারত: ২৮৫-৯ (ডিক্লেয়ার্ড) (যশস্বী জয়সোয়াল ৭২, কে এল রাহুল ৬৮, মেহেদি হাসান মিরাজ ৪-৭৮, শাকিব আল হাসান ৪-৭৮)
কানপুর: বৃষ্টিতে আড়াই দিন নষ্ট হওয়ার পর কানপুর গ্রিন পার্কের দর্শকরা সোমবার এক মারকাটারি ক্রিকেট উপভোগ করলেন। সৌজন্যে ভারতীয় দল। রোহিত শর্মার দল জানে এখানে হারানোর কিছু নেই। বরং জেতার একটা আপ্রাণ চেষ্টা করলে ক্রিকেটপ্রেমীরা ক্রিকেটটা উপভোগ করবেন। তাই বাংলাদেশকে দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেওয়ার পর ভারতীয় ব্যাটাররা এমন একটা ক্রিকেট উপহার দেওয়ার চেষ্টা করলেন যাতে সকলের মন ভরে গেল। টেস্ট ক্রিকেটে এমন দ্রুত ব্যাটিং এর আগে কখনও দেখা যায়নি। টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০ এবং ২৫০ করার রেকর্ড করল ভারত।
ইতিমধ্যে এই টেস্টে আরও কয়েকটা রেকর্ড হয়ে গেল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ব্যাটার হিসাবে ২৭ হাজার রানে পৌঁছোলেন বিরাট কোহলি। ওদিকে রবীন্দ্র জাদেজা হলেন সপ্তম ভারতীয় যিনি টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ উইকেট দখল করলেন।
প্রথম দিনের ৩ উইকেটে ১০৭ হাতে নিয়ে চতুর্থ দিনে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। তারা মধ্যাহ্নভোজনের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ২৩৩ রানে অল আউট হয়ে যায়। ভারত ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩৪.৪ ওভারে ২৮৫ করে ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করে। তারা এগিয়ে থাকে ৫২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ করেছে ২ উইকেটে ২৬। পঞ্চম দিনে ভারতের চেষ্টা হবে বাংলাদেশকে দ্রুত প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে জয়ের একটা শেষ চেষ্টা করা।
সিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচ। শাকিব আল হাসান আউট। ছবি BCCI ‘X’ থেকে নেওয়া।
বাংলাদেশের ২৩৩ রানে মমিনুলের ১০৭
এদিন ৩ উইকেটে ১০৭ রান হাতে নিয়ে খেলতে নেমে মমিনুল হক ছাড়া বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারই ভারতের বোলারদের বিরুদ্ধে স্বচ্ছন্দবোধ করেননি। ১৯৪ বলে ১০৭ রান করে মমিনুল অপরাজিত থাকেন। মমিনুল ছাড়া দুই অঙ্কের রানে পৌঁছোন শাদমান ইসলাম (২৪, গতদিনেই আউট), মেহেদি হাসান মিরাজ (২০ রান), লিটন দাস (১৩ রান) এবং মুসফিকুর রহিম (১১রান)।
গতদিনের স্কোরের সঙ্গে ৫ রান যোগ হওয়ার পর বুমরাহের বলে বোল্ড আউট হয়ে যান মুসফিকুর। পঞ্চম উইকেটের জুটিতে (৩৬ রান) মমিনুল ও লিটন, ষষ্ঠ উইকেটের জুটিতে (২২ রান) মমিনুল ও শাকিব এবং সপ্তম উইকেটের জুটিতে (৫৪ রান) মমিনুল ও মিরাজ কিছুটা চেষ্টা করেন দলের দ্রুত পতন রোধ করা। দলের ২২৪ রানে মিরাজ বুমরাহের বলে শুবমান গিলকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যাওয়ার পর ৪ উইকেটে আর মাত্র ৯ রান যোগ হয় বাংলাদেশের ইনিংসে। ভারতের পাঁচজন বোলার উইকেটগুলো ভাগাভাগি করে নিয়ে নেন।
যশস্বী, রাহুলের অর্ধশত রান
কী করতে হবে, তা একেবারে স্থির করে নিয়ে ভারত ইনিংস শুরু করে। দুই প্রান্তে দুই বিধ্বংসী ব্যাটার – অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং যশস্বী জয়সোয়াল। ৫০ রান ওঠে মাত্র ৩ ওভারে। টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড। ১১ বলে ২৩ রান করে মিরাজের বলে রোহিত বোল্ড হয়ে গেলে যশস্বীর সঙ্গী হন শুবমান। দুজনে দলের ১০০ রান পূর্ণ করেন মাত্র ১০.১ ওভারে। এটাও বিশ্বরেকর্ড। দলের ১২৭ রানে যশস্বী বোল্ড হন হাসান মাহমুদের বলে। যশস্বী করেন ৫১ বলে ৭২ রান।
ভারতের সর্বাধিক রান যশস্বীর। ছবি BCCI ‘X’ থেকে নেওয়া।
শুবমানের সঙ্গী হন বিরাট কোহলি। ৩৬ বলে ৩৯ রান করে শাকিবের বলে হাসানকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন শুবমান। কোহলির সঙ্গী হন ঋষভ পন্থ। দুজনে মিলে দলের ১৫০ রান পূর্ণ করেন ১৮.২ ওভারে। আবার বিশ্বরেকর্ড। ঋষভ বিশেষ কিছু করতে পারেননি। এর পর কোহলির সঙ্গী হন কে এল রাহুল। দুজনে মিলে ২৪.২ ওভারে দলের ২০০ রান পূর্ণ করেন। আবার বিশ্বরেকর্ড করে ভারত। পঞ্চম উইকেটে দুজনে যোগ করেন ৮৭ রান, ৯.৫ ওভারে। ৩৫ বলে ৪৭ রান করে মাত্র ৩ রানের জন্য অর্ধশত রান থেকে বঞ্চিত হন কোহলি। কোহলিকে তুলে নেন শাকিব সরাসরি বোল্ড করে।
ভারতের শেষ ৪টি উইকেট পড়ে ৩৯ রানে। ইতিমধ্যে কে এল রাহুল এবং রবীন্দ্র জাদেজা ৩০.১ ওভারে ভারতের ২৫০ রান পূর্ণ করেন। এটাও বিশ্বরেকর্ড। শেষ পর্যন্ত রাহুল করেন ৪৩ বলে ৬৮ রান। ৯ উইকেটে ২৮৫ করে রোহিত ইনিংস ডিক্লেয়ার করেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে বাংলাদেশ দিনের শেষে করেন ২ উইকেটে ২৬ রান। ব্যাট করছেন শাদমান ইসলাম ৭ রানে এবং মমিনুল, এখনও খাতা খোলেননি। পঞ্চম দিনে ভারতের লক্ষ্য হবে যত দ্রুত বাংলাদেশের ইনিংসে ধস নামানো।
আরও পড়ুন
আইএসএলে হারের হ্যাটট্রিকের জের, কোচের পদ ছেড়ে দিলেন কুয়াদ্রাত, আপাতত দায়িত্বে বিনো জর্জ