অস্ট্রেলিয়া ৩৯৯-৮ (গ্লেম ম্যাক্সওয়েল ১০৬, ডেভিড ওয়ার্নার ১০৪, লোগান ফান বিক ৪-৭৪, বাস ডে লিডে ২-১১৫)
নেদারল্যান্ডস: ৯০ (২১ ওভার) (বিক্রমজিৎ সিং ২৫, অ্যাডাম জাম্পা ৪-৮, মিচেল মার্শ ২-১৯)
দিল্লি: আবার অবিশ্বাস্য ঘটনা। এ বারের পুরুষদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ১৮ দিন আগে ইতিহাস গড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচ। তিন তিনটে বিশ্বরেকর্ড হয়েছিল সেই ম্যাচে। ১৮ দিন পরে সেই রেকর্ডের একটি ভেঙে গেল। পুরুষদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। সে দিন দক্ষিণ আফ্রিকার আইডেন মার্করাম ৪৯ বলে শতরান করে ইতিহাস গড়েছিলেন। বুধবার সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। এ দিন নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচে তিনি আরও ৯ বল কমে সেঞ্চুরি করলেন। অর্থাৎ ম্যাক্সওয়েলের শতরান করতে বল লাগল ৪০টা।
আরও দুটি রেকর্ড
বুধবার দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে ম্যাক্সওয়েলের রেকর্ড ছাড়াও আরও দুটি রেকর্ড হল। এক, পুরুষদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড়ো ব্যবধানে জয়। এ দিন অস্ট্রেলিয়া ৩০৯ রানে হারাল নেদারল্যান্ডসকে। এবং এই ব্যবধান একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
দ্বিতীয় রেকর্ডটি হল, একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে বল করতে গিয়ে প্রতিপক্ষকে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়া। নেদারল্যান্ডসের বাস ডে লিডে এ দিন বল করতে গিয়ে প্রতিপক্ষকে ১০ ওভারে ১১৫ রান দিলেন। এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার মিক লেউইসের দখলে। তিনি ২০০৬-এর মার্চে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে ১০ ওভারে ১১৩ রান দেন।
অস্ট্রেলিয়া জিতল ৩০৯ রানে
এ দিন টসে জিতে ব্যাট নেয় অস্ট্রেলিয়া। ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার যে ভিত গড়ে দেন, তার ওপর দাঁড়িয়ে দলকে এক সম্ভাব্য জয়ের জায়গায় পৌঁছে দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। দু’ জনের সেঞ্চুরি এবং স্টিভ স্মিথ ও মার্নাস লাবুশানের যোগ্য সংগতের সুবাদে অস্ট্রেলিয়া করে ৮ উইকেটে ৩৯৯-৮।
৪০০ রান তাড়া করে জেতা খুব একটা সহজ নয়। তবুও ক্রিকেটপ্রেমীরা একটা লড়াই আশা করেছিলেন। কিন্তু লড়াই দেওয়া তো দূরের কথা কার্যত আত্মসমর্পণ করল নেদারল্যান্ডস। মাত্র ২১ ওভারেই তাদের ইনিংস শেষ হয়ে গেল। অ্যাডাম জাম্পার বিধ্বংসী বোলিং-এর মোকাবিলাই করতে পারল না নেদারল্যান্ডস। তাদের সংগ্রহ মাত্র ৯০ রান। মাত্র ৮ রান দিয়ে ৪টি উইকেট দখল করলেন অ্যাডাম জাম্পা। অস্ট্রেলিয়া জিতে গেল ৩০৯ রানে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল হলেন ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’।
ওয়ার্নারের সঙ্গে যোগ্য সংগত স্মিথ ও লাবুশানের
খেলা কিন্তু খুব একটা খারাপ শুরু করেনি নেদারল্যান্ডস। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। দলের ২৮ রানের মাথায় মিচেল মার্শকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেন নেদারল্যান্ডসের ফান বিক। ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গী হল স্টিভ স্মিথ। দু’জনে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন। দ্বিতীয় উইকেটে যোগ হয় ১৩২ রান। নিজস্ব ৭১ রানের (৬৮ বলে) মাথায় বঙ্গসন্তান আরিয়ান দত্তের বলে ফান ডেয়ার মার্ভেকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান স্মিথ। আসেন মার্নাস লাবুশানে।
আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে ডেভিড ওয়ার্নার।
ওয়ার্নার-লাবুশানে জুটি তৃতীয় উইকেটের জুটিতে করেন ৮৪ রান। তাঁরা রান পৌঁছে দেন ২৬৬-তে। লাবুশানে ৪৭ বলে ৬২ রান করে ডে লিডের বলে আরিয়ানকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। এর পরে দ্রুত আউট হয়ে যান জোশ ইংলিস (দলের ২৬৬ রানে) এবং ডেভিড ওয়ার্নার (দলের ২৬৭ রানে)। আউট হওয়ার আগে অবশ্য এ বারের পুরুষদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি করে ফেলেন ওয়ার্নার। পর পর দুটি শতরান। ঠিকে আগের ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ার্নার করেছিলেন ১৬৩ রান। বুধবার নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ১১টি চার এবং ৩টি ছয়ের মাধ্যমে ওয়ার্নার ৯৩ বলে করলেন ১০৪ রান।
ঝড় তুললেন ম্যাক্সওয়েল
মাত্র ৩ ওভারে ৩টি উইকেট তুলে নেয় নেদারল্যান্ডস। তখন মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়াকে খুব বেশি রানে পৌঁছোতে দেবে না নেদারল্যান্ডস। কিন্তু ২৬৭ রানে ওয়ার্নার-বিদায়ের পর কার্যত একাই দলকে এগিয়ে নিয়ে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। সেই ম্যাক্সওয়েল যাঁর ২০২৩-এ এ দিনের একদিনের ম্যাচের আগে পর্যন্ত রানের গড় ছিল ১২.৪, সেই ম্যাক্সওয়েল যিনি ২০১৭-এর শুরু থেকে ভারতের মাটিতে একটিও অর্ধশত রান করতে পারেননি। সেই ম্যাক্সওয়েলই খেল দেখালেন।
৩৯.১ ওভারে দলের ২৬৭ রানে ওয়ার্নার যখন আউট হন ম্যাক্সওয়েল তখনও খাতা খোলেননি। ৪৯.৩ ওভারে ম্যাক্সওয়েল আউট হন দলের ৩৯৩ রানে। অর্থাৎ ওয়ার্নার আউট হওয়ার পর ১০.২ ওভারে ওঠে ১২৬ রান, যার মধ্যে ম্যাক্সওয়েলেরই ছিল ১০৬ রান। ব্যাটিং-এ ঝড় তুলেছিলেন ম্যাক্সওয়েল। ৪০ বলে নিজের শতরান পূর্ণ করে ম্যাক্সওয়েল করেন ৪৪ বলে ১০৬ রান। তাঁর এই রানের মধ্যে ছিল ৯টা চার আর ৮টা ছয়। অস্ট্রেলিয়া ইনিংস শেষ করে ৮ উইকেটে ৩৯৯ রানে।
জাম্পার বিষাক্ত বল
জয়ের জন্য ৪০০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করা চাট্টিখানি কথা নয়। অন্যতম ওপেনার বিক্রমজিৎ সিংয়ের অল্পস্বল্প দৃঢ়তায় প্রথম উইকেটে ২৮ রান যোগ হওয়ার পর একেবারে তাসের ঘরের মতো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে নেদারল্যান্ডস। ৬২ রানের মধ্যে ৫ উইকেট পড়ে যায়। এর পর উইকেট পতন কিছুটা ঠেকান তেজা নিদামানুরু এবং অধিনায়ক স্কট এডোয়ার্ডস। কিন্তু দলের ৮৪ রানে তেজা আউট হয়ে যেতেই মাত্র ৬ রানের মধ্যে বাকি ৪টি উইকেট পড়ে যায়।
নেদারল্যান্ডসের ইনিংসে ধস নামানোর মূল কারিগর অ্যাডাম জাম্পা। অত্যাশ্চর্য তাঁর বোলিং ফিগার – ৩ ওভার, ৮ রান, ৪ উইকেট। ১৯ রান দিয়ে ২টি উইকেট তুলে নেন মিচেল মার্শ। ৩টি উইকেট ভাগাভাগি করে নেন মিচেল স্টার্ক, জোশ হ্যাজল্উড এবং প্যাট কামিন্স। নেদারল্যান্ডসের ওপেনার বিক্রমজিৎ রান আউট হন।
অস্ট্রেলিয়া প্রথম চারে চলে এল
যে অস্ট্রেলিয়া গোড়ার দিকে লিগ টেবিলের একেবারে নীচে ছিল সেই অস্ট্রেলিয়া এ দিনের ম্যাচের পর প্রথম চারের মধ্যে চলে এসেছে। ৫টি ম্যাচের মধ্যে ৩টি জিতে ৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করে তারা রয়েছে চতুর্থ স্থানে। প্রথম চারের বাকি তিনটি দল ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড। ভারত রয়েছে শীর্ষে। তারা একমাত্র দল যারা ৫টি ম্যাচের ৫টিতেই জিতে ১০ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড, দুটি দলই ৫টি ম্যাচের মধ্যে ৪টিতে জিতে ৮টি করে পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। কিন্তু নেট রানরেটের বিচারে দক্ষিণ আফ্রিকা রয়েছে দ্বিতীয় এবং নিউজিল্যান্ড রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
এ দিনের ম্যাচে পরাজয়ের পরে নেদারল্যান্ডস চলে গেল একেবারে নীচে। ৫টি ম্যাচে খেলে ১টিতে জিতে তাদের সংগ্রহ ২ পয়েন্ট। বাংলাদেশও ৫টি ম্যাচে খেলে ১টিতে জিতে ঝুলিতে ভরেছে ২ পয়েন্ট। কিন্তু যথারীতি নেট রানরেটের বিচারে বাংলাদেশ এক ধাপ উপরে রয়েছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান, দুটি দলই ৫ ম্যাচের মধ্যে ২টিতে জিতে সংগ্রহ করেছে ৪টি করে পয়েন্ট। কিন্তু নেট রানরেটের বিচারে পাকিস্তান পঞ্চম এবং আফগানিস্তান ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ড ৪টি করে ম্যাচ খেলে ২টি জিতে ৪টি করে পয়েন্ট ঝুলিতে ভরেছে। তবে নেট রানরেটের বিচারে শ্রীলঙ্কা সপ্তম ও ইংল্যান্ড অষ্টম স্থানে রয়েছে।
আরও পড়ুন
সাউথ আফ্রিকার কাছে লজ্জার হার! টানা ৪ ম্যাচ হেরে পয়েন্ট তালিকার সবচেয়ে নীচে বাংলাদেশ