Home খেলাধুলো ক্রিকেট বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বধ করলেন কোহলি ও রাহুল

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বধ করলেন কোহলি ও রাহুল

0

অস্ট্রেলিয়া: ১৯৯ (৪৯.৩ ওভার) (স্টিভ স্মিথ ৪৬, ডেভিড ওয়ার্নার ৪১, রবীন্দ্র জাদেজা ৩-২৮, জসপ্রীত বুমরাহ ২-৩৫)

ভারত: ২০১-৪ (৪১.২ ওভার) (কেএল রাহুল ৯৭ নট আউট, বিরাট কোহলি ৮৫, হ্যাজলউড ৩-৩৮)

চেন্নাই: ভারতের রান তখন ২০। ৩টি উইকেট ইতিমধ্যেই পড়ে গিয়েছে। বেশ বিপাকে তারা। ১২ রান করে ব্যাট করছেন বিরাট কোহলি, ৫ রানে কেএল রাহুল। জোশ হ্যাজলউডের ওভার। ইনিংসের অষ্টম ওভার। প্রথম দুটো বলে কোনো রান হয়নি। তৃতীয় বল করলেন কোহলিকে। শর্ট বল। পুল করতে গেলেন কোহলি। বল উঁচু হয়ে উঠে গেল লেগের দিকে। ক্যাচ ধরার জন্য ছুটলেন মিশেল মার্শ আর অ্যালেক্স ক্যারি। ক্যাচ ধরার জায়গায় আগে পৌঁছে গেলেন মার্শ। কিন্তু না, তালুবন্দি করতে পারলেন না বলটা। ক্যাচ মিস। প্রাণ ফিরে পেলেন কোহলি। প্রাণ ফিরে পেল ভারত। এই ক্যাচ মিসই কি কাল হল অস্ট্রেলিয়ার?

ওই একটাই ভুল। এর পরই খেলা দেখালেন বিরাট কোহলি ও কেএল রাহুল। ধৈর্য ধরে, মাথা ঠান্ডা রেখে, সনাতনী ধারার ক্রিকেট খেলে কী ভাবে একটা ম্যাচ বার করতে হয় তা দেখিয়ে দিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ৯৭ রানে নট আউট থাকলেন রাহুল। আর কোহলি নিজের সেঞ্চুরিটা মাঠে রেখে এলেন।         

রবিবার চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৩ বল বাকি থাকতেই ইনিংস শেষ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার। তারা করে ১৯৯। জবাবে ভারত ৪ উইকেটে ২০১ করে ৬ উইকেটে জিতে গেল।

ভারতীয় স্পিনারদের দাপটে বেহাল অস্ট্রেলিয়া  

টসে জিতে অস্ট্রেলিয়া ব্যাট নেয়। কিন্তু ভারতীয় স্পিন বোলারদের কেরামতিতে প্যাট কামিন্সের দল ইনিংসকে বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। দলের ১০টা উইকেটের মধ্যে ৬টিই তুলে নিলেন স্পিনাররা। একসময়ে তাদের রান ছিল ২ উইকেটে ১১০। সেখান থেকে তারা দলের রান নিয়ে যেতে পারল ১৯৯-এ। অর্থাৎ ৮ উইকেটে তারা যোগ করল মাত্র ৮৯ রান।

অস্ট্রেলিয়ার ১০টি উইকেট ভারতের ৬ জন বোলার ভাগ করে নেন। সব চেয়ে সফল বোলার রবীন্দ্র জাদেজা। তিনি ২৮ রান দিয়ে ৩টি উইকেট দখল করেন।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করেন যথারীতি ডেভিড ওয়ার্নার এবং মিশেল মার্শ। কিন্তু দলের ৫ রানেই মার্শ বিদায় নেন নিজের খাতা খোলার আগেই। জসপ্রীত বুমরাহের বলে কোহলিকে ক্যাচ দেন তিনি। ওয়ার্নারের সঙ্গী হন স্টিভ স্মিথ। তাঁরা দু’জনে দলকে বিপদমুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। এঁদের মধ্যে ওয়ার্নার বেশি মারমুখী ছিলেন যদিও রান ওঠার গতি খুব বেশি ছিল না।

অর্ধশত রান থেকে ৯ রান দূরে ছিলেন ওয়ার্নার। কুলদীপ যাদবের স্পিন সামলাতে না পেরে তাঁকেই ক্যাচ দিয়ে আউট হন। দলের রান তখন ৭৪। স্মিথের সঙ্গী হন মার্নাস লাবুশানে। দু’জনে ধীরেসুস্থে রান এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ১১০ রানের মাথায় স্মিথ আউট হতেই অস্ট্রেলিয়া কেমন দিশাহারা হয়ে যায়। স্মিথকে তুলে নেন জাদেজা সরাসরি বোল্ড করে। এর পর অস্ট্রেলীয় ব্যাটাররা একে একে প্যাভেলিয়নের পথ ধরেন। ১৪০ রানের মধ্যে ৭টি উইকেট পড়ে যায়। অষ্টম উইকেটের জুটিতে ২৫ রান এবং নবম উইকেটের ২৪ রান যোগ না হলে অস্ট্রেলিয়া ১৯৯-তে পৌঁছোত কিনা সন্দেহ। দলের সর্বাধিক রান করেন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ, ৭১ বলে ৪৬ রান।

৩-২ থেকে ৪-২০১

জয়ের জন্য ২০০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে ভারত ২ রানে ৩ উইকেট হারায়। হ্যাজলউড আর স্টার্ক তখন রীতিমতো বিধ্বংসী। ভারতের ব্যাটাররা তাঁদের ফাস্ট বলের কোনো কুলকিনারা করতে পারছে না। দুই ওপেনারই নিজেদের খাতা খুলতে পারলেন না। এ রকম ঘটনা ৪০ বছর আগে ১৯৮৩-এর বিশ্বকাপে ঘটেছিল। যে ম্যাচে কপিল দেবের অসামান্য ব্যাটিং-এর জন্য জিম্বাবোয়েকে হারিয়েছিল ভারত, সেই ম্যাচে ভারতের দুই ওপেনার শূন্য করেছিলেন। তবে রবিবার বিশ্বকাপের খেলায় আরও একজন শূন্য রানের শরিক হলেন। খাতা খুলতে পারলেন না চার নম্বর ব্যাটার শ্রেয়স আইয়ারও।

দলের রান তখন ২। প্রথম ওভারের চতুর্থ বল মিচেল স্টার্ক তুলে নিলেন ঈশান কিষানকে। ক্যামেরন গ্রিনকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভেলিয়নের পথ ধরলেন ঈশান। দ্বিতীয় ওভার করতে এলেন হ্যাজলউড। তৃতীয় বলেই আউট অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ভারতের ২ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন। বেশিক্ষণ লাগল না। ৩ বল পরেই হ্যাজলউডের শিকার হয়ে গেলেন শ্রেয়স। ডেভিড ওয়ার্নারকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভেলিয়নে শ্রেয়স। রান আটকে সেই ২-এই।

৩ উইকেটে ২ রান। অবিশ্বাস্য পরিস্থিতি। ভারতের অতি বড়ো সমর্থকও আর জয়ের আশা দেখছেন না। তবু আশায় মরে চাষা। নামলেন উইকেটকিপার কেএল রাহুল। একটু একটু করে ইংনিসের ভিত গড়ার চেষ্টা করতে লাগলেন। উইকেট বাঁচিয়ে খুব ধীর গতিতে রান তুলতে লাগলেন তাঁরা। এর পরেই ঘটল সেই ২০ রানের ঘটনা। কোহলির ক্যাচ ফেলে দিলেন মার্শ। এই মিসই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিল। ঘুরিয়ে দিল ভারতের ভাগ্য।

এর পর ভারতের দুই ব্যাটার অস্ট্রেলিয়ার কোনো বোলারকেই রেয়াত না করে নিজেদের ঘর গোছানো শুরু করলেন। মারার বলকে মারা, সম্ভ্রম দেখানোর বলকে যথাযথ সম্ভ্রম দেখানো – ক্রিকেটের সনাতনী ধারায় যেটা করা উচিত, সেটাই করলেন। হ্যাজলউডের বলে লাবুশানেকে ক্যাচ দিয়ে কোহলি যখন আউট হলেন তখন ভারতের হারের কোনো প্রশ্নই। স্কোরবোর্ডে ভারতের রান তখন ১৬৭। কোহলি ১১৬ বলে ৮৫ করে সেঞ্চুরি থেকে ১৫ রান দূরে থেমে গেলেন।

হার্দিক পাণ্ড্যকে সঙ্গী করে বাকি কাজটা সেরে ফেললেন কেএল রাহুল। ২২ বলে ৩৪ রান তুলে দলকে জয়ে পৌঁছে দিলেন। এই ৩৪ রানের বেশিটাই করলেন রাহুল। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৩ রান দূরে যখন রাহুল, ভারত জয় পেয়ে গেল। ১১৫ বলে ৯৭ রান নট আউট থাকলেন তিনি। পাণ্ড্য ৮ বলে ১১ করে অপরাজিত থাকলেন।

আরও পড়ুন

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: শ্রীলঙ্কাকে ১২০ রানে হারানোর পথে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দক্ষিণ আফ্রিকার তিন রেকর্ড

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ   

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version