ভারত: ২৯৭-৬ (সঞ্জু স্যামসন ১১১, সূর্যকুমার যাদব ৭৫, তানজিম হাসান সাকিব ৩-৬৬)
বাংলাদেশ: ১৬৪-৭ (তাওহিদ হৃদয় ৬৩ নট আউট, লিটন দাস ৪২, রবি বিষনয় ৩-৩০, ময়াঙ্ক যাদব ২-৩২)
ভারত জিতল ১৩৩ রানে
হায়দরাবাদ: একটা ম্যাচে কত খেল দেখা হল ক্রিকেটপ্রেমীদের। টি২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর করল ভারত – ৩ কম ৩০০ – টি২০তে ভারতের সর্বোচ্চ রান। আজ পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যতগুলি টি২০ ম্যাচ হয়েছে তার মধ্যে শনিবারের ম্যাচ মোট রানের ক্ষেত্রে রেকর্ড করল। দুটি দল মোট তুলল ৪৬১ রান। বাংলাদেশ ভারতকে দিল ২২টা ছয় আর ২৫টি চার। একটা টি২০ ইনিংসে ভারতের বেশি রানটাই এল বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি থেকে – ২৯৭ রানের মধ্যে ২৩২ রান। ভারতের ২০ ওভারের ইনিংসের মধ্যে ১৮টা ওভার থেকে এল ১০ বা তার বেশি রান।
এক ওভারে ৫টা ছয় সঞ্জুর
শনিবারের ম্যাচের আরও কিছু ইন্টারেস্টিং খতিয়ান। ১টা ওভার থেকে এল ৫টা ছয়। সঞ্জু স্যামসনকে দশম ওভারটা করছিলেন রিশাদ হোসেন। ওভারের প্রথম বলে কোনো রান হল না। এরপর বাকি ৫টা বলকেই সীমানা টপকে বাইরে পাঠিয়ে দিলেন সঞ্জু। এই সঞ্জুই ৪০ বলে শতরান করলেন। ভারতের কোনো ব্যাটারের পক্ষে দ্বিতীয় দ্রুততম শতরান। এদিন ভারত প্রথমে করে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান। জবাবে বাংলাদেশ করে ৭ উইকেটে ১৬৪ রান। ফলে ভারত জিতে যায় ১৩৩ রানে। এই জয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারত টানা ১০টি টি২০ ম্যাচে জিতল। আর ঘরের মাঠে ৭ নম্বর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জিতল ভারত।
শনিবার হায়দরাবাদে রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে ব্যাট নেয় ভারত। এদিনের ম্যাচে ভারত একটি পরিবর্তন করে। অর্শদীপ সিংকে বিশ্রাম দিয়ে নিয়ে আসা হয় রবি বিষনয়কে। বাংলাদেশ তাদের দলে দুটি পরিবর্তন করে। মেহেদি হাসান মিরাজ এবং জাকের আলির জায়গায় দলে নেওয়া হয় ওপেনিং ব্যাটার তানজিদ হাসান তামিম এবং অলরাউন্ডার মাহেদি হাসানকে।

নিজের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত যে সঠিক তা প্রমাণ করলেন রবি বিষনয়। উইকেট নেওয়ার পর রবিকে অভিনন্দন জানাতে যাচ্ছেন অধিনায়ক সূর্যকুমার। ছবি BCCI ‘X’ থেকে নেওয়া।
ভারতের ধ্বংসাত্মক মেজাজ
ভারতের অন্যতম ওপেনার অভিষেক শর্মা (৪ বলে ৪ রান) দলের ২৩ রানে তানজিম হাসান সাকিবের বলে মাহেদি হাসানকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ার পর সঞ্জু স্যামসন এবং অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করতে থাকেন। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে এঁরা দুজন মাত্র ১১.৩ ওভারে তোলেন ১৭৩ রান অর্থাৎ গড়ে ১৫-রও বেশি রান। ইতিমধ্যে নিজের শতরান পূর্ণ করেন সঞ্জু। ৪৭ বলে ১১১ রান (স্ট্রাইক রেট ২৩৬.১৭) করে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে মাহেদি হাসানকে ক্যাচ দিয়ে সঞ্জু যখন বিদায় নেন তখন ভারতের স্কোর ১৩.৪ ওভারে ১৯৬। সঞ্জুর ১১১ রানে ছিল ৮টা ছয়, ১১টা চার। এতেই বোঝা যায় ভারত কতটা ধ্বংসাত্মক মেজাজে ব্যাট করছিল।
সঞ্জু চলে যাওয়ার পর সূর্যকুমার বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি। তাঁকে তুলে নেন মাহমুদুল্লাহ। ৩৫ বলে ৭৫ রান (৫টা ছয়, ৮টা চার) করে রিশাদ হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সূর্যকুমার। এরপর আবার ঝড় তোলেন রিয়ান পরাগ এবং হার্দিক পাণ্ড্য। তাঁরা ৪.১ ওভারে তোলেন ৭০ রান, গড়ে ওভারপিছু ১৭ রানের বেশি। ১৩ বলে ৩৪ করেন রিয়ান, স্ট্রাইক রেট ২৬১.৫৩। ২৬১.১১ স্ট্রাইক রেটে হার্দিক করেন ১৮ বলে ৪৭ রান। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ভারত তোলে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান।
এদিনের জয়ের দুই কারিগর সূর্যকুমার যাদব ও সঞ্জু স্যামসন। ছবি BCCI ‘X’ থেকে নেওয়া।
তাওহিদ-লিটনের চেষ্টা
জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ২৯৮ রান। এক কার্যত অসম্ভব কাজ। তবু ক্রিকেটে অসম্ভব বলে তো কিছু হয় না। তাই সেই অসম্ভবের পিছনে ছুটতে গিয়ে গোড়াতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। নিজের এবং দলের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। তাঁকে তুলে নেন ময়াঙ্ক যাদব। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারানো সত্ত্বেও বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে রান তোলার চেষ্টা করতে থাকে। ৪.৪ ওভারে তারা ৫০ পেরিয়ে যায়। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে লিটন দাস ২০ রান তোলেন। নীতীশ কুমারের ৬টি বলের মধ্যে ৫টিকেই সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দেন লিটন।
৫৯ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানোর পর দলের পতন কিছুটা রোধ করার চেষ্টা করেন লিটন দাস এবং তাওহিদ হৃদয়। তাঁরা ৬.২ ওভারে যোগ করেন ৫৩ রান। কিন্তু দলের ১১২ রানে লিটন দাস (২৫ বলে ৪২) রবি বিষনয়ের বলে পরিবর্ত প্লেয়ারকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যাওয়ার পরে ২৭ রানে আরও ৩ উইকেট পড়ে যায়। তারই মধ্যে যতটা সম্ভব রান এগিয় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাওহিদ হৃদয়। ৪২ বলে ৬৩ রান করে হৃদয় নট আউট থাকেন। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৪ রান তুলে ভারতের কাছে ১৩৩ রানে পরাজিত হয়।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রতিটি ম্যাচই জিতল ভারত। শনিবার ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন সঞ্জু স্যামসন। ‘প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ’ হলেন হার্দিক পাণ্ড্য।