নিউজিল্যান্ড: ২৩৫ (মিশেল স্টার্ক ৮২, উইল ইয়ং ৭১, রবীন্দ্র জাদেজা ৫-৬৫, ওয়াশিংটন সুন্দর ৪-৮১) ও ১৭৪ (উইল ইয়ং ৫১, রবীন্দ্র জাদেজা ৫-৫৫, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৩-৬৩)
ভারত: ২৬৩ (শুবমন গিল ৯০, ঋষভ পন্থ ৬০, আজাজ পটেল ৫-১০৩) ও ১২১ (ঋষভ পন্থ ৬৪, আজাজ পটেল ৬-৫৭, গ্লেন ফিলিপ্স ৩-৪২)
মুম্বই: অকল্পনীয় অঘটন ঘটাল নিউজিল্যান্ড। টেস্ট সিরিজে ভারতকে তার ঘরের মাঠে একেবারে চুনকাম করে দিল। ৩টি টেস্টেই তারা হারিয়ে দিল ভারতকে। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের ইতিহাসে এই ঘটনা কখনও ঘটেনি। আর ভারতও ২৪ বছর পর এই লজ্জাজনক পরাজয়ের শিকার হল। এর আগে ২০০০ সালে হ্যান্সি ক্রোনিয়ের সাউথ আফ্রিকার কাছে ঘরের মাঠে চুনকাম হয়েছিল ভারত। সে বার ক্রোনিয়ের দল ২টি টেস্টেই হারিয়ে দেয় ভারতকে।
নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রথম ২টি টেস্টে হারের পর তৃতীয় টেস্টে মনে হয়েছিল ভারত বোধহয় জিততে পারে। কারণ মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আয়োজিত ৩য় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ভারত ২৮ রানে এগিয়ে ছিল ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে তারা কিউয়িদের ১৭৪ রানে শেষ করে দেয়। ফলে ভারতের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ১৪৭ রান। কিন্তু রবিবার সেই লক্ষ্যমাত্রাতেও পৌঁছোতে পারল না ভারত। ১২১ রানেই শেষ হয়ে গেল তারা।
১১টি উইকেট নিয়ে আজাজ পটেলের রেকর্ড
৩য় টেস্টে আজাজ পটেল শুধুমাত্র ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ই হলেন না, রেকর্ডও সৃষ্টি করলেন। ভারতের দুটি ইনিংস মিলিয়ে তিনি দখল করলেন ১১টি উইকেট। এর আগে কোনো বিদেশি বোলার ভারতের ১টি ক্রিকেট মাঠে এতগুলো উইকেট দখল করতে পারেননি। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ৩৩ ও ৪৮ (নট আউট), দ্বিতীয় টেস্টে ১৮ ও ২৩ এবং তৃতীয় টেস্টে ৭১ ও ৫১ রান করে ‘প্লেয়ার অফ দ্য সিরিজ’ হলেন উইল ইয়ং।
এবি ডে ভিলিয়ার্স কিছু দিন আগে বলেছিলেন, ‘‘ভারতীয়েরা সবচেয়ে ভালো স্পিন খেলে, এটা একটা ধারণা মাত্র।’’ ডে ভিলিয়ার্স যে ভুল বলেননি সেটাই প্রমাণ হয়ে গেল কিউয়িদের বিরুদ্ধে এই টেস্ট সিরিজে। স্পিন বোলারদের কাছে হেনস্থা অব্যাহত থাকল ভারতীয় ক্রিকেটারদের। নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিন বোলার আজাজ পটেলের কাছে কার্যত হার মানলেন ভারতের তাবড় তাবড় ব্যাটাররা। ভারতের প্রথম ইনিংসে পটেল ১০৫ রান দিয়ে ৫টি উইকেট নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে পটেল আরও আক্রমণাত্মক হয়ে মাত্র ৫৭ রান দিয়ে ৬টি উইকেট দখল করে নেন।
স্পিনের জাদুতে ভারতকে কাত করলেন আজাজ পটেল। ছবি BLACKCAPS ‘X’ থেকে নেওয়া।
প্রথম ইনিংসে ভারত এগিয়ে যায় ২৮ রানে
তৃতীয় টেস্টে টসে জিতে ব্যাটিং নেয় নিউজিল্যান্ড। রবীন্দ্র জাদেজা (৬৫ রানে ৫ উইকেট) এবং ওয়াশিংটন সুন্দরের (৮১ রানে ৪ উইকেট) বোলিংয়ের দৌলতে ২৩৫ রানে নিউজিল্যান্ডকে আটকে রাখে ভারত। কিউয়িরা এই রানে পৌঁছোয় মিশেল স্টার্ক (৮২ রান), উইল ইয়ং (৭১ রান) এবং অধিনায়ক টম লাথামের (২৮ রান) ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে।
ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে করে ২৬৩ রান। মাত্র ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন শুবমান গিল। আর যে সব ব্যাটার ভারতকে ওই রানে পৌঁছোতে সাহায্য করেন তাঁরা হলেন ঋষভ পন্থ (৬০ রান), ওয়াশিংটন সুন্দর (৩৮ নট আউট) এবং যশস্বী জয়সোয়াল (৩০ রান)। কিউয়িদের হয়ে ১০৩ রান দিয়ে ৫টি উইকেট তুলে নেন আজাজ পটেল।
দ্বিতীয় ইনিংসে ১২১-এই খতম রোহিতবাহিনী
দ্বিতীয় ইনিংসে আরও খারাপ অবস্থায় পড়ে নিউজিল্যান্ড। তারা মাত্র ১৭৪ রানে গুটিয়ে যায়। একমাত্র উইল ইয়ং (৫১ রান) ছাড়া কোনো কিউয়ি ব্যাটারই ভারতের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। এবারেও মারমুখী রবীন্দ্র জাদেজা। তিনি ৫৫ রান দিয়ে ৫টি উইকেট দখল করেন। জাদেজাকে সঙ্গ দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৬৩ রানে ৩ উইকেট)।
ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৪৭ রান। বেঙ্গালুরুতে ৪৬ রানে অলআউট হয়ে যাওয়া ভারত ওয়াংখেড়ের মাঠে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করে জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছোতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তো ছিলই। এবং সেই সংশয় ঘনীভূত হল রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির মতো ভারতের ক্রিকেট মহারথীরা দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ায়। মূলত আজাজ পটেলের বলের দাপট সহ্য করতে না পেরে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯ রানের মধ্যে ৫টি উইকেট খোয়ায়। এর পর ঋষভ পন্থ কিছুটা রবীন্দ্র জাদেজা আর কিছুটা ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে দলের রান টেনে নিয়ে গেলেন ১০৬ রানে। তবে এই রান তোলার পিছনে মূল অবদান ছিল ঋষভেরই। রবীন্দ্র এবং ওয়াশিংটনের অবদান ছিল নামমাত্র।
৫৭ বলে ৬৪ রান করে দলের ১০৬ রানের মাথায় ঋষভ পন্থ আজাজ পটেলের শিকার হতেই ভারত আবার গাড্ডায় পড়ে। বাকি ৩ উইকেট পড়ে যায় আর মাত্র ১৫ রান যোগ হওয়ার পর। এবং ওই শেষ ৩টি উইকেট পড়ে দলের ১২১ রানে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও আকাশ দীপকে গ্লেন ফিলিপ্স (৪২ রানে ৩ উইকেট) তুলে নেওয়ার পর ওয়াশিংটন সুন্দরকে বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেন সেই পটেল। ২৫ রানে জিতে গেল কিউয়িরা। ভারতের মাঠে ইতিহাস গড়ল নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল।