নেদারল্যান্ডস: ২৪৫-৮ (স্কট এডোয়ার্ডস ৭৮ নট আউট, রোয়েলঅফ ফান ডেয়ার মার্ভে ২৯, মার্কো ইয়ানসেন ২-২৭, কাগিসো রাবাদা ২-৫৬)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০৭ (৪২.৫ ওভারে) (ডেভিড মিলার ৪৩, কেশব মহারাজ ৪০, লোগান ফান বিক ৩-৬০, রোয়েলঅফ ফান ডেয়ার মার্ভে ২-৩৬)
ধরমশালা: গত বছর টি২০ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই পরাজয়ের ট্রমা থেকে কি আজও বেরোতে পারেনি তারা? সেই পরাজয়ের পুনরাবৃত্তি হল আবার, এই একদিনের ম্যাচের বিশ্বকাপেও। নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে গেল ৩৮ রানে। বিশ্বকাপে রচিত হল ইতিহাস।
মঙ্গলবার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে আয়োজিত বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে টসে জিতে নেদারল্যান্ডসকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ১১২ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল নেদারল্যান্ডস। ততক্ষণে ২৭ ওভার খেলা হয়ে গিয়েছে। আর মাত্র ১৬ ওভার বাকি। কারণ বৃষ্টির জন্য ৫০ ওভারের ম্যাচ কমে হয়ে গিয়েছিল ৪৩ ওভারের।
কেউ আশা করেনি নেদারল্যান্ডস ২০০ রানের গণ্ডি পেরোতে পারবে। কিন্তু ব্যাটে অধিনায়ক স্কট এডোয়ার্ডস, রোয়েলঅফ ফান ডেয়ার মার্ভে আর আরিয়ান দত্ত দেখালেন কেরামতি। ২৭ ওভারে ১১২ থেকে তারা ৪৩ ওভারে পৌঁছে গেল ২৪৫-এ। আরও বলা ভালো শেষ ৯ ওভারে তুলল ১০৫ রান। ২৪৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে গেল ২০৭ রানে। এডোয়ার্ডসরা ব্যাটে যে ভিত গড়ে দিয়েছিলেন বল করতে এসে তাকেই কাজে লাগালেন লোগান ফান বিক এবং ফান ডেয়ার মার্ভে নিজে।
৭ উইকেট পড়ার পর খেলা ঘোরাল নেদারল্যান্ডস
টসে জিতে নেদারল্যান্ডসকে ব্যাট করতে পাঠায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৪০ রানের মধ্যে ৭টি উইকেট পড়ে যায় নেদারল্যান্ডস। অষ্টম উইকেটের জুটি হিসাবে দলের হাল ধরেন দলের অধিনায়ক স্কট এডোয়ার্ডস এবং রোয়েলঅফ ফান ডেয়ার মার্ভে। দলের ১৪০ রান উঠেছিল ৩৩.৫ ওভারে। এর পর এডোয়ার্ডস এবং মার্ভে দ্রুত রান তুলতে থাকেন। তাঁরা ৬৪ রান তোলেন ৩৬ বলে।
দলের ২০৪ রানের মাথায় মার্ভে আউট হয়ে যাওয়ার পর ব্যাট করতে নামেন নেদারল্যান্ডসের বঙ্গসন্তান আরিয়ান দত্ত। মাত্র ৯ বলে ২৩ রান করে নট আউট থাকলেন আরিয়ান। তাঁর রানে ৩টি ছয় ছিল। অধিনায়ক এডোয়ার্ডস নট আউট থাকলেন ৭৮ রান করে। তিনি এই রান তোলেন ৬৯ বলে। ৪৩ ওভারে ৮ উইকেটে ২৪৫ রান তুলল নেদারল্যান্ডস। দক্ষিণ আফ্রিকার সব বোলারই ৮টি উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়ে নিলেন।
কিছুটা ব্যতিক্রম মিলার ও মহারাজ
জয়ের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে প্রথম থেকেই নেদারল্যান্ডসের বোলারদের কাছে কেমন সিঁটিয়ে থাকলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। প্রথম উইকেটের জুটিতে ৩৬ রান ওঠার পর মাত্র ৮ রানের মধ্যে চার চারটি উইকেট পড়ে গেল। তার পর পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিলেন হাইনরিখ ক্লাসেন এবং ডেভিড মিলার। ক্লাসেন আর মিলার যখন খেলছিলেন তখন মনে হচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা বোধহয় প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু দলের ৮৯ রানে ক্লাসেন আউট হতেই আবার উইকেট পড়া শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার।
মাঝে ডেভিড মিলার (৫২ বলে ৪৩ রান) এবং শেষ দিকে কেশব মহারাজ (৩৭ বলে ৪০ রান) নেদারল্যান্ডসের বোলারদের আক্রমণ কিছুটা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেও তাঁরা নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট পতন ঠেকিয়ে রাখতে পারেননি। ১ বল বাকি থাকতে ২০৭ রানে সবাই আউট হয়ে যান। দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে যায় ৩৮ রানে। লোগান ফান বিক ৬০ রানে ৩ উইকেট এবং রোয়েলঅফ ফান ডেয়ার মার্ভে ৩৬ রানে ২ উইকেট দখল করেন। ‘প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’ হলেন স্কট এডোয়ার্ডস।
লিগ টেবিলে কে কোথায়
এ দিন ম্যাচে এ বারের বিশ্বকাপে জয়ের মুখ দেখল নেদারল্যান্ডস। ৩ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ হল ২ পয়েন্ট। ৩ ম্যাচ খেলে শ্রীলঙ্কা এখনও কোনো পয়েন্ট সংগ্রহ করতে না পারায় তারা থাকল লিগ টেবিলের একেবারে নীচে। তাদের এক ধাপ উপরে থাকল নেদারল্যান্ডস। অন্য দিকে তৃতীয় ম্যাচে এসে পরাজয়ের মুখ দেখল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। কিন্তু নেট রান রেটের বিচারে তারা পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে থাকায় তারা থাকল তৃতীয় স্থানে। প্রথম দুটি স্থানে আছে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। আর পাকিস্তান আছে চতুর্থ স্থানে। পঞ্চম থেকে অষ্টম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়া।
আরও পড়ুন
বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩: জাম্পার বোলিং জাদুতে অবশেষে জয় পেল অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কাকে হারাল ৫ উইকেটে