Home খেলাধুলো ক্রিকেট এশিয়া কাপ: শেষ বলে জয় আনলেন অসলঙ্কা, পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি...

এশিয়া কাপ: শেষ বলে জয় আনলেন অসলঙ্কা, পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা

0

পাকিস্তান: ২৫২-৭ (মহম্মদ রিজওয়ান ৮৬ নট আউট, আবদুল্লা শফিক ৫২, মতিশা পতিরানা ৩-৬৫, প্রমোদ মদুশন ২-৫৮)

শ্রীলঙ্কা: ২৫২-৮ (কুশল মেন্ডিস ৯১, চরিত অসলঙ্কা ৪৯ নট আউট, ইফতিকার আহমেদ ৩-৫০, শাহিন শাহ আফ্রিদি ২-৫২)  

কলম্বো: রাত ১টা ৭ মিনিট। কলম্বোর মানুষ তখনও জেগে। চারিদিকে আনন্দের বন্যা। একটা দুর্দান্ত রান-তাড়া দেখলেন তাঁরা। এবং শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করল তারা।  টান টান উত্তেজনায় শেষ হল ম্যাচ। এশিয়া কাপের ফাইনালে আবার পৌঁছোল গত বারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। এই নিয়ে ১১ বার এশিয়া কাপের ফাইনালে গেল তারা। ১৭ সেপ্টেম্বর তারা মুখোমুখি হবে ভারতের।

এ ভাবে রান তাড়া করে জেতাটা খুব বেশি দেখা যায় না। চরিত অসলঙ্কা শেষ পর্যন্ত তাঁর নার্ভ শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন। অন্য প্রান্তে যখন উইকেট পড়ছে, তিনি তখন তাঁর লক্ষ্যে স্থির। শাহিন শাহ আফ্রিদি আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। শেষ ওভারের আগের ওভারে পর পর দুটো বলে শ্রীলঙ্কার দুজন ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দিলেন তবু শেষ রক্ষা হল না।

শেষ ওভারের পাঁচ বল

শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৮ রান। আর ৭ রান করতে পারলে খেলা যাবে সুপার ওভারে। বল করার দায়িত্ব বর্তাল এই ম্যাচেই অভিষেক করা জমন খানের ওপর। প্রথম বল প্রমোদ মদুশনকে। লেগবাই ১ রান। ৫ বলে চাই ৭ রান। জমনের দ্বিতীয় বল অসলঙ্কাকে। রান হল না। ৪ বলে চাই ৭ রান। তৃতীয় বল অসলঙ্কাকে। ১ রান। ৩ বলে চাই ৬ রান। চতুর্থ বলে রান আউট প্রমোদ। ২ বলে ৬ রান। সুযোগ যেন ক্রমশ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ব্যাট করতে নামলেন মতিশা পতিরানা। পঞ্চম বল অসলঙ্কাকে। বল অফ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে মরিয়া অসলঙ্কা ব্যাট চালালেন। বল ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটকিপারের হাত এড়িয়ে শর্ট থার্ডের ডান দিকে চলে গেল সীমানার বাইরে। চার রান। শ্রীলঙ্কার সমর্থকরা উত্তেজিত। জয় মনে হচ্ছে তাঁদের দোরগোড়ায়।

শেষ বলে এল জয়

শেষ বলে ২ রান করতে পারলে জয়, আর ১ রান করতে পারলে সুপার ওভার। ম্যাচ হয়তো টাই-ই হবে। খেলা হয়তো যাবে সুপার ওভারেই। ১ রান আটাকানোর জন্য পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম সব ফিল্ডার দিয়ে অসলঙ্কাকে ঘিরে ফেললেন। জমন খান বল করলেন। ঠান্ডা মাথায় অসলঙ্কা সীমানার কাছাকাছি ডিপ স্কোয়ার লেগে বল পাঠিয়ে ২ রান নিয়ে নিলেন। প্রথমে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শূন্যে লাফিয়ে উঠলেন অসলঙ্কা, তার পর জড়িয়ে ধরলেন পতিরানাকে। উল্লাসে ফেটে পড়লেন শ্রীলঙ্কার সমর্থকরা। শোকে মুহ্যমান পাকিস্তানের সমর্থকরা। এ যে তীরে এসে তরী ডুবল।

পাকিস্তানের ইনিংসে ঝলসে উঠলেন রিজওয়ান              

আবার বৃষ্টি বিঘ্ন সৃষ্টি করল। বৃহস্পতিবার কলম্বোর আর প্রেমদাস স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচ নির্ধারিত সময়ের সোয়া দু’ঘণ্টা পরে শুরু হয়। ৫০ ওভারের খেলা কমিয়ে ৪৫ ওভারের করা হয়। টসে জিতে ব্যাট নেয় পাকিস্তান। সোয়া ৫টা নাগাদ খেলা শুরু হওয়ার পর মাঝে আবার ৪০ মিনিট বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ থাকে। ফলে ম্যাচ ৪৫ ওভার থেকে কমিয়ে ৪২ ওভারের করা হয়।

দলের ৯ রানে ফকর জমনকে হারানোর পর ওপেনার আবদুল্লা শফিক এবং অধিনায়ক বাবর আজম দলের হাল ধরেন। তাঁরা দলের রান নিয়ে যান ৭৩-এ। বাবর আজম ওয়েলালেগের বলে কুশল মেন্ডিসকে ক্যাচ দিয়ে আউট হলে ব্যাট করতে নামেন মহম্মদ রিজওয়ান। কিন্তু রিজওয়ান একা গড় সামলালে কী হবে অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানরা একে একে ফিরে যেতে থাকেন প্যাভিলিয়নে। ১৩০ রানের মধ্যে ৫টি উইকেট পড়ে যায়।

তখন হাতে রয়েছে ১৪.২ ওভার। মহম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গী হন ইফতিকার আহমেদ। খেলার ভোল পালটে যায়। ষষ্ঠ উইকেটের জুটিতে ১২.৫ ওভারে যোগ হয় ১০৮ রান। ইফতিকার ৪৭ রান করে ৪১তম ওভারের তৃতীয় বলে আউট হন। ইনিংস শেষ হতে আর ৯ বল বাকি। রিজওয়ান প্রায় একক প্রচেষ্টায় দলের স্কোর নিয়ে যান ২৫২-য়। নিজে নট আউট থাকেন ৮৬ রানে। পাকিস্তান তাদের ইনিংস শেষ করে ২৫২ রানে, ৭ উইকেট হারিয়ে। ডাকওয়ার্থ-লুইস সিস্টেমের হিসাবে শ্রীলঙ্কার জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় সেই ২৫২-ই। করতে হবে ৪২ ওভারে।

শ্রীলঙ্কা জয়ের কান্ডারি মেন্ডিস, অসলঙ্কা এবং সমরভিকরাম  

দলের ২০ রানে অন্যতম ওপেনার কুশল পেরেরা আউট হয়ে যাওয়ার পর হাল ধরেন কুশল মেন্ডিস ও আর-এক ওপেনার পতুম নিসঙ্ক। দলের ৭৭ রানে নিসঙ্ক আউট হয়ে যাওয়ার পর মেন্ডিসের সঙ্গী হন সদিরা সমরভিকরাম। মেন্ডিস আর সমরভিকরাম যতক্ষণ খেলছিলেন মনে হচ্ছিল শ্রীলঙ্কা লক্ষ্যমাত্রায় সহজেই পৌঁছে যাবে। ২৯.৪ ওভারে এই জুটি দলের রান পৌঁছে দেন ১৭৭ রানে। লক্ষ করার বিষয় ৩০ ওভারে পাকিস্তানের রান ছিল ১৩৮-৫। সুতরাং তখনও পর্যন্ত রান তোলার গতিতে পাকিস্তানের থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল শ্রীলঙ্কা।

দলের ১৭৭ রানে সমরভিকরাম আউট হতে নামেন চরিত অসলঙ্কা। অসলঙ্কা-মেন্ডিস নির্ভাবনায় দলের রান পৌঁছে দেন ৩৫.১ ওভারে ২১০ রানে। শ্রীলঙ্কা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৪২ রান দূরে, হাতে ৪১ বল। অর্থাৎ প্রতি বলে ১টি করে রান। খুব কঠিন সমীকরণ নয়। কিন্তু শ্রীলঙ্কার পরবর্তী ব্যাটসম্যানরা সমীকরণটা কঠিন করে দিলেন। শনক, ধনঞ্জয়, ওয়েলালেগ আর পতিরানা একে একে চলে গেলেন যথাক্রমে ২, ৫, ০, ১ রানে। অসলঙ্কা বুঝে গেলেন আসল কাজটা তাঁকেই সমাধা করতে হবে। সেই কাজটাই করে দেখালেন তিনি।

৯১ রান করে কুশল মেন্ডিস আজকের খেলায় ‘প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’ হলেও, আজ আরও একজন হিরো। তিনি চরিত অসলঙ্কা।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version