
পাকিস্তান: ১৫৯-৭ (বাবর আজম ৪৪, শদব খান ৪০, নসথুস কেনিগে ৩-৩০, সৌরভ নেত্রবলকর ২-১৮) এবং ১৩-১ (সুপার ওভার)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ১৫৯-৩ (মোনাঙ্ক পটেল ৫০, আরন জোনস ৩৬ নট আউট, মহম্মদ আমির ১-২৫) এবং ১৮-১ (সুপার ওভার)
খবর অনলাইন ডেস্ক: বিশাল অঘটন। টি২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে এ ধরনের কটা অঘটন ঘটেছে হাতে গুণে বলা যায়। নবাগত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করল বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার পাকিস্তান। আত্মসমর্পণই বলা উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ নিয়ে গিয়েছিল সুপার ওভারে। সুপার ওভারে প্রথম ব্যাট করার সুযোগ পায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা করে ১ উইকেটে ১৮ রান। এর মধ্যে ৩টি ‘ওয়াইড’ বল করে পাকিস্তানই ৭ রান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়। পরিবর্তে পাকিস্তান তাদের সুপার ওভারে করে ১ উইকেটে ১৩ রান। ফলে ৫ রানে হেরে গেল তারা।
শুরুতেই জোর ধাক্কা পাকিস্তানকে
বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় রাত ৯টায় (স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা) ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের সেই সিদ্ধান্ত যে খুবই যুক্তিসংগত ছিল তা পাকিস্তানের ব্যাটেই প্রমাণ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অনভিজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বেশ চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। মাত্র ২৬ রানের মধ্যে ৩টি উইকেট হারায় তারা। বিদায় নেন অন্যতম ওপেনার মহম্মদ রিজওয়ান এবং ৩ ও ৪ নম্বরে নামা উসমান খান ও ফকর জমান।
শেষ পর্যন্ত চতুর্থ উইকেটে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেন দলের অধিনায়ক এবং ওপেনার বাবর আজম এবং শদব খান। তাঁরা দলের রান পৌঁছে দেন ৯৮-এ। চতুর্থ উইকেটে ৭২ রান যোগ হওয়ার পর প্যাভিলিয়নে ফেরত যান শদব। তিনি ২৫ বলে ৪০ রান করেন। তার মধ্যে ৩টি ছয় ও ১টি চার ছিল। ৯৮-এ আউট হয়ে যান আজম খানও, নিজের খাতা শূন্য রেখে। এর পর বাবর আজমের সঙ্গী হন ইফতিকার আহমদ। ৪৩ বলে ৪৪ রান করে দলের ১২৫ রানের মাথায় বিদায় নেন বাবর। তিনি জসদীপ সিংয়ের বলে এলবিডব্লিউ হন। এর পর শাহিন শাহ আফ্রিদি প্রথমে ইফতিকার আহমদ ও পরে হরিস রাউফকে সঙ্গে নিয়ে দলের রান ১৫৯-এ পৌঁছে দেন। শাহিন শাহ আফ্রিদি ১৬ বলে ২৩ রান করে নট আউট থাকেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সফল বোলার নসথুস কেনিগে (৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট) এবং সৌরভ নেত্রবলকর (১৮ রানে ২ উইকেট)।
ম্যাচ গেল সুপার ওভারে
জয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দরকার ছিল ১৬০ রান। সুন্দর শুরু করেন মার্কিন ব্যাটাররা। অন্যতম ওপেনার দলের অধিনায়ক মোনাঙ্ক পটেলের ৫০ রান এবং আন্দ্রিস গাউস ও আরন জোনস-এর যোগ্য সহযোগিতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮ ওভারে পৌঁছে যায় ১৩৯ রানে। শেষ দু’ ওভারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দরকার ছিল ২১ রান। ১৯তম ওভারে বল করতে এলেন পাকিস্তানের মহম্মদ আমির। ব্যাট হাতে ছিলেন আরন জোন্স এবং নীতীশ কুমার। ওই ওভারে এল মাত্র ৬ রান।
এবার শেষ ওভার। জয়ের জন্য দরকার ১৫ রান। বল করতে এলেন হরিস রাউফ। আপ্রাণ চেষ্টা রান আটকানোর। রাউফ প্রথম ৩ বলে দিলেন ৩ রান। জয় ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাত থেকে। কিন্তু চতুর্থ বলে আরন জোনস তুলে মারলেন – ৬। জয়ের জন্য চাই ৬ রান, হাতে ২টি বল। পরের বলে ১ রান। এবার দরকার ৫ রান, হাতে ১ বল। উত্তেজনায় ফুটছে স্টেডিয়াম। রাউফের শেষ বলটিকে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিলেন নীতীশ কুমার। ম্যাচ চলে গেল সুপার ওভারে।
সুপার ওভারে খেল দেখাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সুপার ওভারে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ব্যাট করতে আসেন আরন জোন্স এবং হরমিত সিং। পাকিস্তানের হয়ে বোলিং-এর দায়িত্ব নেন মহম্মদ আমির। যুক্তরাষ্ট্র করে ১৮ রান। এর মধ্যে আরন একাই করেন ১১ রান। বাকি ৭ রান আসে ‘ওয়াইড’ থেকে। শেষ বলে আরন রান আউট।
পাকিস্তান সুপার ওভার শুরু করতে বেশ দেরি করে। শেষ পর্যন্ত ইফতিকার আহমদ ও ফকর জমানকে ব্যাট করতে পাঠানো হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বল তুলে নেন সৌরভ নেত্রবলকর। প্রথম বলে কোনো রান দেননি নেত্রবলকর। দ্বিতীয় বলে ইফতিকার ৪ মারলেন। তৃতীয় বলে ১ রান এল ‘ওয়াইড’ থেকে। পরের বলে ইফতিকারকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান সৌরভ। ব্যাট করতে এলেন শদব খান। বাকি ৩ বলে এল ৭ রান। এর মধ্যে ৪ লেগবাই। পাকিস্তানের স্কোর ১ উইকেটে ১৩। ফলে যুক্তরাষ্ট্র জিতল ৫ রানে।
গ্রুপ ‘এ’-তে শীর্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সুপার ওভারে পাকিস্তানকে টেক্কা দিয়ে জয় করায়ত্ত করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই জয়ের ফলে ২টি ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করে গ্রুপ ‘এ’-তে শীর্ষে চলে গেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১টি ম্যাচ থেকে ২টি পয়েন্ট সংগ্রহ করে ভারত রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। বাকি ৩টি দল পাকিস্তান, কানাডা এবং আয়ারল্যান্ড ১টি করে ম্যাচ খেলে কোনো পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারেনি। বলাই বাহুল্য, বৃহস্পতিবারের জয়ের ফলে ‘সুপার ৮ রাউন্ড’-এ যাওয়ার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকটাই এগিয়ে রইল। এ দিন ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হন মোনাঙ্ক পটেল।
আরও পড়ুন
আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪: মার্কাস স্টয়নিসের ব্যাটে-বলে ভর করে ওমানের বাধা কাটাল অস্ট্রেলিয়া