মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট ৩ (দীপক টাংরি, জ্যাসন কামিংস, শুভাশিস বোস)
নর্থইস্ট ইউনাইটেড ১ (কোনসাম ফাল্গুনী সিং)
গুয়াহাটি: একটা মনে রাখার মতো দিন গেল মোহনবাগান সমর্থকদের। জ্যাসন কামিংস গোলে ফিরলেন। আবার মাঠে ফিরলেন দিমিত্রিওস পেত্রাতোস, হুগো বুমৌস আর মনবীর সিং। আর গোল করলেন অধিনায়ক শুভাশিস বোস। এক গোলে পিছিয়ে থেকেও নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে তাদেরই ঘরের মাঠে ধরাশায়ী করল মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট।
শুক্রবার গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে আয়োজিত ম্যাচে মোহনবাগান জিতল ৩-১ গোলে। ম্যাচের শেষ দিকে মোহনবাগান বেশ কয়েকটা সুযোগ পেয়েছিল গোল করার। সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে তারা আরও বড়ো ব্যবধানে জিততে পারত।
এ দিনের ম্যাচে নর্থইস্টের তুলনায় মোহনবাগান কতটা এগিয়ে ছিল, তা কয়েকটা পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যাবে। সারা ম্যাচে কলকাতার ২৩ বার গোল করার সুযোগ তৈরি করেছিল। ওদিকে নর্থইস্ট মাত্র ৬ বার চেষ্টা করেছিল গোল করার। নর্থইস্টের বক্সে মোহনবাগান বল ছুঁয়েছে ৩৬ বার। উলটো দিকে মোহনবাগানের বক্সে নর্থইস্ট বল ছুঁয়েছে মাত্র ৩ বার। এ দিন নর্থইস্টের গোল লক্ষ্য করে মোহনবাগান ৭টা শট মেরেছিল। অন্য দিকে নর্থইস্ট শট নিয়েছিল মাত্র ৩টি।
প্রথমার্ধে ১ গোলে পিছিয়ে থেকে বাগানের ২টি গোল
ম্যাচের শুরুর দিকে নর্থইস্ট ইউনাইটেড কিছুটা আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করে এবং ৪ মিনিটের মধ্যেই তার ফল পেয়ে যায়। নর্থইস্টের মিডফিল্ডার কোনসাম ফাল্গুনী সিং এক অনবদ্য গোলে নিজের দলকে এগিয়ে দেয়। মোহনবাগানের বক্সের ঠিক বাইরে ব্রেন্ডান হ্যামিল এবং অনিরুদ্ধ থাপার মাঝখানে জায়গা তৈরি করে নিয়ে কাট ইন করে সোজা গোল লক্ষ্য করে শট নেন ফাল্গুনী। বলটি ডান দিকের উপরের কোণ দিয়ে গোলে ঢুকে যায়।
কিন্তু গোল করেই নর্থইস্টের মধ্যে কেমন একটা আত্মতুষ্টির ভাব জেগে ওঠে এবং তারই খেসারত স্বরূপ তারা ম্যাচ থেকে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে শুরু করে। তারা ক্রমশ রক্ষণাত্মক হয়ে ওঠে। এর ফলে ১০ মিনিটের বেশি তারা তাদের এগিয়ে থাকা ধরে রাখতে পারেনি। গোল শোধ করে দেয় মোহনবাগান। তবে এই গোল দীপক টাংরির নামে লেখা হলেও, এতে তাঁর কোনো কৃতিত্ব নেই।
ম্যাচের ১৪ মিনিটে ফ্রি কিক পায় মোহনবাগান। দূর থেকে নর্থইস্টের গোল লক্ষ্য শট নেন লিস্টন কোলাসো। কোলাসোর শট নর্থইস্টের গোলকিপার মিরশাদ মিচু পাঞ্চ করে বার করে দেওয়ার চেষ্টা করলে বল দীপক টাংরির কাঁধে লেগে গোলে ঢুকে যায়। ম্যাচের ফল দাঁড়ায় ১-১।
এর পর ম্যাচে এগিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকেন বাগানের খেলোয়াড়েরা। ২৫ মিনিটের মাথায় ডান দিক থেকে কিয়ান নাসিরির নেওয়া ফ্রি কিকে মাথা ছুঁইয়ে গোল করার চেষ্টা করেন জ্যাসন কামিংস। কিন্তু সেই হেড সোজা নর্থইস্টের গোলকিপারের হাতে জমা পড়ে। ৩ মিনিট পরে আবার গোল করার সুযোগ পান কামিংস। এবং সেই সুযোগ কাজে লাগাতে কোনো ভুলচুক করেননি তিনি। নর্থইস্টের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া অনিরুদ্ধ থাপার ফ্রি কিকে মাথা ছুঁইয়ে সেই বল ডান দিকে পাঠিয়ে দেন আরমান্দো সাদিকু। যেন ওঁত পেতে ছিলেন কামিংস। সেই বলে ছোট্ট টোকা দিয়ে নর্থইস্টের জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি। এর পরেও প্রথমার্ধে আরও সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান তাদের এগিয়ে থাকার ব্যবধান বাড়ানোর। কিন্তু তা কাজে লাগানো যায়নি। ফলে প্রথমার্ধে মোহনবাগান এগিয়ে থাকে ২-১ গোলে।
দ্বিতীয়ার্ধে জয়ের ব্যবধান বাড়াল বাগান
দ্বিতীয়ার্ধে নর্থইস্ট যেন আরও হাল ছেড়ে দেয় এবং কিছুটা গায়ের জোরে খেলার চেষ্টা করতে থাকে তারা। এর ফলও পেয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যে। ম্যাচের ৫৪ মিনিটের মাথায় কিয়ানকে মারাত্মক ভাবে ফাউল করে দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখেন তোনদোনবা সিং। ফলে তাঁকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়। নর্থইস্ট ইউনাইটেড ১০ জনে খেলতে বাধ্য হয়।
এ দিন কিয়ান প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের টার্গেট ছিল। ফলে কিয়ানকে তুলে নিয়ে মনবীর সিংকে নামানো হয়। ও দিকে কামিংসের জায়গায় মাঠে নামেন হুগো বুমৌস। এ দিনের ম্যাচটা ছিল ফরাসি মিডফিল্ডারের শততম ম্যাচ।
ইতিমধ্যে আরও কিছু সুযোগ পায় বাগান। তবে শেষ পর্যন্ত ৭১ মিনিটে কাজের কাজটি করেন সবুজ মেরুন অধিনায়ক শুভাশিস বোস। কোলাসোর সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করতে করতে নর্থইস্টের বক্সে ঢুকে পড়েন শুভাশিস। তার পর প্রথম পোস্টের দিকে কোণাকুণি শটে পরাস্ত করেন নর্থইস্টের গোলকিপার মিচুকে।
এর পর ম্যাচে কার্যত হাল ছেড়ে দেয় নর্থইস্ট। সবুজমেরুন বেশ কিছু পায় গোল করার। কিন্তু তারা আর জয়ের ব্যবধান বাড়াতে পারেনি।
লিগ টেবিলে অবস্থান
এ দিনের জয়ের পর লিগ টেবিলে মোহনবাগান থাকল তৃতীয় স্থানে। কিন্তু লিগ টেবিলে তাদের অবস্থান কার্যত সবচেয়ে ভালো। ৭ ম্যাচ খেলে ৬টি জিতে এবং ১টি ড্র করে মোহনবাগানের সংগ্রহ ১৯ পয়েন্ট। তাদের থেকে এগিয়ে আছে দুটি দল – এফসি গোয়া এবং কেরল ব্লাস্টার্স। দুটি দলের সংগ্রহ মোহনবাগানের চেয়ে ১ পয়েন্ট বেশি। কিন্তু প্রথম স্থানে থাকা গোয়া এ পর্যন্ত খেলেছে ৮টি ম্যাচ, মোহনবাগানের চেয়ে ১টি ম্যাচ বেশি। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা কেরল ব্লাস্টার্স মোহনবাগানের চেয়ে ৩টি ম্যাচ বেশি খেলেছে। অর্থাৎ তাদের খেলা ম্যাচের সংখ্যা ১০।
এ দিনের পরাজয়ের পরে নর্থইস্ট ইউনাইটেড থাকল সপ্তম স্থানে। ১০টি ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ১০ পয়েন্ট। এ দিনের খেলায় ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হন মোহনবাগানের অনিরুদ্ধ থাপা।