ওড়িশা এফসি ৫ (রয় কৃষ্ণ, দিয়েগো মৌরিসিয়ো, ক্রিস গোডার্ড, অনিকেত যাদব, ইসাক ভানলালরুয়াতফেলা)
মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট ২ (হুগো বুমৌস, কিয়ান নাসিরি)
নিজস্ব প্রতিনিধি: নিজেদের মাঠে হারের বদলা তো নিলই। একই সঙ্গে এএফসি কাপে আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে মোহনবাগানের খেলার আশায় জল ঢেলে নিজেদের খেলার আশা জিইয়ে রাখল ওড়িশা এফসি। সোমবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আয়োজিত ম্যাচে ওড়িশা এফসি ৫-২ গোলে ধরাশায়ী করল মোহনবাগানকে।
এএফসি কাপের দক্ষিণ এশীয় গ্রুপে দলগত অবস্থা
এএফসি কাপের দক্ষিণ এশীয় গ্রুপ পর্বে যে দল শীর্ষ স্থানে থাকবে তারাই আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। এই গ্রুপে মোহনবাগান তাদের শেষ ম্যাচ খেলবে মলদ্বীপে মাজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশনের সঙ্গে। সেই ম্যাচে জিতলেও কোনো লাভ হবে না মোহনবাগানের।
সোমবার ঢাকায় আয়োজিত আর-একটি ম্যাচে বসুন্ধরা কিংস ২-১ গোলে হারায় মাজিয়াকে। ফলে ৫ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপশীর্ষে রয়েছে তারা। এ দিকে মোহনবাগানকে হারিয়ে ৫ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে চলে এল ওড়িশা। তিন নম্বরে মোহনবাগান। ৫ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ৭। গ্রুপ শীর্ষে কে থাকবে তা নির্ভর করছে বসুন্ধরা কিংস বনাম ওড়িশা এফসি-র ম্যাচের উপর। ওড়িশাকে শীর্ষে থাকতে হলে ওই ম্যাচ জিততে হবে। তবে বসুন্ধরার ড্র করলেই চলবে।
মোহনবাগানের কোচ জুয়ান ফেরান্দোর আসল লক্ষ্য ছিল এএফসি কাপে ভালো ফল করা। এ কথা তিনি মরশুমের শুরু থেকেই বলে আসছেন। শুরুটাও মোহনবাগান ভালোই করেছিল। ওড়িশাকে তাদেরই মাঠে হারিয়েছিল ৪-০ গোলে। পরে মাজিয়াকেও তারা ধরাশায়ী করে। কিন্তু ঘরের মাঠে বসুন্ধরার সঙ্গে ড্র এবং অ্যাওয়ে ম্যাচে তাদের কাছে হার মোহনবাগানকে কিছুটা বিপন্ন করে। তবু আশা ছিল, যদি সোমবার ওড়িশাকে হারানো যেত। কিন্তু নিজেদের মাঠে ওড়িশার কাছে দুরমুশ হয়ে এএফসি কাপে ভালো ফল করার আশা জলাঞ্জলি গেল।
প্রথমার্ধে ওড়িশা এগিয়ে গেল ৩-১ গোলে
প্রথমার্ধের ২০ মিনিটের মধ্যেই গোল করে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে উঠে আসেন কোলাসো। তিনি আশিস রাইকে পাস দেন। আশিসের ক্রস পৌঁছে যায় পিছনের পোস্টের কাছে থাকা হুগো বুমৌসের কাছে। বুমৌস প্রথম পোস্ট দিয়ে বল ঢুকিয়ে দেন ওড়িশার জালে।
গোল খেয়ে ওড়িশা চেগে ওঠে এবং ম্যাচের ২৯ মিনিটেই গোল শোধ করে দেয় তারা। মোহনবাগানের রক্ষণভাগ ক্রিস গোডার্ডের ক্রস ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয়। বল চলে যায় সবুজ-মেরুনের প্রাক্তন ফুটবলার রয় কৃষ্ণের কাছে। ছ’ গজের বক্স থেকে তাঁর নেওয়া ভলি আটকাতে পারেননি মোহনবাগানের গোলকিপার বিশাল কাইথ।
দু’ মিনিট পরেই এগিয়ে যায় ওড়িশা। আহমেদ জাহুর ফ্রিকিক থেকে বল পান কৃষ্ণ। এ বার তিনি নিজে গোল না করে মোহনবাগানের বক্সে থাকা দিয়েগো মৌরিসিয়োকে লক্ষ্য করে বল ভাসিয়ে দেন। মৌরিসিয়ো অনায়াসে বল মোহনবাগানের জালে জড়িয়ে দেন।
ম্যাচের ৩৯ মিনিটের মাথায় লিস্টন বল ধরে একাই অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জাহুর ট্যাকলে ম্যাচে সমতা ফেরাতে ব্যর্থ হয় মোহনবাগান। কিন্তু তার ৩ মিনিট পরেই সবাইকে চমকে দিয়ে আরও এগিয়ে যায় ওড়িশা। দিয়েগো মৌরিসিয়ো পাস দেন মোহনবাগানে বক্সের দিকে ধাবমান ক্রিস গোডার্ডকে। মোহনবাগানের মার্কার গ্লেন মার্টিন্সকে পাস কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ক্রিস গোডার্ড এবং বিশালকে পরাস্ত করে বল জালে জড়িয়ে দেন। প্রথমার্ধে ওড়িশা এগিয়ে যায় ৩-১ গোলে।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও ৩ গোল
দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগান আবার কিছুটা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এবং কয়েকটি কর্নার এবং ফ্রিকিকও পায়। কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় তারা। তবে ম্যাচের ৬৩ মিনিটের মাথায় গোল করে ওড়িশার সঙ্গে ব্যবধান কমায় মোহনবাগান। বুমৌসের ভাসানো বলে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের টপকে নিখুঁত হেডে গোল করেন কিয়ান নাসিরি। ৬৭ মিনিটে সমতা ফেরাতে পারত মোহনবাগান। সাহালের শট বারে লেগে বেরিয়ে যায়।
এর পরেও বেশ কয়েক বার গোলের কাছাকাছি চলে আসে মোহনবাগান। কিন্তু সমতা ফেরাতে পারেনি। উলটে ওড়িশাই জয়ের ব্যবধান বাড়িয়ে ফেলল ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে। এই সামান্য সময়ের মধ্যে তারা দু-দুটি গোল করে ফেলল। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ফ্রিকিক নেন কৃষ্ণ। অনিকেত যাদব আচমকা গোলমুখে দৌড়ে এসে মোহনবাগানের গোলে বল ঢুকিয়ে দেন। ৩ মিনিট পরে আবার গোল। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে উঠে এসেছিলেন মিজোরামের ইসাক ভানলালরুয়াতফেলা। আগেই দেখেছিলেন বাগান গোলকিপার বিশাল অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। বল লব করে তাঁর মাথার উপর দিয়ে গোলে পাঠিয়ে দেন ইসাক।
মোহনবাগান গত বার এএফসি কাপের আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনাল খেলেছিল। এ বার তাদের দৌড় শেষ হয়ে গেল গ্রুপ পর্বেই।
আরও পড়ুন
আইএসএল: শেষ মুহূর্তের গোলে ইস্টবেঙ্গলের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নিল চেন্নাই