কলকাতা: চরিত্রে তিনি ধীরস্থির। খুব একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন না। তেমন বিরক্তিও প্রকাশ করেন না তিনি। মুখ কখনও গম্ভীর, কখনও থাকে একটু হালকা হাসির রেখা। রবিবার তাঁর দলের ডুরান্ড জয়ের পরেও তিনি উন্মাদ হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি। কতটা খুশি হয়েছেন, তা-ও মেপেজুপে বলেছেন।
তবে দলের ট্রফি জেতার পরে তিনি যে অনেকটাই হালকা হয়েছেন, তা বোঝা যাচ্ছে। বিশেষ করে ডুরান্ড কাপে গ্রুপ স্টেজে ডার্বি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে যাওয়ার পরে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল, তা যে দূরীভূত হয়েছে সেটা তাঁর সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়। তিনি হলেন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ খুয়ান ফেরান্দো।
মোহনবাগানকে দুটো ট্রফি দিলেন
৪২ বছরের স্প্যানিশ কোচ ফেরান্দো এফসি গোয়ার হেড কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ২০২১-এর ২ ডিসেম্বর মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ হন। গত একুশ মাসে দলকে দুটি সাফল্য দিয়েছেন ফেরান্দো – প্রথমে ২০২২-২৩-এ আইএসএল-এ দলকে চ্যাম্পিয়ন করা এবং দ্বিতীয় ২০২৩-এর ডুরান্ড কাপ জয়।
শনিবার শেষের ৩৭ মিনিট ১০ জনে খেলে মোহনবাগান ১-০ গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ডুরান্ড কাপ জিতল। শুধু কাপ জেতাই নয়, তুলনামূলক ভাবে মোহনবাগান ওই দিন বেশি ভালো খেলেছে ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে। এবং শুধু ট্রফি জেতাই নয়, ১০ জনে খেলেও ডার্বি জেতার ঘটনা দেশের ফুটবলের ইতিহাসে কতবার ঘটেছে তা হাতে গুনে বলা যায়।
ফেরান্দোকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কলকাতা ডার্বি জয় তাঁর কোচিং জীবনে সেরা জয় কি না। জবাবে তিনি বলেন, “নিজের প্রতি সৎ থেকে বলা যায়, এটা প্রাক-মরশুম প্রস্তুতি। আমাদের ডুরান্ড কাপের খেলার আগেই এটা বলে দিয়েছিলাম। আমাদের এখনও উন্নতির অনেক জায়গা রয়েছে, বিশেষ করে আক্রমণ ভাগে।”
জয়ে অবশ্যই খুশি
এই ফলে তিনি যে খুশি হয়েছেন তা গোপন রাখেননি ফেরান্দো। বলেছেন, দল যে চরিত্র দেখিয়েছে এবং প্রতিটি খেলোয়াড় যে দলকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছে তাতে তিনি খুশি। কিছু করতে হলে প্রাক-মরশুমে এই ক্লিক করাটা খুব দরকার ছিল। হাজার ঘণ্টা ধরে কৌশলগত কাজ চালানোর চেয়ে একটা সুখী ড্রেসিংরুম দলের এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে বেশি ভালো।
তবে একটা কথা পরিষ্কার জানিয়ে দেন ফেরান্দো। এই ডার্বি জয়কে বা এই ফাইনালের জয়কে সবচেয়ে ভালো ডার্বি জয় বলে মানতে রাজি নন তিনি। তিনি জানিয়ে দেন, এই মরশুমেই আইএসএল-এ আরও দুটো ডার্বি জিততে হবে।
জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন জেসন কামিংসকে শুরু থেকে খেলানো হল না? জবাব ফেরান্দো বলেন, এটা তাঁদের কৌশলগত পরিকল্পনা। দু’দিন আগেই জেসন আর দিমি টানা ৮০-৯০ মিনিট খেলেছে। তাই জেসন দ্বিতীয়ার্ধে এল। পরিকল্পনা ছিল, জেসন আর মনবীরকে দ্বিতীয়ার্ধে কাজে লাগানোর। কিন্তু অনিরুদ্ধ লাল কার্ড দেখায় পরিকল্পনা কিছুটা বদলাতে হয়।
এই জয়ে ইতিবাচক প্রাপ্তি
ডুরান্ড কাপ জয়ের পরে ইতিবাচক কী পাওয়া গেল? ফেরান্দোর জবাব, “আমাদের কাছে সব চেয়ে বড়ো ইতিবাচক ঘটনা হল কারওর আঘাত না-পাওয়া। এটা একটা ট্রফি জয়ের খেলা এবং ট্রফি জেতার পথে আমরা মুম্বই, গোয়া, ইস্টবেঙ্গলের মতো বড়ো টিমের বিরুদ্ধে খেললাম। দলের স্কোয়াড কী হবে, দলের নানা রকম ফরমেশন কী হতে পারে, সে সব শেখা যায় এই সব ম্যাচ থেকে। দলের স্কোয়াড সম্পর্কে কী শিখলাম, সেটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমার কাছে।”
ইস্টবেঙ্গলের ম্যানেজার কার্লেস কুয়াদ্রাতের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করতে একটু মেজাজ হারালেন ফেরান্দো। কুয়াদ্রাতের অভিযোগ, মোহনবাগান এই টুর্নামেন্টে ৩৪ জনের স্কোয়াড নামায়, যেখানে বাকি সব দলের ছিল ৩০ জন। ফেরান্দো বলেন, “দলের স্কোয়াডে অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলারদের রাখা নিয়ে একটা নিয়ম আছে। আমার মনে হয়, ডুরান্ড কাপের নিয়মবিধি পড়ে নেওয়ার সময় হয়েছে। আমরা এমন বোকা নই যে নিয়ম ভেঙে কিছু করব। আমি ভারতীয় ফুটবলের উন্নতিতে সাহায্য করতে চাই। সুতরাং ওই সব উলটোপালটা বিষয় ভুলে আলোচনাটা ফুটবলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা দরকার।”
এখন নজর
ডার্বি মিটে গেল। খুয়ান ফেরান্দোর নজর এখন এএফসি কাপের দিকে। এই মাসেই শুরু হচ্ছে গ্রুপপর্ব। প্রথম খেলা ওড়িশার বিরুদ্ধে। এখন থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চান তিনি। সামনে আরও বড়ো লক্ষ্য, আইএসএল ট্রফি ধরে রাখা এবং সেই টুর্নামেন্টে দুটো ডার্বি জেতা। আপাতত সেই লক্ষ্যপূরণেই এগিয়ে চলেছেন ফেরান্দো।