বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে নয়া নজির তৈরি হল। বিশ্বের প্রথম ফার্টিলো বেবি জন্মাল। নয়া ফার্টিলিটি প্রযুক্তি বা সন্তানপ্রসবের পন্থা আবিষ্কার করেছে নারীস্বাস্থ্য সংক্রান্ত বায়োটেক কোম্পানি ‘গ্যামেটো’। স্টেম সেল প্রযুক্তির সাহায্যে মানবদেহের বাইরে ভ্রূণ থেকে সদ্যোজাত শিশুর জন্ম হল। ফার্টিলো পদ্ধতিতে প্রথম বার মানবসন্তানের জন্ম হল। লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুর প্র্যানর ল্যাবরেটরিজের গবেষক লুই গুয়েজম্যানের তত্ত্বাবধানে এই বিশেষ গবেষণা হয়। পেরুর রাজধানী লিমার সান্তা ইজাবেল ক্লিনিকে জন্মেছে প্রথম ফার্টিলো বেবি।
চিরাচরিত আইভিএফ বা টেস্ট টিউব পদ্ধতির তুলনায় ডাক্তাররা নয়া ফার্টিলো পদ্ধতিকে আরও বেশি করে সুরক্ষিত, সহজ ও সব মানুষের সাধ্যের মধ্যে বলে মনে করেন।
১৯৭৮ সালে বিশ্বে প্রথম বার আইভিএফ পদ্ধতিতে টেস্ট টিউব বেবির জন্ম হয়। ভারতে টেস্ট টিউব বেবির জনক বলে মনে করা হয় ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে। তাঁর হাত ধরেই পৃথিবীর আলো দেখেন ভারতের প্রথম টেস্ট টিউব বেবি দুর্গা বা কানুপ্রিয়া আগরওয়াল। এর পর থেকে গোটা বিশ্বেই সন্তানধারণে অক্ষম বহু দম্পতির মুখে হাসি ফুটিয়েছে আইভিএফ পদ্ধতি। তাঁদের কোল আলো করে এসেছে সন্তান।

কিন্তু টেস্ট টিউব পদ্ধতিরও কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। দীর্ঘ সময় ধরে এই পদ্ধতি চলে। খরচও অনেক বেশি হয়। তীব্র মানসিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় দম্পতিকে। এই আইভিএফ পদ্ধতির জেরে অনেক সময় ওভারিয়ান হাইপারস্টিমিউলেশন সিন্ড্রোম হয় হবু মায়ের শরীরে। জরায়ু ফুলে যায়।
সাধারণত আইভিএফ পদ্ধতিতে হবু মায়ের জরায়ু থেকে ডিম্বাণু নিয়ে তা হবু বাবার শরীর থেকে শুক্রাণুর সঙ্গে ল্যাবরেটরিতে নিষিক্ত করা হয়। তার পর ভ্রূণ স্থাপন করা হয় হবু মায়ের শরীরে। ডিম্বাণুর উৎপাদনের জন্য হরমোনের ইনজেকশন দেওয়া হয়। কিন্তু নয়া গ্যামেটোর ফার্টিলো পদ্ধতিতে হরমোনের ইনজেকশন দেওয়া হয় না। মানবদেহের induced pluripotent stem cells বা কোষের থেকে উৎপন্ন ওভারিয়ান সাপোর্ট সেলের মাধ্যমে ল্যাবরেটরিতে ডিম্বাণুকে তাড়াতাড়ি নিষিক্ত করা হয়।
২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই পদ্ধতিতে তাড়াতাড়ি ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর নিষিক্ত হয়ে ভ্রূণ তৈরি হয় ভালো ভাবে। মাত্র ৩ দিনের ট্রিটমেন্ট হয়। কম হরমোনের ইনজেকশন প্রয়োগ করতে লাগে। এখন অস্ট্রেলিয়া, জাপান, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, মেক্সিকো ও পেরুতে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফার্টিলো পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান প্রসব।
ছবি সৌজন্যে Gameto