রাজ্যের পুজো উদ্যোক্তাদের জন্য বড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বছর দুর্গাপুজোর জন্য অনুদান বাড়িয়ে করা হল ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। গত বছর দেওয়া হয়েছিল ৮৫ হাজার টাকা। তার চেয়েও একধাপ এগিয়ে এবার পুজো কমিটিগুলিকে আর্থিকভাবে আরও বেশি সহায়তা করবে রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ বিলেও থাকছে ৮০ শতাংশ ছাড়।
বৃহস্পতিবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা করেন। উপস্থিত ছিলেন প্রশাসনের শীর্ষকর্তা, কলকাতা পুরসভা, সিইএসসি, দমকল, পুলিশ, স্বাস্থ্য এবং পরিবহণ দফতরের প্রতিনিধিরা। শারদোৎসবকে ঘিরে রাজ্যব্যাপী পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির রূপরেখা স্পষ্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দুর্গাপুজো আমাদের গর্ব। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সংস্কৃতি, সমাজ এবং উৎসবের ঐক্যবদ্ধ চিত্র। তাই সরকারের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সাহায্য করতে চাই।” একইসঙ্গে তিনি জানান, সিইএসসি ও বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ ছাড় দিতে।
পুজোর সময় মহিলাদের নিরাপত্তা এবং প্রবীণদের সুবিধার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্যান্ডেলে নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে ড্রোন, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ওয়াচ টাওয়ার ব্যবহার করে।
পুজোর অনুদানে ধারাবাহিক বৃদ্ধি
- ২০১৮: ১০,০০০ টাকা
- ২০১৯: ২৫,০০০ টাকা
- ২০২০ (করোনাকালে): ৫০,০০০ টাকা
- ২০২২: ৬০,০০০ টাকা
- ২০২৩: ৭০,০০০ টাকা
- ২০২৪: ৮৫,০০০ টাকা
- ২০২৫: ১,১০,০০০ টাকা
রাজনৈতিক মহলে এই অনুদান বৃদ্ধিকে ঘিরে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বিরোধীদের অভিযোগ, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই পুজো কমিটিগুলিকে খুশি রাখার কৌশল নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাদের দাবি, পুজো কমিটিগুলি তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এটাই “পুরস্কার”।
তবে শাসকদলের বক্তব্য, দুর্গাপুজো এখন শুধুই ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাজ্য সরকার চায়, সকলের অংশগ্রহণে এই উৎসব আরও প্রাণবন্ত হোক।
পুজো কমিটিগুলির প্রতিক্রিয়া
অনুদান ঘোষণায় খুশি অধিকাংশ পুজো কমিটি। তাঁদের বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধির জেরে খরচও বেড়েছে। সেই প্রেক্ষিতে এই বাড়তি অনুদান সত্যিই সহায়ক। অনেকের মতে, রাজ্যের সাহায্য ছাড়া এত বড় মাপের পুজো আয়োজন করা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—গত বছর যারা আরজি কর আন্দোলনের কারণে পুজোর অনুদান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তারা এবার সরকারি অনুদান গ্রহণ করবেন কি না। সেই দিকে নজর রয়েছে পর্যবেক্ষকদের।
আরও যে খবর পড়তে পারেন