Homeপ্রবন্ধগান্ধীজয়ন্তীর আলোয় ম্লান হয়ে যান তিনি, আজ তাঁর ১২০তম জন্মদিন  

গান্ধীজয়ন্তীর আলোয় ম্লান হয়ে যান তিনি, আজ তাঁর ১২০তম জন্মদিন  

প্রকাশিত

নিজস্ব প্রতিনিধি: স্বাধীনতার বয়স তখন সবে ন’ বছর। ১৯৫৬ সালের আগস্ট। অন্ধ্রপ্রদেশের মহবুবনগরে ঘটল এক ট্রেন দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার নৈতিক দায় নিজের কাঁধে নিয়ে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে চাইলেন তিনি। কিন্তু তাঁর ইস্তফা নিতে রাজি হলেন না প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ইস্তফা থেকে তখনকার মতো তাঁকে নিরস্ত করলেন।

ঠিক তিন মাস পরে আবার ট্রেন দুর্ঘটনা। এ বার তামিলনাড়ুর আরিয়ালুরে। এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৪৪ জন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফের ইস্তফাপত্র পাঠালেন তিনি। চিঠিতে দুর্ঘটনার নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে অন্য সব কথার মধ্যে তিনি এ কথাও লিখলেন, “…যে দফতরের দায়িত্বে আমি রয়েছি তা যদি আমি নিঃশব্দে ছেড়ে দিই, তা হলে আমার পক্ষে এবং সামগ্রিক ভাবে সরকারের পক্ষে ভালো হবে।”

ওই দুর্ঘটনার জন্য কেউ সে দিনের রেলমন্ত্রীর ঘাড়ে দোষ চাপাননি। কেউ বলেননি, দুর্ঘটনার দায় নিয়ে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। বহু সাংসদ সে দিন প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন, রেলমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র যেন গ্রহণ করা না হয়। তাঁদের বক্তব্য ছিল, দুর্ঘটনার পিছনে রয়েছে প্রযুক্তিগত ত্রুটি। এই দুর্ঘটনার দায় যদি কারও থাকে, সে হল রেল বোর্ড। কিন্তু সাংসদদের আর্জিতে কান দেননি নেহরু। ব্যক্তিগত ভাবে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি রেলমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির কাছে।

লোকসভার কক্ষে দাঁড়িয়ে রেলমন্ত্রীর প্রতি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধার কথা পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন নেহরুজি। তবু কেন তিনি এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন? তাঁর কথায়, “সাংবিধানিক যথার্থতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে এ ক্ষেত্রে আমাদের একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত এবং কেউ যেন না ভাবেন, যা-ই ঘটে যাক, আমাদের কিছু যায় আসে না, আমরা কোনো রকম প্রভাবিত না হয়ে চালিয়ে যাব।”

নেহরু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি সাংবিধানিক যথার্থতার দিক থেকেই রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ মেনে নিচ্ছেন। রেলমন্ত্রীর ইস্তফা গ্রহণ করার পিছনে জওহরলাল নেহরুর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, রাজনীতির ক্ষেত্রে একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। সাংবিধানিক গণতন্ত্রের অর্থ যে কেবল ক্ষমতা ধরে রাখা নয়, দেশ ও দশের আবেগকে মূল্য দেওয়াও, সেটাই বুঝিয়ে দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর। সে দিন সেই রেলমন্ত্রীকে ‘সর্বোচ্চ সততা, আনুগত্য, আদর্শের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ’ বলেও অভিহিত করেছিলেন নেহরু।

২রা অক্টোবর তাঁরও জন্মদিন

সেই ‘সর্বোচ্চ সততা, আনুগত্য, আদর্শের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ’ মানুষটি কিছুটা যেন ম্লান হয়ে যান গান্ধীজয়ন্তীর আলোয়। অক্টোবর মাসের ২ তারিখে যে তাঁরও জন্মদিন। তিনি লালবাহাদুর শাস্ত্রী। তিনি শুধু দেশের প্রাক্তন রেলমন্ত্রী নন বা প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নন, প্রধানমন্ত্রীও বটে। ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী। ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’ ধ্বনির স্রষ্টা।   

১৯০৪ সালে মুঘলসরাইয়ে জন্ম লালবাহাদুর শাস্ত্রীর। খুব কম বয়সেই তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ। এবং আজীবন সেই আদর্শ মনেপ্রাণে লালন করে গিয়েছেন। যোগ দিয়েছেন অসহযোগ আন্দোলনে। ধীরে ধীরে জাতীয় কংগ্রেসের সর্বভারতীয় স্তরের বিশিষ্ট নেতা হয়ে ওঠেন লালবাহাদুর।

১৯৬৪ সালে জওহরলালের মৃত্যুর পর লালবাহাদুর প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কোসিগিনের উপস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবসানের চুক্তি স্বাক্ষর করেন লালবাহাদুর শাস্ত্রী এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান। পরদিন ১১ জানুয়ারি সবাইকে হতচকিত করে তাসখন্দেই অকস্মাৎ মৃত্যু হয় লালবাবাদুর শাস্ত্রীর।

আরও পড়ুন

মহাত্মা গান্ধীর ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী: রাজঘাটে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন নেতাদের, সবরমতী আশ্রমে বিশেষ প্রার্থনাসভা   

সাম্প্রতিকতম

স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার আছে কি না কী ভাবে বুঝবেন, কী করবেন ফোনকে সুরক্ষিত রাখতে

স্মার্টফোন আজ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। সারাক্ষণ নেটজালে বন্দি রয়েছি আমরা, নেটের...

ভারতের নতুন আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা, দায়িত্ব গ্রহণ বুধবার থেকে, জানুন তাঁর পরিচয়

আরবিআই-এর ২৬তম গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেলেন সঞ্জয় মালহোত্রা। তিন বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন এই প্রথিতযশা আইএএস অফিসার।

চলতি অধিবেশনেই ‘এক দেশ, এক ভোট’ বিল পেশ করতে পারে মোদী সরকার, তীব্র বিতর্কের সম্ভাবনা

শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্র আনতে চলেছে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বিল। ঐক্যমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে মোদী সরকার। বিরোধীদের অংশগ্রহণে আহ্বান জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ ভারতের

সোমবার ঢাকায় বাংলাদেশের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রতিবেশী দেশে...

আরও পড়ুন

পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানক্যো কে শান্তির জন্য নোবেল, এতদিন বাদে কেন?

জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানক্যো ২০২৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে, ইরানের সাম্প্রতিক পারমাণবিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নিরস্ত্রীকরণের জরুরি প্রয়োজনকে সামনে আনছে।

আরজি কর আন্দোলন: রাজ্য-রাজনীতিতে সিপিএমের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ

গত এক দশকে বাংলার রাজনীতিতে সিপিএমের অবস্থান অনেকটাই কোণঠাসা। রাজ্যের বিধানসভা ভোটে শূন্য আসন...

আরজি কর কাণ্ডে নীরবতা কেন? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া বিতর্কিত ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শুধু কি বিষয়টি বিচারাধীন বলে, না কি এর পেছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে?
কেন লক্ষ্মীর পাঁচালি পাঠ করা হয় রতন টাটার সেরা উক্তি যা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে